তাঁর চেহারা দেখতে পাননি কেউ। শুধু একটি দোকানঘরের ছাদ থেকে তাঁর ইটবৃষ্টির দাপট টের পেয়েছিলেন। বাসিন্দারা পাল্টা ইটবৃষ্টি শুরু করায় দোকানঘরের চালা থেকে কী যেন ধুপ করে পড়ল পুকুরে। পুকুরের জল লক্ষ করে ফের ইট ছোড়া শুরু করলেন এলাকার মানুষ। লুকোচুরির পৌনে দু’ঘণ্টা পরে পুলিশে খবর গেল। তারও প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে ওই পুকুর থেকেই উদ্ধার করা হল বছর তিরিশের এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ। মাথার বাঁদিকে গভীর ক্ষত। সোমবার রাতে, পর্ণশ্রীর মান্নাপাড়ার ঘটনা।
পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম কিষুণ পাহান। ইটের আঘাতেই তাঁর মাথায় ওই ক্ষত তৈরি হয়েছে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ওই যুবক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। অপরিচিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, নিহত যুবক আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। কলকাতায় রাজমিস্ত্রিদের জোগাড়ে হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু সোমবার রাতে পর্ণশ্রীর ওই তল্লাটে এসে কিষুণ এ ভাবে ইটবৃষ্টি করছিলেন কেন, পুলিশের কাছে তা স্পষ্ট নয়। এলাকার অনেকের মতে, ওই যুবক চুরির ফন্দি এঁটেই ওই পাড়ায় ঢুকেছিলেন। কিষুণ কলকাতার কোথায় থাকতেন, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
কী ঘটেছিল সোমবার রাতে?
পুলিশ জানিয়েছে, পর্ণশ্রীর সাগর মান্না রোডে একটি মুদির দোকান রয়েছে আনন্দ বাগ নামে এক ব্যক্তির। তিনি পুলিশকে জানান, রাত দশটা নাগাদ যখন দোকান বন্ধের তোড়জোড় করছেন, সেই সময়ে টিনের চালে ধুপধাপ শব্দ। আনন্দবাবু প্রথমে ভেবেছিলেন, ভাম উঠেছে দোকানের ছাদে। কিন্তু দোকানের পিছনের দরজা খুলে বাইরে বেরোতে যেতেই আচমকা একটি থান ইট এসে পড়ে তাঁর ডান পায়ের উপরে। ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসতে গিয়ে দোকানের ভিতরেই উল্টে পড়ে যান তিনি। তখন দোকানে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। চিৎকার করে ওঠেন তিনি। ধড়মড়িয়ে উঠে আবার বাইরে বেরোতে যান আনন্দবাবু। এ বার তাঁর হাতে এসে পড়ে আর একটি থান ইট।
আনন্দ বাগের তখন রক্তাক্ত অবস্থা। তার মধ্যেই কোনও রকমে স্ত্রীকে নিয়ে দৌড়ে দোকানের সামনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন তিনি। ওই দম্পতির চিৎকারে ততক্ষণে জড়ো হয়ে গিয়েছেন এলাকার মানুষ। অধিকাংশই বলছেন, নিশ্চয়ই চোর এসেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আর একটি ইট এসে পড়ে রাস্তার একটি ফুচকার স্টলের সামনে। বিপদ বুঝে পাততাড়ি গুটিয়ে নেন ফুচকা বিক্রেতা। এর পরে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ।
ইতিমধ্যে ভিড় বেড়েছে কৌতূহলী মানুষের। কাউকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, কেউ ইট ছুড়ছে মেঘের আড়াল থেকে মেঘনাদের তির ছোড়ার মতো। রাত পৌনে ১১টা। ভিড় করে থাকা বাসিন্দাদের উদ্দেশে উড়ে এল আরও একটি ইট। এ বার পাল্টা ইটবৃষ্টি শুরু করেন এলাকার বাসিন্দারাও। মিনিট ১৫ পরে দোকানের পিছন দিকের পুকুরে ঝপাৎ করে কিছু পড়ার শব্দ আসে। ভিড় গিয়ে জড়ো হয় পুকুরের চারপাশে। পুকুর লক্ষ করে শুরু হয় এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি।
আধ ঘণ্টারও বেশি এ ভাবে চলার পরে বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলতে থাকেন পুলিশে খবর দেওয়া উচিত। রাত ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। প্রথমে পুকুরে আলো ফেলে তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু রাত দেড়টা পর্যন্ত ওই ভাবে খুঁজে কাউকে না পেয়ে শেষমেশ খবর দেওয়া হয় লালবাজার কন্ট্রোল রুমে। আসে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। আড়াইটে নাগাদ ওই পুকুরে ডুবুরি নামানো হয়। তার পরেই পাওয়া যায় কিষুণের মৃতদেহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy