Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যু কী ভাবে, কাটছে না ধোঁয়াশা

বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কমিটি তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ এমন একটি ঘটনার পরেও কমিটি তৈরি করতে এত সময় কেন লাগছে? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

বুকভাঙা: ঐত্রী দে (ইনসেটে)। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে তার মা শম্পাদেবী। বৃহস্পতিবার, কালীঘাটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বুকভাঙা: ঐত্রী দে (ইনসেটে)। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে তার মা শম্পাদেবী। বৃহস্পতিবার, কালীঘাটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

কেউ প্রশ্ন তুলছেন ওষুধের মান নিয়ে। কারও বা অনুমান, শারীরিক কিছু সমস্যার জেরে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটেছে। আবার কেউ বলছেন, আগে থেকেই গুরুতর কোনও অসুখ বাসা বেঁধেছিল শরীরে।

একরত্তি মেয়েটার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও এখনও কোনও তদন্ত কমিটিই তৈরি করে উঠতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কমিটি তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ এমন একটি ঘটনার পরেও কমিটি তৈরি করতে এত সময় কেন লাগছে? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

বুধবার ইএম বাইপাস সংলগ্ন মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে মারা যায় আড়াই বছরের ঐত্রী দে। ওই হাসপাতালে যে চিকিৎসকের অধীনে সে ভর্তি ছিল, সেই জয়তী সেনগুপ্ত বুধবারই জানিয়েছিলেন, কী ভাবে এমন ঘটল তার কোনও সূত্র তাঁর কাছে নেই। পরিবারের অভিযোগ, ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার ফলেই মারা গিয়েছে সে। কিন্তু সর্দি-জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুকে কী এমন ইঞ্জেকশন দেওয়া হল, যাতে সে মারাই গেল?

হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী তাকে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল, সামান্য কিছু ক্ষেত্রে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি থেকে যায়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সঞ্চালনেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে এগুলি খুবই বিরল।’’ একাধিক শিশু চিকিৎসকের মতে, শিশুর আগে থেকে হার্টের কোনও সমস্যা থাকলে এই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

ঐত্রীর কি হার্টের কোনও সমস্যা ছিল? অপূর্ববাবুর কথায়, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে কড়া ওষুধ প্রয়োগের আগে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করালে ভাল হয়। কোন্ ওষুধ দেওয়া যাবে কিংবা কোন ওষুধের কী ঝুঁকি, সেগুলিও স্পষ্ট হয়।’’ ঐত্রীর মা শম্পাদেবী জানান, এর আগে ঐত্রী এক বার অসুস্থ হয়ে পড়ায় অপূর্ববাবুর পরামর্শ মতো তাঁরা মেয়ের হার্টের পরীক্ষা করিয়েছিলেন। রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, কোনও সমস্যা নেই।

আমরি-তে শিশুটির এই ধরনের কোনও পরীক্ষা হয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ। তবে আমরি হার্টের সমস্যা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি। ঐত্রীর হার্টের কোষ নিয়ে সেটি হিস্টোপ্যাথোলজি পরীক্ষার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আমরি-র এক শিশুরোগ চিকিৎসক জানান, বুকে সংক্রমণের জেরে ঐত্রীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বেশি শ্বাসকষ্ট হলে খাবার হজমের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, পাকস্থলী বেশি পরিমাণ অ্যাসিড তৈরি করে। শিশুদের ফুসফুসে সেই অ্যাসিড ঢুকে যায়। যার জেরে তাদের কাশি হয়। ঐত্রীর বুকের সংক্রমণ কমাতে তাকে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। সেই ওষুধে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

শহরের শিশুরোগ চিকিৎসকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন ওষুধের মান নিয়ে। এক শিশুরোগ চিকিৎসকের প্রশ্ন, ‘‘শিশুটিকে যে অ্যান্টি-বায়োটিক দেওয়া হয়েছিল, তার মান যাচাই করা দরকার। এ ক্ষেত্রে ওষুধের মানে কোনও সমস্যা ছিল না তো? ওষুধটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়েও খোঁজ নেওয়া দরকার।’’ শিশুরোগ চিকিৎসক পুনীত গোয়েন্‌কা মনে করছেন, যে অ্যান্টিবায়োটিক ঐত্রীকে দেওয়া হয়েছিল, তা থেকে কোনও রকম অ্যালার্জি তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তার জেরে এমন বিপর্যয় ঘটতে পারে।

আমরি-র এক চিকিৎসক জানান, সেখানে ভর্তি থাকাকালীন শিশুটির খিঁচুনি হয়েছিল। তাই তার মস্তিষ্কে স্নায়ুঘটিত কোনও সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন, শিশুটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও কেন তার সবরকম শারীরিক পরীক্ষা করা হল না? কেন সব দিক বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেননি? শিশুরোগ চিকিৎসক গৌতম ঘোষ জানান, জ্বর কিংবা কোনও সংক্রমণে আক্রান্ত হলে অনেক সময়ে শিশুদের স্নায়ু কিংবা হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময়ে রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত সমস্যাও তৈরি হয়। অধিকাংশ সময়ে সেটা আকস্মিক এবং সাময়িক হয়। ঐত্রীরও সে রকম কিছু হয়েছিল বলে মনে করছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE