Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অনুভব নিরুদ্দেশ এখনও রহস্য, রিপোর্ট সিপি-কে

ওই ছাত্রের সন্ধানে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার সম্প্রতি যাদবপুর থানার কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান।

অনুভব দাস

অনুভব দাস

সুরবেক বিশ্বাস
অনুভব দাস শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

কেউ কিছু বুঝতে পারছেন না। না পুলিশ, না বাড়ির লোকজন। শুধু এটুকুই পরিষ্কার, ১৫ বছরের ছেলেটি খাস কলকাতার রাজপথ থেকে উবে গিয়েছে যেন কর্পূরের মতো। ঘটনার পর ৫৪ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। নবম শ্রেণির ছাত্র, যাদবপুরের অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা অনুভব দাসের কোনও খোঁজ নেই। লালবাজার সূত্রে খবর, ১৫ বছরের ওই কিশোরের নিখোঁজ রহস্য নিয়ে চিন্তিত পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও।

ওই ছাত্রের সন্ধানে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার সম্প্রতি যাদবপুর থানার কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, যাদবপুরের ওসি অমিত দে সরকারের দেওয়া প্রায় তিন পাতার রিপোর্ট সিপি-র কাছে জমা পড়েছে।

২৭ অক্টোবর বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয় অনুভব। সিসি ক্যামেরার ছবিতে তাকে সাইকেল চালিয়ে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড থেকে লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের অ্যাপ্রোচ রোডে ঢুকতে দেখা যায়। পরনে স্কুলের পোশাক, সঙ্গে স্কুলব্যাগ। ব্যাস। তার পর আর অনুভবের চিহ্ন নেই।

এক পুলিশকর্তা জানান, থানার তরফে কী কী পদক্ষেপ এ যাবৎ করা হয়েছে, সে সব বলা আছে সিপি-কে দেওয়া ওই রিপোর্টে। এটাও বলা আছে যে যাদবপুর থানা হাল ছাড়েনি।

পরী‌ক্ষার খাতায় অনুভব নম্বরে কারসাজি করায় স্কুল থেকে তার মা-বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়। অনুভবের মা-বাবা ছেলেকে বকাবকি করলেও স্কুলে যাননি। যে দিন তাঁদের স্কুলে দেখা করতে বলা হয়েছিল, সে দিনই স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় অনুভব। অনুভবের মা শর্মিষ্ঠা দাস ও বাবা অমলকুমার দাস বলছেন, ‘‘ও যদি নিজে থেকে কোথাও চলে গিয়ে থাকে, তবে অবিলম্বে ফিরে আসুক। ওর চিন্তায় আমরা বিধ্বস্ত। আমরা ওকে বকাবকি করব না।’’

লালবাজার সূত্রের খবর, এই নিরুদ্দেশ রহস্যে এ যাবৎ সব চেয়ে বড় মোচড়, নিখোঁজের মায়ের মোবাইলে হোয়াটস্‌অ্যাপে আসা একটি মেসেজ। যাতে বলা হয়েছিল, ‘আই অ্যাম সরি’। অনুভবের মা মনে করেছিলেন, তাঁর ছেলেই বুঝি বার্তা পাঠিয়েছে। কথা বলতে চেয়ে শর্মিষ্ঠাদেবী সঙ্গে সঙ্গে ওই মোবাইল নম্বরে বার বার ফোন করেন। কিন্তু কেউ তোলেনি। হোয়াটস্‌অ্যাপে মেসেজ করে অনুভবের মা জানতে চান, কেউ কি তাঁর ছেলের খবর জানাতে চাইছেন? কিছু ক্ষণ পর ‘সরি ম্যাডাম, ভুল করে মেসেজ চলে গিয়েছে’ বলে বার্তা পান অনুভবের মা।

কিন্তু শর্মিষ্ঠা দেবীর হোয়াটস্‌অ্যাপ ডিপি বা ডিসপ্লে পিকচারে রয়েছে পরিবারের চার জনের ছবি। স্বামী, অনুভব, অনুভবের ২৩ বছরের দিদির সঙ্গে শর্মিষ্ঠাদেবীর ছবি। তা হলে হোয়াটস্‌অ্যাপ বার্তায় কেন তাঁকে ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করা হল? মেসেজের প্রেরক কী করে বুঝলেন, ওটা এক মহিলারই নম্বর? সে সব উত্তর পাওয়ার আগেই অবশ্য শর্মিষ্ঠা দেখেন, তাঁকে ওই বার্তা প্রেরক ব্লক করে দিয়েছেন।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, নয়া দিল্লির কনট প্লেসের একটি মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্টিনের এক কর্মী, বছর পঁচিশের এক যুবক বার্তাটি পাঠিয়েছেন। সম্প্রতি যাদবপুর থানার একটি দল দিল্লিতে গিয়ে বিশু দাস নামে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁকে কলকাতায় এনেও দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। তবে পুলিশের একাংশ মনে করছেন, ওই যুবকের সঙ্গে অনুভব নিরুদ্দেশের সম্পর্ক নেই। এই রাজ্যে ওই যুবকের কয়েক জন বন্ধুবান্ধব আছেন। তাঁদেরই কারও নম্বর ভেবে ভুল করে শর্মিষ্ঠাদেবীকে তিনি মেসেজ করেছিলেন বলে পুলিশের ওই অংশের ধারণা।

তা হলে অনুভব কোথায় গেল? এক অফিসার বলেন, ‘‘অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে ছেলেটি কোনও দুষ্টচক্রের খপ্পরে পড়ে গেল না তো! কিন্তু এটা আন্দাজ মাত্র। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

শুধু দিল্লি নয়, হাওড়া, রিষড়া এবং একাধিক বার নদিয়ার চাকদহে অনুভবের খোঁজে ছুটেছে পুলিশ। আর প্রতিবারই তারা ফিরে এসেছে খালি হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Missing Anubhab Das অনুভব দাস
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE