Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফের ঘেরাও-ব্যাধিতে কাবু প্রেসিডেন্সি

বছর ঘুরতেই নিজের নিয়মে বর্ষার মরসুমে ফের আঘাত হেনেছে ডেঙ্গি। আর ঠিক ১২ মাসের মাথায় ঘেরাওয়ের অসুখ ফিরে এল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে! প্রবেশিকা পরীক্ষার ভিত্তিতে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য নতুন প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের দাবিতে শুক্রবার প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার এবং অন্য কয়েক জন আধিকারিককে বেশি রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন এক দল ছাত্রছাত্রী।

ঘেরাও চলছে প্রেসিডেন্সিতে। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ঘেরাও চলছে প্রেসিডেন্সিতে। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৮
Share: Save:

বছর ঘুরতেই নিজের নিয়মে বর্ষার মরসুমে ফের আঘাত হেনেছে ডেঙ্গি। আর ঠিক ১২ মাসের মাথায় ঘেরাওয়ের অসুখ ফিরে এল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে!

প্রবেশিকা পরীক্ষার ভিত্তিতে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য নতুন প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের দাবিতে শুক্রবার প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার এবং অন্য কয়েক জন আধিকারিককে বেশি রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন এক দল ছাত্রছাত্রী। বুধবার এক প্রস্ত প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় স্বচ্ছতার অভাব আছে বলে অভিযোগ তোলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের বক্তব্য, গোঁজামিলে ভরা ওই তালিকায় নামের পাশে নম্বরও উল্লেখ করা হয়নি। অবিলম্বে স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রবেশিকায় প্রাপ্ত নম্বর-সহ নতুন তালিকা প্রকাশ করা হোক।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগের আঙুল একই সঙ্গে উপাচার্য এবং প্রবেশিকা পরীক্ষার নিয়ন্তা রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের দিকে। তাঁরা বলছেন, গোঁজামিল যা করার, বোর্ডই করেছে। দায় এড়াতে পারেন না বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষও। কারণ, যাঁরা তালিকা তৈরি করেছেন, তাঁদের উপরে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণই নেই।

ছাত্রছাত্রীদের সব অভিযোগ ও দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ অবশ্য জয়েন্ট বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া রাতে বলেন, ‘‘আমরা আইনের পথেই আছি। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের উপরে আমাদের বিশ্বাস আছে। শনিবারেই ভর্তির কাউন্সেলিং শুরু হয়ে যাবে।’’ ঘেরাও চলাকালীন রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার নিজের ঘরে সাংবাদিকদের ডেকে বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের দাবি শুনেছি। আমরা যা করছি, আইন মেনেই করছি।’’

পড়ুয়ারা কি কাউন্সেলিংয়েও বাধা দিতে পারেন? দেবজ্যোতিবাবু বলেন, ‘‘না, ওরা বাধা দেবে না। ওরা আমাদের সন্তানতুল্য। আমরা ওদের অভিভাবকের মতো।’’

ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ ও দাবির সারবত্তা আছে কি না, সেই প্রশ্নের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্তটি। প্রেসিডেন্সির মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কেন ঘেরাও-ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না, প্রশ্ন তুলছে শিক্ষা শিবির। ২০১৫ সালের অগস্টে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ কর্তাদের দীর্ঘ ক্ষণ ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। ২২ অগস্ট প্রেসিডেন্সির জন্য অনুদান ঘোষণার দিনে ছাত্র-বিক্ষোভের আঁচ পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সে-দিন মুখ্যমন্ত্রী প্রেসিডেন্সি ছেড়ে যাওয়ার পরেই পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলে উপাচার্যকে ঘেরাও করেন কিছু পড়ুয়া। শুক্রবার, সেই অগস্টেই সেখানে ফিরে এল ঘেরাও। এ বার অবশ্য উপাচার্য ঘেরাওয়ের বাইরে আছেন। ২০১৫-র এপ্রিলেও পরপর দু’সপ্তাহে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ কয়েক জনকে ঘেরাও করা হয়। এবং সে-বারেও ঘেরাওয়ের উপলক্ষ ছিল প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি।

প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, এ দিনদুপুর থেকেই পড়ুয়ারা রেজিস্ট্রারের কাছে নতুন প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিংয়ের সময়সীমা বাড়াতে হবে। রেজিস্ট্রার দাবি মানতে চাননি। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রেসিডেন্সির মূল ফটকের সামনে অবস্থানে বসে পড়েন কিছু পড়ুয়া। তাঁরা জানান, দাবির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সদর্থক উত্তর না-পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।

ইতিমধ্যে প্রকাশিত প্রার্থী-তালিকায় অসদুপায় অবলম্বন করা হয়েছে বলে পড়ুয়াদের অভিযোগ। তাতে নামের পাশে নম্বরেরও উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র প্রান্তিক বসুর কথায়, ‘‘জয়েন্ট বোর্ডের ওই প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে আগেও নানা ভাবে গোলমাল হয়েছে। কাদের নাম তালিকায় তোলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই তা জানেন না।’’

তবে জয়েন্ট বোর্ডের বক্তব্য, ইচ্ছা করেই প্রার্থী-তালিকায় নম্বর প্রকাশ করা হয়নি। কারণ, নম্বর দেখে অনেক ছাত্রছাত্রীই কাউন্সেলিংয়ে আসতেন না। তার জেরে অনেক আসন খালি পড়ে থাকত। তাতে অন্য ধরনের সমস্যা তৈরির আশঙ্কা ছিল। জয়েন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কাউন্সেলিংয়ের ব্যাপারে বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে। বোর্ড সেই সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে। বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করছে। জয়েন্ট বোর্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে ভিত্তিহীন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।’’ ৬-৭ অগস্ট কাউন্সেলিংয়ের পরে ৮ কিংবা ৯ তারিখে যখন চূড়ান্ত মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হবে, তখন সেখানে ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বরেরও উল্লেখ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, অভিযোগ থাকলে আলোচনাতেই তার নিরসন করা যেতে পারত। ফের ঘেরাও কেন? জবাব মেলেনি। নরেন্দ্রপুর, সেন্ট জেভিয়ার্সে মসৃণ ভাবে পঠনপাঠন চলে। কিন্তু প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরে এত বিঘ্ন কেন, চলতি ইংরেজি বছরের শুরুতে প্রশ্ন তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। সেই প্রশ্নেরও সদুত্তর মেলেনি। উল্টে আবার ঘেরাওয়ের রাস্তায় হেঁটে পড়ুয়াদের একাংশ এ দিন বুঝিয়ে দিলেন, প্রেসিডেন্সি আছে প্রেসিডেন্সিতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Presidency university Student Agiotation Teachers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE