Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘ধর্মঘটের ছুটিতে’ কর্মহীন নগরজীবন

ক্যালেন্ডারে কাজের দিন। কিন্তু রাস্তায় লোকের দেখা মিলল কই! ধর্মঘটের দিন রাস্তায় বেরিয়ে গাড়ির অভাব কিংবা হাঙ্গামার জন্য যাতে মানুষ বিপদে না পড়েন, তার জন্য ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। পুলিশি পাহারায় সরকারি বাস-স্টেশনে ট্যাক্সি রাখা ছিল। সময় মেনে চলেছে ট্রেন-মেট্রো। কিন্তু যাঁদের জন্য এ সব ব্যবস্থা ছিল, পথেঘাটে সেই সাধারণ মানুষকে দেখা গেল না।

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৪
Share: Save:

ক্যালেন্ডারে কাজের দিন। কিন্তু রাস্তায় লোকের দেখা মিলল কই!

ধর্মঘটের দিন রাস্তায় বেরিয়ে গাড়ির অভাব কিংবা হাঙ্গামার জন্য যাতে মানুষ বিপদে না পড়েন, তার জন্য ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। পুলিশি পাহারায় সরকারি বাস-স্টেশনে ট্যাক্সি রাখা ছিল। সময় মেনে চলেছে ট্রেন-মেট্রো। কিন্তু যাঁদের জন্য এ সব ব্যবস্থা ছিল, পথেঘাটে সেই সাধারণ মানুষকে দেখা গেল না। বুধবার সকালে হাতেগোনা যাত্রী নিয়ে বাস চললেও বেলায় তার সংখ্যা কমেছে। যাত্রীর অভাবে রাস্তা থেকে উধাও হয়েছে অনেক অটো-ট্যাক্সিও। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে মহানগরের বেশির ভাগ দোকানবাজার ছিল বন্ধ। কলকাতা পুরসভার অধীনে থাকা বাজারেও দোকানের ঝাঁপ ওঠেনি।

তবে হাওড়ার পুরসভা, আদালত, চটকল, রেল ওয়ার্কশপ চালু ছিল। বরাহনগর এলাকাতেও বেশ কিছু কারখানায় কাজ হয়েছে। হাতিবাগান এলাকায় এ দিন সকাল থেকে দোকানপাট খুলেছিল। লেক গার্ডেন্স, গল্ফ গ্রিনের মতো এলাকায় পাড়ার দোকানপাট খোলা ছিল। মধ্যমগ্রাম, উল্টোডাঙা এবং উত্তর শহরতলির কিছু এলাকায় দোকানপাট খোলা মিলেছে। বারাসত কলেজে এ দিন সব শিক্ষক-শিক্ষিকা হাজির ছিলেন। পড়ুয়ারা আসায় স্বাভাবিক পঠনপাঠন হয়েছে বলে অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাশগুপ্ত দাবি করেছেন। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি বাড়ি থেকে নবান্নে আসার সময়ে দেখেছি, দোকানপাট খোলা। বাসেও লোকজন আছেন।’’ কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরসভায় ৯১ শতাংশ কর্মী-অফিসার হাজির ছিলেন। যা স্বাভাবিক দিনের থেকেও বেশি।

তবে এটাই সামগ্রিক চিত্র নয়। লোকজন না বেরোনোয় অফিস টাইমের শিয়ালদহ-হাওড়ামুখী অনেক লোকাল ট্রেনেই যাত্রীরা কার্যত শুয়ে-বসে যাতায়াত করেছেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ ও হাওড়া-খড়্গপুর ছাড়া অন্য কোনও শাখায় অবরোধ হয়নি। এক মেট্রোকর্তা বলেন, ‘‘যে কোনও কাজের দিনের তুলনায় এ দিন যাত্রী-সংখ্যা অনেকটাই কম ছিল।’’

সকালে শিয়ালদহ স্টেশনের প্রিপেড বুথের বাইরে ট্যাক্সির লাইন ছিল। কিন্তু দূরপাল্লার ট্রেনে চেপে হাজির হওয়া যাত্রীরা বিদায় নিতেই সুনসান হয়ে পড়ে স্টেশন চত্বর। পরিস্থিতি দেখে দুপুরেই ট্যাক্সির বুথে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। হাওড়া স্টেশনে যাত্রীদের জন্য ট্যাক্সি-সরকারি বাসের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল। তদারকির দায়িত্বে ছিলেন হাওড়ার ডিসি (ট্রাফিক) সুমিত কুমার ও হাওড়া স্টেশন ট্রাফিক গার্ডের ওসি ইন্দ্রনীল সান্যাল। কিন্তু আয়োজনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা ছিল অনেক কম। ধর্মঘটের দিন পরিষেবা মিলবে বলে জানিয়েছিল ‘উবের’ ক্যাব সংস্থা। কিন্তু এ দিন বারবার অ্যাপ ঘেঁটেও উবেরের গাড়ি মেলেনি। সংস্থার দাবি, চাহিদা ও গাড়ির জোগানে বড় ফারাক তৈরি হয়েছিল। তার উপরে বেশ কিছু চালক গোলমালের ভয় পেয়েছিলেন। ধর্মঘটে ভোগান্তি এড়াতে মঙ্গলবার গভীর রাতে বহু যাত্রী বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় বিমানবন্দরের বাইরেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা সময়মতো এসে পৌঁছতে পারেননি, এমন ঘটনা নেই বলেই দাবি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।

এ দিন সরকারি হাসপাতালগুলির আউটডোর ছিল ফাঁকা। ডাক্তার-নার্সের সংখ্যাও ছিল কম। বহু অস্ত্রোপচার বাতিল হয়েছে। এ দিন এসএসকেএমে একটি লিভার প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার থাকায় ভোরবেলা হাজির হন চিকিৎসকদের দল। কর্মীর অভাবে এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল, আরজিকর-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে দুপুর পর্যন্ত জঞ্জাল সাফাই না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্ট এবং শহরের অন্যান্য আদালতে এ দিন মামলাকারী, আইনজীবী এবং কর্মীদের হাজিরা ছিল না বললেই চলে। তবে অধিকাংশ বিচারক ও বিচারপতি এসেছিলেন। বাদী ও বিবাদী পক্ষ হাজির থাকলে মামলার শুনানি হয়েছে।

ধর্মঘটে ভারত পেট্রোলিয়াম ও হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়ামের রান্নার গ্যাসের ‘বটলিং-প্লান্ট’ চালু থাকলেও ইন্ডিয়ান অয়েলের (আইওসি) বজবজ, মালদহ এবং শিলিগুড়ির রানিনগরের কারখানা এ দিন পুরো বন্ধ ছিল। বেলা ১১টার পরে কল্যাণীর প্লান্টেও কাজ হয়নি। ট্রাক চলাচল না করায় উৎপাদনে বড় ঘাটতি হয়েছে হলদিয়ার কারখানাতেও। এর ফলে বাজারে সিলিন্ডারের জোগানে সাময়িক সমস্যা হতে পারে। তবে আইওসি-র কর্তাদের দাবি, রবিবার বাড়তি কাজ করে ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব। এ দিন ব্যাহত হয়েছে ব্যাঙ্ক পরিষেবাও। এটিএম কাউন্টার প্রায় সবই বন্ধ ছিল। স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের ৭০ শতাংশ শাখা খোলা থাকলেও লেনদেন প্রায় হয়নি। ‘পূর্বাঞ্চল বিমা কর্মচারী সমিতি’-র সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, পূর্বাঞ্চলে বিমা সংস্থাগুলিতে কাজকর্ম হয়নি।

ধর্মঘট নিয়ে গোলমালের খবরও মিলেছে কিছু এলাকায়। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সল্টলেকের করুণাময়ী মোড়ে বাম নেতা-সমর্থকেরা অবরোধ করায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। বামেদের অভিযোগ, পুলিশ মহিলাদের হেনস্থা করেছে। মারধর করেছে প্রবীণ নেতাদের। এ নিয়ে বিধাননগর (পূর্ব) থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। থানার সামনে বিক্ষোভও হয়। যদিও বামেদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধাননগরের পুলিশকর্তারা। ১৩ নম্বর ট্যাঙ্কের সামনে বাম ও তৃণমূলের গোলমালের খবর মিলেছে। মধ্যমগ্রামে ধর্মঘটের সমর্থকদের ছোড়া ইটে একটি অটোর সামনের কাচ ভেঙে যায়। আহত হন অটোচালক দিলীপ চৌধুরী। লালবাজার জানিয়েছে, ধর্মতলার একটি গোলমালের ঘটনায় ২৯ জন ধর্মঘটের সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bharat bandh transport services Kolkata Hatibagan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE