চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে ভাঙচুর চালানো হয় এই হাসপাতালে। —ফাইল চিত্র।
কথা ছিল, তদন্ত শেষ করে দশ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হবে। রিপোর্ট তো দূর, এখনও এক বারের জন্য বৈঠকেই বসেননি সেই তদন্ত কমিটির সদস্যেরা। যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে হাসপাতালের অন্দরে।
গত ১৫ জানুয়ারি চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে মারা যান টালিগঞ্জের বাসিন্দা গোপাল কয়াল (৩৮)। মৃত্যুর পরে পরিবারের তরফে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। যার জেরে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভাঙচুর চালানো হয়। চিকিৎসকেরা সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, গোপালবাবুর ক্যানসার হয়েছিল। তাঁর জিভের নীচে ট্র্যাকিওস্টোমি নামে একটি অস্ত্রোপচার করার দরকার ছিল। পরিবারকে বারবার তা বলা হলেও তাঁরা ওই অস্ত্রোপচারে রাজি হননি। সেই কারণেই গোপালবাবু মারা যান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য পরিবারের দাবি মেনে নিয়ে অভিযোগের তদন্ত করতে একটি কমিটি তৈরি করেন। অধিকর্তা তাপস মাজি জানিয়েছিলেন, পাঁচ সদস্যের ওই ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে দশ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। তার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, হাসপাতালের ত্রুটি ঢাকতেই কোনও রকম অনুসন্ধান চালাচ্ছে না ওই কমিটি। সেই কারণেই রোগীর মৃত্যুর পরে ১২ দিন পরেও কোনও বৈঠকে বসেননি তাঁরা। অভিযোগ, ঠিকঠাক তদন্ত হলে বিপদে পড়তে পারেন চিকিৎসকদের একাংশ।
কিন্তু গোপালবাবুর মৃত্যুতে হাসপাতালের কি কোনও গাফিলতি ছিল? চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই রোগী দীর্ঘদিন ধরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছেই চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। সে দিন তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে বহির্বিভাগে চিকিৎসক উপস্থিত থাকলেও তিনি প্রাথমিক পর্বের কোনও রকম চিকিৎসা করতে উদ্যোগী হননি। প্রায় দেড় ঘণ্টা রোগী বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিলেন। এটা গাফিলতি।
গোপালবাবুর মৃত্যুর পরে বারবার বলা হয়, ট্র্যাকিওস্টোমি করানো হয়নি। তার জেরে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় তিনি মারা গিয়েছেন। তা হলে কি চিকিৎসার সুযোগ ছিল?
হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকেরা ছিলেন। বহির্বিভাগে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা কেন রোগীর আশঙ্কাজনক শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তাঁদের জানালেন না? চিকিৎসকেরা তো গোপালবাবুকে বাঁচানোর চেষ্টাই করতে পারলেন না। রোগী মারা যাওয়ার পরে তাঁকে চিকিৎসক পরীক্ষা করলেন।
ওই হাসপাতালের আর এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘গোপালবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় বলা হচ্ছে, তাঁর চিকিৎসা যিনি করছিলেন, সে সময়ে বহির্বিভাগে সেই চিকিৎসক ছিলেন না। কিন্তু এক জন রোগী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে সে সব না ভেবে আগে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা উচিত ছিল।’’
শনিবার অধিকর্তা তাপসবাবু দাবি করেন, ক্যানসার গবেষক ও চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি ওই কমিটি ইতিমধ্যেই এক বার বৈঠক করেছে। কিন্তু রিপোর্ট এখনও তৈরি হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘জানুয়ারিতে বেশ কয়েক দিন ছুটি ছিল। তাই বৈঠক করা হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আরও কিছু সময় লাগবে। সময়মতো সব কাজ হবে।’’ তা হলে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট কবে তৈরি হবে? তাপসবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy