Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিমানসেবিকার মৃত্যু নিয়ে আঁধারে পাড়াও

এ দিন বিকেলে এক কিশোরীকে নিয়ে এক মহিলা ক্লারার ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্লারার দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় যেখানে পড়েছিল, সেই জায়গাটি ইট দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ।

এই জায়গাতেই মেলে ক্লারার দেহ। নিজস্ব চিত্র

এই জায়গাতেই মেলে ক্লারার দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:৩৪
Share: Save:

কখনও সাতসকালে বেরিয়ে যেতে দেখা যেত তাঁকে। কখনও বা মাঝরাতে অফিসের গাড়ি থেকে ফ্ল্যাটের সামনে নামতেন তিনি। বিমানসেবিকার চাকরির এই ব্যস্ত রুটিনের জন্যই বছর তেইশের ক্লারা বংশরাই খোঙসিটের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠেনি কেষ্টপুর প্রফুল্লকাননের নোনাপুকুর এলাকার বাসিন্দাদের। কিন্তু বুধবার সকালে সেই ক্লারার রহস্যমৃত্যুর পরে পাড়ায় তাঁকে নিয়েই কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

এ দিন বিকেলে এক কিশোরীকে নিয়ে এক মহিলা ক্লারার ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্লারার দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় যেখানে পড়েছিল, সেই জায়গাটি ইট দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তা দেখেই ফিসফিসিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায় দু’জনের। মেয়েটিকে কখনও দেখেছিলেন? আলাপ ছিল? প্রশ্ন শুনেই মাথা নেড়ে দ্রুত পায়ে সরে গিয়েছেন দু’জনে। স্থানীয় ক্লাবের এক সদস্য দাঁড়িয়েছিলেন কাছেই। তিনি অবশ্য বললেন, ‘‘সে ভাবে মুখও দেখিনি। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে ভিতরে চলে যেতেন।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, ২০০৪ সালে ক্লারার বাবা সেরাব তেনজিং ভুটিয়া এই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। এলাকায় ‘ভুটিয়াদা’ বলেই পরিচিত। গত বছর অক্টোবরে ইন্ডিগো বিমানসংস্থায় যোগ দেওয়ার পরে এই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন ক্লারা। গত দিন পনেরো ক্লারার বাবা-মাকে দেখা যায়নি। ক্লারা একাই থাকছিলেন। মাঝেমধ্যেই বন্ধু-বান্ধবেরা আসতেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ক্লারা বা তাঁর পরিবারের কেউ পাড়ায় সে ভাবে মিশতেন না। তবে তাঁদের ব্যবহার খুবই ভাল ছিল। দেখা হলে হাসিমুখেই কথা বলতেন ওঁরা।

তদন্তে পুলিশ। বুধবার, কেষ্টপুরে। নিজস্ব চিত্র

বিমানসেবিকার চাকরির দৌলতে ক্লারার দৈনন্দিন রুটিন এবং জীবনযাত্রাও আর পাঁচ জনের থেকে কিছুটা আলাদা ছিল। স্থানীয়দের দাবি, মাঝেমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করতেন তিনি। মদ্যপানও হতো। কিন্তু সেই পার্টিতে কোনও সময়ে গোলমাল হয়েছে বা এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছে, এমন কথা বাসিন্দারা জানাননি। ওই এলাকার একটি ক্লাবের কয়েক জন সদস্য জানান, মঙ্গলবার রাতে বারোটা নাগাদ ক্লারাকে ফ্ল্যাটে ফিরতে দেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এই মাঝরাতে ফেরা ক্লারার দৈনন্দিন রুটিন হওয়ায় কেউ অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাননি। তিনি বেসামাল বলেও মনে হয়নি। পাড়ায় একটি অনুষ্ঠান চলছিল। ফলে স্থানীয় যুবকেরা অনেকেই জেগে ছিলেন। রাত দেড়টার পরে একটি ক্যাবে চেপে ক্লারার বান্ধবী ও এক যুবককে আসতেও দেখেন তাঁরা। সেই যুবকেরা জানান, ক্লারার ফ্ল্যাটে ওই দু’জনকে মাঝেমধ্যেই আসতে দেখা যেত।

এ দিন ভোরে এক তরুণীর দেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। স্থানীয় বাসিন্দারাই ক্লারাকে চিনতে পারেন। তাঁরাই পুলিশকে জানান, সামনের ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে ওই তরুণী থাকেন। সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। এর পরে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজিয়ে এবং দরজায় ধাক্কাধাক্কির করার প্রায় আধঘণ্টা পরে ভিতর থেকে এক তরুণী দরজা খুলে দেন। পুলিশের অনুমান, ওই তরুণ-তরুণী ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁরাও ক্লারার ঘটনা শুনে হতবাক হয়ে যান। অন্তত পুলিশের কাছে তাঁরা তেমনটাই জানিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এক বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে পার্ক স্ট্রিটে একটি পার্টিতে যান ক্লারা। মঙ্গলবার রাতে সেই পার্টি থেকে তিন জন কেষ্টপুরের ফ্ল্যাটে ফিরে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE