Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিশিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক

বিপজ্জনক বাড়ি আর থাকবে না, ঘোষণা মেয়রের

শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলির সংস্কারের পথ সুগম করতে পুর আইনে নতুন একটি শব্দ যোগ করার প্রস্তাব উঠল। শব্দটি হল বাড়ির ‘অকুপায়ার’ অর্থাৎ বর্তমানে যিনি বা যাঁরা সংশ্লিষ্ট বাড়িতে বাস করছেন। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী ‘অকুপায়ার’ ভাড়াটে, বাড়ির মালিক অথবা শরিক, যে কেউই হতে পারেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলির সংস্কারের পথ সুগম করতে পুর আইনে নতুন একটি শব্দ যোগ করার প্রস্তাব উঠল। শব্দটি হল বাড়ির ‘অকুপায়ার’ অর্থাৎ বর্তমানে যিনি বা যাঁরা সংশ্লিষ্ট বাড়িতে বাস করছেন। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী ‘অকুপায়ার’ ভাড়াটে, বাড়ির মালিক অথবা শরিক, যে কেউই হতে পারেন। তিনি ওই বাড়ির যতটি অংশ জুড়ে বাস করছেন, বাড়ি সংস্কারের পরে ততটা অংশই ফেরত পাবেন। প্রোমোটারের মাধ্যমে বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারে এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক আইনজ্ঞ।

শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলি কী ভাবে বাঁচানো যায়, তার পথ খুঁজতে বুধবার পুরভবনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নানা প্রস্তাব ও পরামর্শ দেন উপস্থিত সকলেই। সেখানেই আসে ‘অকুপায়ার’ প্রসঙ্গ। রাজ্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় বলেন যদি মালিক, ভাড়াটে ইত্যাদির বদলে ‘অকুপায়ার’, অর্থাৎ যাঁরা বাড়িতে বসবাস করছেন, তাঁদের সামগ্রিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়, তা হলে বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারের পরে প্রোমোটারের পক্ষে সেই ‘অকুপায়ারদের’ নিজ নিজ অংশের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া সহজ হবে এবং বাকি অংশ সেই প্রোমোটার তাঁর নিজস্ব ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রণববাবুর ব্যাখ্যা, এই ভাবে নিজের পুরনো বসবাসের সম পরিমাণ জায়গা ফিরে পেয়ে অকুপায়ারও খুশি হবেন। আবার এতে ভাড়াটে, মালিক, কার কী অধিকার এ সব নিয়ে আইনি জটিলতাও কমবে।

বিপজ্জনক বাড়ির বিপদ নিয়ে জনমত তৈরির উদ্দেশ্যে এ দিনের বৈঠক। উদ্দেশ্যও সফল। কারণ উপস্থিত প্রায় সকলেই একটি বিষয়ে একমত। তা হল, বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা অনেক ক্ষেত্রে বড় বাধা। যার মধ্যে শরিকি বিবাদ, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে মামলা, এমনকী বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে আদালতের ইনজাংশন সবই আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই সব বাধা কাটিয়ে এমন পথ নিতে হবে যাতে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে জীবনহানি এড়ানো যায়।

ঘণ্টা দুই বৈঠকের পরে মেয়র জানান, জীবনহানির কথা মাথায় রেখেই পুরো বিষয়টা নিয়ে সূক্ষ্ম ভাবে বিচার করা হচ্ছে। নেওয়া হবে আইনি পরামর্শও। একই সঙ্গে বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে মামলা, শরিকি মামলাও বহু। রাজ্যের তরফে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানানো হবে সিভিল কোর্টে ওই সব মামলার দ্রুত নিস্পত্তির। গড়া হতে পারে ‘ডিল্যাপিডেটেড বিল্ডিং রিড্রেস ট্রাইব্যুনাল’। বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, ডিল্যাপিডেটেড বা জীর্ণ বাড়ি ও ডেঞ্জারাস বা বিপজ্জনক বাড়ি দুটি এক দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়। তাই বিপজ্জনক শব্দটির গুরুত্ব যেন কমে না যায়।

সাংবাদিকদের কাছে ওই বৈঠকের আহ্বায়ক তথা কলকাতার মেয়রের ঘোষণা, ‘‘বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে, হবে, এবং হবেই।’’ কবে, কত দ্রুত তা সম্ভব হবে তার কোনও নির্ঘণ্ট অবশ্য এ দিনই দিতে পারেননি তিনি।

তবে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মেয়র উদ্যোগী হয়েছেন এবং তা সফল করতে পুজোর পরই পুরোদমে প্রস্তুতি চলবে।’’

দিন কয়েক আগেই পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয় দু’জনের। পুলিশের মাধ্যমে বাড়িটি ভেঙে পড়ার প্রথম খবর পান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এর পরই তিনি মেয়রকে বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন। এবং সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরের বিশিষ্টজনেদের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দেন। তারই প্রেক্ষিতে এ দিনের বৈঠক। সেখানে মন্ত্রী ও মেয়র ছাড়াও সরকারি আমলা, পুলিশ, দমকল দফতর, আইনজ্ঞ, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, ক্রেডাই ও নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা, এমনকী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও হাজির ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত সকলেই নিজেদের মতামত জানান। ডাকা হয়নি বিরোধী দলের কোনও পুর প্রতিনিধিকে। এ নিয়ে বিরোধী মহলে ক্ষোভও ছড়িয়েছে।

প্রোমোটারের মাধ্যমে বিপজ্জনক বাড়ি নতুন করে তৈরির কথা আগেই ভেবেছে পুরসভা। সে ক্ষেত্রে বাড়ির যত অংশে ভাড়াটে আছে, বাড়িওয়ালা যাতে সেই পরিমাণ বাড়তি এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) পান, তারও সংস্থান থাকবে। দেখা হবে, প্রোমোটারের স্বার্থও যাতে বজায় থাকে। তবে সবই এখনও আলোচনা নির্ভর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mayor Buildings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE