Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছাঁট পুড়িয়ে বাতাসে দূষণ, চুপ প্রশাসন

পরিবেশ আইন বলছে, এ ভাবে বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই আইনের তোয়াক্কা যে করা হয় না, তা শহরবাসীর ভালই জানা আছে। এ সব কারণে কলকাতার বায়ুদূষণ ক্রমেই বাড়ছে। গত শীতে দূষণের নিরিখে দিল্লিকে একাধিক বার টপকে গিয়েছে কলকাতা।

আবছায়া: বায়ুদূষণের জেরে তৈরি হচ্ছে এমনই ধোঁয়াশা। শনিবার, তপসিয়ার কাছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

আবছায়া: বায়ুদূষণের জেরে তৈরি হচ্ছে এমনই ধোঁয়াশা। শনিবার, তপসিয়ার কাছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০২:০০
Share: Save:

দোলের সন্ধ্যায় পরমা আইল্যান্ডের সামনে দিয়ে মোটরবাইকে চেপে যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। হঠাৎই চার দিকে নজরে এল তীব্র ধোঁয়াশা, সঙ্গে কটু গন্ধ! তাঁর বক্তব্য, ওই গন্ধ এতই তীব্র এবং কটূ যে কার্যত দম বন্ধ হয়ে আসছিল তাঁর।

এ সময়ে কুয়াশা হয় না। তা হলে ওই ধোঁয়াশা এল কেন? দোলের দিন তো রাস্তায় গাড়িও কম ছিল। তা হলে? পরিবেশকর্মীরা বলছেন, ওই ধোঁয়া আসলে তিলজলা, তপসিয়া এলাকায় চাম়ড়ার ছাঁট পোড়ানোর ফলে তৈরি হয়েছে। হোলির আগের দিন ওই সব চামড়া পোড়ানো হয়েছিল এবং তা থেকেই ওই তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, শুধু হোলির আগের দিন নয়, বর্জ্য চামড়ার ছাঁটে মাঝেমধ্যেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তা থেকে নিয়মিত দূষণ বাড়ছে।

পরিবেশ আইন বলছে, এ ভাবে বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই আইনের তোয়াক্কা যে করা হয় না, তা শহরবাসীর ভালই জানা আছে। এ সব কারণে কলকাতার বায়ুদূষণ ক্রমেই বাড়ছে। গত শীতে দূষণের নিরিখে দিল্লিকে একাধিক বার টপকে গিয়েছে কলকাতা।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা বলছেন, এ শহরে জঞ্জাল এবং ভাগাড়ে নিয়মিত আগুন লাগানো হয়। তার ধোঁয়ায় জেরবার হন নগরবাসী। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারে প্রমোদনগরের ধোঁয়ায় ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন অনেকে। এলাকার বাসিন্দারাও তাতে নাজেহাল হন।

পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দীচক্রবর্তীর মতে, এই ধরনের ঘটনায় দূষণ এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। তিনি জানান, এই চামড়া শিল্প থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৭১৬০ পিপিএম ভাসমান কণা নির্গত হয়। যা মানুষের শরীরে কুপ্রভাব ফেলে। তিনি জানান, চামড়া পোড়ানোর ফলে প্রচুর কার্বন, ছাইয়ের গুঁড়ো বাতাসে মেশে। সেই সব জিনিস শরীরে ঢুকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির সৃষ্টি করতে পারে। ট্যানারি এলাকার মানুষদের মধ্যে তাই শ্বাসরোগের প্রকোপ বেশি।

প্রশ্ন উঠেছে, এমন হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ দফতর বা প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, জঞ্জাল পোড়াতে নিষেধ করা হয়। তা সত্ত্বেও কী ভাবে হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। যদিও শহরের ফুসফুস বলে পরিচিত ময়দানে ঝরা পাতা ও জঞ্জালে আগুন লাগানো নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে অভিযোগ করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই ঘটনায় কলকাতা পুরসভার দিকেই আঙুল তুলেছিলেন তিনি। অন্য দিকে, পরিবেশ দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বানতলার ট্যানারিগুলিকেও চামড়া পোড়াতে নিষেধ করা হয়। ছাঁট চামড়া পুনর্ব্যবহার করে জিনিস তৈরি হচ্ছে। আইনত তিলজলা, তপসিয়া, ট্যাংরায় ট্যানারি থাকার কথা নয়। সেটাই যদি থেকে যায়, তা হলে চামড়ার ছাঁট পো়ড়ানো আটকাবে কী করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Air pollution pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE