Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধুলোও বাড়াচ্ছে বায়ুদূষণ, আইন মেনে রুখবে কে

কলকাতায় বায়ুদূষণের কথা উঠলে, মূলত ডিজেল-চালিত গাড়ির ধোঁয়াকেই দায়ী করতেন পরিবেশকর্মীদের অনেকে।

এমন ধোঁয়া ছড়িয়েও অবাধে চলছে বাস। শনিবার, বাবুঘাটের কাছে। নিজস্ব চিত্র

এমন ধোঁয়া ছড়িয়েও অবাধে চলছে বাস। শনিবার, বাবুঘাটের কাছে। নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:১৫
Share: Save:

ধোঁয়ার আড়ালে ধুলো যে কখন বড় বিপদ হয়েছে, তা মালুমই হয়নি!

কলকাতায় বায়ুদূষণের কথা উঠলে, মূলত ডিজেল-চালিত গাড়ির ধোঁয়াকেই দায়ী করতেন পরিবেশকর্মীদের অনেকে। কিন্তু একাধিক সমীক্ষা বলছে, ধোঁয়ার পাশাপাশি নির্মাণস্থল-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে উড়ে আসা ধুলোও বিপদ হয়ে উঠছে কলকাতার। তবে শুধু কলকাতাই নয়, যেখানেই নির্মাণকাজ জোরকদমে চলে, সেখানেই ধুলো-বালিতে জেরবার ফুসফুস ও শ্বাসনালী।

এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক কংক্রিট-বর্জ্যকে পরিবেশ আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। এর ফলে নির্মাণকাজে কংক্রিট-বর্জ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। নচেৎ পরিবেশ আইনে ওই নির্মাণকাজ পুলিশের সাহায্য নিয়ে বন্ধ করে দিতে পারে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

সম্প্রকি দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামে ইয়েল ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমীক্ষা-রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিরিখে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৭৭। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও এক ধাপ নীচে, ১৭৮। পরিবেশকে দূষিত করার ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ধুলোর অবদান কতটা, তার ব্যাখ্যা রয়েছে সমীক্ষায়। এক পরিবেশকর্মীর মন্তব্য, বাকি দূষণের উৎসগুলির উপরেও যে নজর পড়ছে সেটা ভাল দিক।

কলকাতার ক্ষেত্রে যে ধুলো ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, তা মেনে নিয়েছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের মতে, কলকাতা ও আশপাশে প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণ হচ্ছে। সেগুলি থেকে উড়ে আসা ধুলো বাতাসকে দূষিত করছে। ওই সব নির্মাণ থেকে মূলত বাতাসে মেশে এমন ধূলিকণা (পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫) যা সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে।

নিউ টাউন, বিমানবন্দর চত্বরে এই মুহূর্তে চলছে মেট্রোর কাজ। পরিবেশবিদেরা অনেকেই বলছেন,গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় ধুলো বেড়ে গিয়েছে। শেষ বার শীতে নিয়মিত কালো ধোঁয়াশা দেখা গিয়েছে ওই এলাকায়। একই পরিস্থিতি ইএম বাইপাসের আশপাশেও।

পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, নির্মাণ জরুরি ঠিকই। কিন্তু পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য কিছু বিধি-নিষেধ মানতে হয়। এখানে সে সব মানা হয় না। উন্নয়ন যেমন জরুরি, তেমন জরুরি পরিবেশও।

পরিবেশ দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, এ রাজ্যে নির্মাণ-ক্ষেত্রে দূষণ ঠেকানোর জন্য নির্দেশিকা রয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে সেই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে। কিন্তু সেই নির্দেশ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পরিবেশবিদদের অনেকেরই।

এক পরিবেশবিদের মন্তব্য, প্রকাশ্যে সাউন্ড বক্স বাজানো নিষিদ্ধ। একই ভাবে নিষিদ্ধ হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো, নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হাতে দোষীদের গ্রেফতার করা বা শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। পুলিশকে নিয়ে অভিযান চালানোর কথা পরিবেশ দফতরের। গ্রেফতার, জিনিস বাজেয়াপ্ত করা— সব পুলিশেরই দায়িত্ব। আর এখানেই সমন্বয়ের অভাব খুব স্পষ্ট। তাই সরস্বতী পুজোর ভাসানের মিছিলেও এ বার ডিজে বেজেছে। বাজিও ফেটেছে দেদার। পুলিশ নীরব দর্শক হয়েই থেকেছে।

তাদের যে সত্যিই কিছু করার নেই, তা স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে পর্ষদের তরফে। এক কর্তার কথায়, আইন করলেই হবে না। তাকে যথাযথ ভাবে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE