Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রক্তের সন্ধানে যাত্রী, দিলেন ক্যাব-চালক

রাতের কলকাতায় কিছু দিন আগেই অ্যাপ-ক্যাবের এক চালক এক কিশোরীকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় ধরা পড়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০২
Share: Save:

রাতের কলকাতায় কিছু দিন আগেই অ্যাপ-ক্যাবের এক চালক এক কিশোরীকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় ধরা পড়েছিল। এ বার রাতের শহরই দেখল অ্যাপ-ক্যাব চালকের এক অন্য রূপ। যে চালক উপযাচক হয়ে রক্ত দিলেন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত, মুমূর্ষু এক যুবককে। কিছু দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পরে ওই যুবক এখন বাড়ি ফিরে এসেছেন।

ঘটনাটি গত ১৪ অক্টোবর রাতের। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন এক যুবক। তাঁর অসুস্থ ভাইয়ের জন্য রক্ত জোগাড় করতে। ভাইয়ের বয়স ২১ বছর। তখনই রক্ত লাগবে। না হলে হয়তো ওই যুবকের ভাই আর বাঁচবেন না। কারণ প্লেটলেট তখন নেমে গিয়েছে ১৫ হাজারেরও নীচে। কলকাতার বেশ কয়েকটি ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েও প্রয়োজনীয় রক্তের খোঁজ করছিলেন তিনি। চলছিল রক্তদাতার খোঁজও। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই হচ্ছিল না। অ্যাপ-ক্যাব চালক অপু সাউ ত্রাতার মতো অবতীর্ণ হলেন ওই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে।

অ্যাপ-ক্যাব পরিচালন সংস্থাটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, অপু যে গাড়ির চালক, তাতে করেই রোগীর দাদা বিবেক শরাফ ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ব্লাড ব্যাঙ্ক ও হাসপাতালে। চালকের পিছনের আসনে বিবেক ও তাঁর কাকা-কাকিমাকে ভেঙে পড়তে দেখে গাড়ি চালাতে চালাতে জানতে চান, কী হয়েছে? তাঁরা বলেন, বিবেকের ভাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটিতে ভর্তি। তাঁর প্লেটলেট হু হু করে কমছে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছে।

অ্যাপ-ক্যাব চালক অপু এটাও জানতে পারেন, ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত ও রক্তদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। কাকতালীয় ভাবে, অপুর রক্ত ওই গ্রুপের। তখন অপু বলেন, ‘‘আপনারা চাইলে আমি রক্ত দিতে পারি।’’ অপুকে নিয়ে বিবেকরা সোজা পৌঁছে যান পদ্মপুকুরের কাছে ব্লাড ব্যাঙ্কে।

বুধবার ফোনে পাওয়া গেল অপুকে। জানালেন, বেলগাছিয়ায় বাবা-মা-ভাই-বোনের সংসার। নিজে এখনও বিয়ে করেননি ৩৩ বছরের অপু। আগে মালবাহী গাড়ি চালাতেন, সম্প্রতি অ্যাপ-ক্যাব চালাতে শুরু করেছেন।

১৪ অক্টোবর রাতে শ্যামবাজার মোড়ে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অপু। তাঁর কথায়, ‘‘রাত প্রায় সাড়ে বারোটা হবে তখন। আর জি কর হাসপাতাল থেকে ফোন আসে এক যুবকের। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে শ্যামবাজারের একটি নার্সিংহোমে ছেড়ে দিই।’’

তার পরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে অপু দেখেন, ওই যুবকই আবার তাঁর গাড়ি বুক করেছেন। তিনিই সেই বিবেক শরাফ।
তিনি গাড়িতে উঠে প্রথমে পদ্মপুকুরের ব্লাড ব্যাঙ্কে যেতে চান। মাঝপথে গাড়ি ঘুরিয়ে মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটি যেতে বলেন। তখনই অপু শুনতে পান, পিছনের আসনে বসে বিবেক ওই রাতে মরিয়া ফোন করে করে রক্তের খোঁজ করছেন। মারোয়াড়ি হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে তাঁর কাকা ও কাকিমা গাড়িতে ওঠেন। আর তখনই নিজে রক্ত দেওয়ার কথা বলেন অপু।

শরাফ পরিবার অবশ্য এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। অপু বলেন, ‘‘রক্ত দেওয়ার পরে আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানান তাঁরা। আমি শুধু বলেছিলাম, ছেলেটা কেমন থাকবে একটু জানাবেন।’’

সেই ফোনটা অবশ্য পাঁচ দিন পরেও অপু পাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cab driver dengue patient blood donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE