কুমার আদিত্য গঙ্গোপাধ্যায়
পড়শির সঙ্গে ভাব জমিয়ে ভবিষ্যৎ বলে দিতেন তিনি। দক্ষ জ্যোতিষী হিসেবেও দাবি করতেন নিজেকে। সেই সঙ্গেই তাঁর মিষ্টি কথাতেও মন গলত অনেকেরই। অভিযোগ, এ সব চাতুরি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শেয়ার ব্যবসার টোপ দিতেন অনেককেই। পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচ বছরে সেই টোপেই একত্রিশ জনের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট চার কোটি ৯৬ লক্ষ ৯৫ হাজার দুশো টাকা লোপাট করে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন ‘জ্যোতিষী’! শেষমেশ ধরা পড়ে গেলেন মঙ্গলবার।
ত্রিপুরার অসম-আগরতলা সড়ক থেকে ওই ‘প্রতারক’কে পাকড়াও করেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম কুমার আদিত্য গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার ট্রানজিট রিমান্ডে আগরতলা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় তাঁকে। আদালতে তোলা হলে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আদিত্যকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্টোবর মাসে আদিত্যর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন গড়ফা নস্করপাড়ার এক বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, অভিযোগে ওই ব্যক্তির দাবি, শেয়ার ব্যবসার টোপ দিয়ে তাঁর কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আদিত্য। তদন্তে জানা যায়— এক জন নয়, আদিত্যর প্রতারণার শিকার কম করে একত্রিশ জন!
তদন্তকারীরা জানান, ২০০৯ সাল নাগাদ গরফার নস্করপাড়ায় আসেন আদিত্য। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় আদিত্য বলেছেন, তাঁর কোনও পরিবার নেই। বড় হয়েছেন হরিদ্বারের আশ্রমে। সেখান থেকেই গরফায় এসে বসবাস শুরু করেন। সেখানকার রিকশাচালকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অচিরেই। প্রতি দিন কয়েকশো টাকার মালা কিনে গরফা তল্লাটের বিভিন্ন মন্দিরে যেতেন বলেও জানিয়েছেন আদিত্য। গোয়েন্দাদের দাবি, সাত্ত্বিক জীবনযাপন করতেন আদিত্য। তবে তার আড়ালে বহু নারীর সঙ্গে সম্পর্কও ছিল তাঁর।
প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জানান, মানুষের বিশ্বাস অর্জনে লোকের বাড়িতে গিয়েও টাকা ফেরত দিয়ে আসতেন আদিত্য। পুলিশ এখন পর্যন্ত তাঁর তিনটি ডিম্যাট অ্যাকউন্ট এবং কিছু গোল্ড বন্ড সংক্রান্ত নথির হদিস পেয়েছে। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তার দাবি, এখন পর্যন্ত মাত্র কোটিখানেক টাকার হিসেব মেলাতে পেরেছেন আদিত্য। গোয়েন্দাদের অনুমান, বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আদিত্য।
বৃহস্পতিবার সকালে আদিত্যর গ্রেফতারির খবর রটে যায় গরফা এলাকায়। তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলা হবে বলেও জানতে পারেন বেশি কিছু বাসিন্দা। অনেকেই দুপুরে ভিড় জমান আলিপুর আদালত চত্বরে। পুলিশ আদিত্যকে আদালতে নিয়ে এলে উত্তেজিত গরফাবাসীরা তাঁকে ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের কড়া পাহারায় পেরে ওঠেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy