Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ

বাইরে রঙের প্রলেপ, অনাদরে পোড়া নমুনা

ঝলসানো গন্ধ আর ততটা নেই। পু়ড়ে খাক হয়ে যাওয়া জানলা-দরজা বদলে নতুন করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া দেওয়ালে নতুন প্লাস্টার, রং। বাইরে থেকে বদলেছে সব। কিন্তু, অগ্নিকাণ্ডের ২০ দিন পার করেও বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সংগ্রহশালার নমুনাগুলি প্রাণ ফিরে পায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের আগে (বাঁ দিকে) ও পরে। — নিজস্ব চিত্র

অগ্নিকাণ্ডের আগে (বাঁ দিকে) ও পরে। — নিজস্ব চিত্র

মধুরিমা দত্ত
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৫
Share: Save:

ঝলসানো গন্ধ আর ততটা নেই। পু়ড়ে খাক হয়ে যাওয়া জানলা-দরজা বদলে নতুন করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া দেওয়ালে নতুন প্লাস্টার, রং। বাইরে থেকে বদলেছে সব। কিন্তু, অগ্নিকাণ্ডের ২০ দিন পার করেও বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সংগ্রহশালার নমুনাগুলি প্রাণ ফিরে পায়নি।

গত ২১ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে আগুন লেগে নষ্ট হয়ে যায় গবেষণাগার-সহ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত দেহ, ভ্রূণ, বিভিন্ন কোষের নমুনা। এর পরেই সায়েন্স কলেজকে অত্যাধুনিক অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থায় মুড়ে ফেলার জন্য শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফায়ার অডিট। কলেজ জুড়ে সাজ সাজ রব। কিন্তু সংগ্রহশালার যে সব নমুনার অর্ধেক প্রাণ তখনও অবশিষ্ট ছিল, সেগুলিকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই হয়নি বলে শিক্ষক-গবেষকদের মধ্যে থেকে অভিযোগ উঠেছে।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষিকার প্রশ্ন, ‘‘পুড়ে যাওয়ার এত দিন পরেও ‘দুষ্প্রাপ্য’ নমুনাগুলিকে বাঁচানোর ন্যূনতম চেষ্টা কেন হল না, বুঝতে পারছি না।’’ ওই শিক্ষিকাই দেখালেন পুড়ে যাওয়া কোষের অংশ, বিভিন্ন প্রাণীর দেহাবশেষ এখনও কী ভাবে পড়ে রয়েছে আবর্জনার মধ্যে। অগ্নিকাণ্ডের পরদিন যে সব অর্ধদগ্ধ নমুনা ছাত্র-গবেষকেরা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন, সেগুলির উপরে পড়ছে সিমেন্ট-বালি। এক গবেষকের আক্ষেপ, ‘‘কিছু কিছু নমুনার বেঁচে থাকার যেটুকু সুযোগ ছিল, তা-ও নষ্ট হয়ে গেল। ওগুলিকে দিয়ে আর কিছু হবে না।’’

প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপিকা এনা রায়চৌধুরীর আক্ষেপ, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাঘুরি করছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও। যে কারণে অবশিষ্ট প্রাণিদেহগুলোয় (যেগুলি আগুনে ততটা নষ্ট হয়নি) ছত্রাক সংক্রমণ ঘটছে। বহু সংরক্ষিত প্রাণিদেহের মধ্যে ঢুকে আছে কাচের টুকরোও।’’

এনাদেবীর অভিযোগ, ‘‘শ্লথ, প্লাটিপাস, প্যাঙ্গোলিনের দেহগুলো একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে কিছু প্রজাতির নমুনা রয়েছে যার ডিএনএ বার-কোডিং করলেই একমাত্র বোঝা যাবে, সেটির আগের অবস্থা কী ছিল এবং আদৌ তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না। ওই সব নমুনা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কিছু রাসায়নিক ব্যবহার প্রয়োজন। এই সবই আমার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দল করতে পারে। কিন্তু যে ভাবে আবর্জনার মধ্যে সব ফেলে রাখা হয়েছে, তাতে এখন আর কিছু করা সম্ভব নয়। এটাই দুঃখের।’’

এত দিন পেরিয়েও কেন সংগ্রহশালার নমুনাগুলি পুনরুদ্ধারের কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না?

ওই অধ্যাপিকার অভিযোগ নস্যাৎ করে প্রাণিবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান পার্থিব বসু বলেন, ‘‘আমরা কিছুই করছি না, এটা ভাবা ভুল। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। গত শুক্রবারই জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া থেকে দুই বিশেষজ্ঞ এসে সব কিছু দেখে গিয়েছেন। আমরা তো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সব কিছুতে তাড়াহুড়ো চলে না’’

কিন্তু বিভাগের অধ্যাপিকাই যে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন?

‘‘বিভাগের সিদ্ধান্ত নেয় বিভাগীয় কমিটি। ডিন অফ সায়েন্সের সঙ্গেও নিয়মিত কথা হচ্ছে। উষ্ণতা, আর্দ্রতায় নমুনা পচে যাওয়ার তো কিছুই দেখছি না। যেগুলি পচনশীল, তা ফর্মালিনে রেখে সংরক্ষণ করা হয়। যে যে সংগ্রহের ফর্মালিন কমে গিয়েছে, সেগুলি পুনরায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে’’— বলছেন পার্থিববাবু। সংগ্রহশালা নিয়েও একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ডিন অফ সায়েন্স আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা সবাই সংগ্রহশালা নিয়ে চিন্তিত। এমন তো নয়, যা নষ্ট হয়েছে অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা নিয়ে কাজ চালানো যাবে। সেটা সম্ভবও নয়।’’

কিন্তু বিভাগের মধ্যে থেকেই অসহযোগিতার অভিযোগ উঠছে কেন? ‘‘এনা প্রথম থেকে বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই উনি একটু বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই ক্ষতি আমাদের সবার। কেউ গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে এই অভিযোগ সত্যি নয়।’’—মন্তব্য আশুতোষবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE