ফের থানায় বসে আক্রান্ত পুলিশ। এবার বাগুইআটিতে। বন্ধ বাজারের জুয়ার আসর থেকে চার জুয়াড়িকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আর তার জেরে থানার ভিতরেই দুষ্কৃতীদের মার খেতে হল পুলিশকে। বাদ গেলেন না মহিলা অফিসারও। যদিও এদিন অবশ্য পুলিশ দুষ্কৃতীদের মার খেয়ে চুপ করে যায়নি। পাল্টাও দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে ওই ঘটনা ঘটে বাগুইআটির পুরনো বাজারের ভিতরে। রাতের দিকে ওই বাজারের ভিতরে হামেশাই মদ আর জুয়ার আসর বসে বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল। কালও জুয়ার আসর বসেছে বলেই সূত্র মারফত খবর আসে বাগুইআটি থানার কাছে। সেই মতো পুরনো বাজারের ভিতরে হানা দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে তাস, নগদ ৭৩ হাজার টাকা, বিয়ারের বোতল আটক করে পুলিশ। বমাল গ্রেফতার করা হয় সোমপ্রকাশ দত্ত, শান্তনু বণিক, সৌমেন মুখোপাধ্যায় আর গৌতম মন্ডল নামে চার জুয়ারিকে। ধৃতদের থানায় নিয়ে আসার পরেই শুরু হয় গোলমাল।
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, ধৃতদের ছাড়ানোর দাবিতে থানা ও থানার বাইরে সত্তর-আশি জন জড়ো হয়েছিল। যদিও পুলিশের সঙ্গে প্রারম্ভিকভাবে বচসা আর গোলমাল বাধে কুড়ি-পঁচিশ জনের। থানার ভিতরে ঢুকে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে থাকে ধৃতেরা। ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। ইতিমধ্যেই ওই মহিলা অফিসারের গায়ে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে নিগ্রহ করা শুরু করে দু’-তিন জন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে থানার ইন্সপেক্টর ইন-চার্জ সুকমলকুমার দাস ও সাব ইন্সপেক্টর প্রতাপাদিত্য মন্ডল দুষ্কৃতীদের মারে জখম হন। থানা চত্বরের ভিতরেই ফেলে পেটানো হয় প্রতাপাদিত্যবাবুকে।
থানার পুলিশ কর্মীরা জানান, ঘটনার সময় থানায় খুব কম সংখ্যায় পুলিশ ছিলেন। ঘটনা যে এত বড় আকার ধারণ করবে তা প্রথমে আঁচ করতে পারেননি কেউ। তাঁরা জানান, সাধারণ এই ধরনের ঘটনায় পুলিশ ধড়পাকড় করলে ধৃতের সমর্থনে লোকজন থানায় এসে চিৎকার চেঁচামেচি করে। কিন্তু কালকের ঘটনা সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে। মুখে বচসা করতে করতেই জুয়ারিরা পুলিশের গায়ে হাত দেওয়া শুরু করে।
ঠিক কী হয়েছিল থানায়?
কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, রাত সাড়ে বারোটার পরে থানায় গোলমাল শুরু হয়। ইন্সপেক্টর ইন –চার্জ সুকমলবাবু তখন থানা থেকে বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইতিমধ্যেই তিনি নিজের চেম্বারের বাইরে ওই মহিলা পুলিশ আধিকারিকের চেঁচামেচি শুনতে পান। চেম্বার থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেন ততক্ষণে ওই মহিলা অফিসারকে ধাক্কা দেওয়া শুরু করেছে জুয়ারিরা। তাদের সমর্থনে লোকজন থানার বাইরে দাঁড়িয়ে চেঁচামেচি করছে। অভিযোগ, ধৃতদের মধ্যে সোমপ্রকাশ ও শান্তনুই ওই মহিলা অফিসারের গায়ে হাত তোলে। তাদের থামাতে গেলে সোমপ্রকাশ থানার ইন্সপেক্টর ইন চার্জ সুকমলবাবুর কপালে ঘুঁষি মারে। জুয়ারিদের সমর্থনে থানায় আসা কয়েক জন চড়াও হয় সাব-ইন্সপেক্টর প্রতাপাদিত্যবাবু ওপরে। তাকেও মারধর করা হয়। এরপরেই পাল্টা দেওয়া শুরু করে পুলিশ। লাঠি উঁচিয়ে থানায় জড়ো হওয়া লোকজনকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যায় বাগুইআটি থানার পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আরও আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। গোটা ঘটনায় চা়ঞ্চল্য ছড়ায় ওই এলাকায়।
গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ কর্মীরাও। তাঁদের অভিযোগ, কমিশনারেট হলেও জেলা পুলিশের পরিকাঠামো নিয়েই বিভিন্ন থানা এখনও চলছে। পর্যাপ্ত বাহিনী মজুত নেই কোনও থানাতেই। যার জেরেই সোমবার রাতে যখন ওই ঘটনা ঘটেছে তখন প্রাথমিকভাবে তা প্রতিহত করতে পারেনি বাগুইআটি থানার পুলিশ। সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীরা তখন রাত পাহারার কাজে অন্যত্র টহল দিচ্ছিলেন। হাতে গোনা কয়েক জন ছিলেন থানায়। ইন্সপেক্টর ইন চার্জ সুকমলবাবুকে একা লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের দিতে তেড়ে যেতে দেখে অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা রুখে দাঁড়ান বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। তার পরেও রাতে বাড়তি বাহিনী পাঠানো যায়নি। থানার নিরাপত্তার জন্য বাড়তি পুলিশ পাঠানো হয় আজ বেলা সাড়ে বারোটার পরে। ততক্ষণে ধৃতদের আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে বাগুইআটি থানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy