পোস্তায় বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল তৈরিতে ব্যবহৃত ইস্পাত যে নিম্ন মানের, তা আগেই পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল। তা সত্ত্বেও সেই ইস্পাত দিয়েই তৈরি হয়েছিল উড়ালপুলের ৪০ নম্বর স্তম্ভ। উড়ালপুল-কাণ্ডে লালবাজারের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে নির্মাতা সংস্থার গাফিলতি— জানিয়েছেন লালবাজারের একটি সূত্র।
ওই ইস্পাতের যোগ্যতা-মান পরীক্ষার রিপোর্ট দেখার পরেও কেন কেএমডিএ কোনও ব্যবস্থা নিল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তদম্তকারীরা। তদন্তকারী দলের এক অফিসার বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেএমডিএ-র নজরদারির অভাব স্পষ্ট। ইস্পাত নিম্ন মানের জানা সত্ত্বেও যদি কেএমডিএ-র ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা তার ব্যবহার আটকাতে না পারেন, তাহলে তা ফৌজদারি অপরাধের সামিল।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, কোনও নির্মাণকাজে ব্যবহার করা প্রতিটি সামগ্রী নির্দিষ্ট পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করিয়ে যদি তা যোগ্যতা মান উতরে যায়, তবেই সেই সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে হয়। নচেৎ তা বাতিল করে দেওয়ার কথা। উড়ালপুলের নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএল অন্য সামগ্রীর মতো ভিলাইয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সরবরাহ করা ইস্পাতের নমুনাও ২০১৩ সালে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওই নমুনা পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। তা সত্ত্বেও কার নির্দেশে ওই ইস্পাত উড়ালপুলের স্তম্ভ তৈরিতে ব্যবহার করা হল, তা খতিয়ে দেখছে লালবাজার।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ভিলাই থেকে ইস্পাত আসার পরে প্রথমে তা রাখা হয় ডানকুনিতে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার গুদামে। নির্মাণকারী সংস্থা সেখান থেকে ওই ইস্পাত নিয়ে যায় খিদিরপুরের এক পরীক্ষাগারে। পুলিশের দাবি, সেখানে যোগ্যতা মান পরীক্ষার পরে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ইস্পাত দিয়ে সেতু তৈরি সম্ভব নয়। কারণ, যে ধরনের গুণগত মান থাকলে উড়ালপুল নির্মাণে ইস্পাত ব্যবহার করা যায়, ইস্পাতের ওই নমুনায় তার অভাব রয়েছে। কিন্তু তার পরেও ওই ইস্পাত দিয়েই তৈরি হয় উড়ালপুল।
উড়ালপুল বিপর্যয়ের পরে নির্মাতা সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্তা-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃতদের জেরা করেই নিম্ন মানের ইস্পাতের বিষয়টি সামনে আসে। এই ঘটনায় রাজ্য সরকার যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছে, তার সদস্য, খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যে নবান্নকে জানিয়ে দিয়েছেন ৪০ নম্বর স্তম্ভে ব্যবহৃত ইস্পাতের মান যথাযথ ছিল না। ৮০ নম্বর স্তম্ভ থেকে ইস্পাতের নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করিয়ে নিয়েছিলেন ওই বিশেষজ্ঞেরা।
লালবাজার জানাচ্ছে, ভোট মিটলেই ভিলাইয়ের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং খিদিরপুরের ওই পরীক্ষাগারের সঙ্গে কথা বলা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ৪০ নম্বর স্তম্ভের ইস্পাতের নমুনা নতুন করে সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে সল্টলেকের জাতীয় পরীক্ষাগারে। কলকাতা পুলিশকে এই তদন্তে সাহায্য করছে রেলের সহযোগী সংস্থা রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক সার্ভিস (রাইট্স)। ইতিমধ্যেই রাইট্সের পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল ঘুরে গিয়েছেন। তাঁদের রিপোর্টের জন্য এখন অপেক্ষা করছেন লালবাজারের তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy