ছবি: প্রতীকী
বাল্যবিবাহ রোধে রয়েছে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। রয়েছে ‘সবুজশ্রী’, ‘সবুজ সাথী’ থেকে শুরু করে ‘শিক্ষাশ্রী’র মতো বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ। আর এই সব প্রকল্পের সুফল থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়, তা দেখার জন্য গ্রাম থেকে শুরু করে ব্লক স্তর, এমনকী জেলা স্তরেও রয়েছে একটি করে কমিটি। তাদের প্রধান লক্ষ্য, মেয়েদের বাল্যবিবাহ ও স্কুল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা ঠেকানো।
তার পরেও এই সব প্রকল্প কি সবার কাছে পৌঁছচ্ছে? দমদম ক্যান্টনমেন্টের একটি ঘটনা তুলে দিয়েছে সেই প্রশ্ন। আঙুল উঠেছে কমিটিগুলির নজরদারি নিয়েও।
গত রবিবার দমদম ক্যান্টনমেন্টের শিবনগরে ছেলের বিয়ে উপলক্ষে নতুন বৌমাকে নিয়ে পাড়ায় মিষ্টি বিলি করতে বেরিয়েছিলেন শাশুড়ি। কিন্তু নতুন বৌয়ের চেহারা দেখেই কয়েক জনের সন্দেহ হয়। সে যে কোনওমতেই সাবালিকা নয়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন তাঁরা। ফলে শাশুড়িকে চেপে ধরেন সবাই। শাশুড়ি স্বীকার করে নেন যে, মেয়ের বয়স কম। মাত্র ১১! বর্ধমানের উদয়পল্লির একটি প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সে।
এর পরেই স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে খবর যায় জেলার চাইল্ড লাইনের কাছে। চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা ওই বাড়িতে পৌঁছে সত্যতা যাচাই করে দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু মেয়েটি বর্ধমানের। তাই দমদম এলাকায় বিয়ে হলেও পুলিশ কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়।
শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুলিশের ভয়ে মেয়েটিকে পরের দিনই বর্ধমানের বাড়িতে দিয়ে আসেন এবং মুচলেকা দেন যে, এই বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। তাই তাঁরা মেয়েকে ফেরত দিয়ে গেলেন। আঠেরো বছর বয়সের পরে মেয়ে চাইলে তাঁরা তাকে নিয়ে যাবেন। বর্ধমানের যে গ্রামে মেয়েটির বাড়ি, সেখান থেকে বর্ধমান শহরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, শহরতলিতেই যদি এমন অবস্থা হয়, তা হলে প্রত্যন্ত গ্রামে কী হাল?
আরও পড়ুন: প্রাক্তন অধিকর্তা রঞ্জিত সিংহের বিরুদ্ধে এফআইআর সিবিআইয়ের
মেয়েটির পরিবার সূত্রে খবর, চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে স্কুল ছাড়িয়েই বিয়ে দেওয়া হয়। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ফলে মেয়েদের পড়াশোনার থেকে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই মা-বাবা বেশি চিন্তিত ছিলেন। তার উপরে বিনা পয়সায় ছেলের বা়ড়ি এ বিয়েতে রাজি হয়েছিল। তাই তাঁরা ফেরাতে পারেননি।
আর এই জায়গাতেই প্রশ্ন উঠেছে সরকারি প্রকল্প নিয়ে। সরকারি ভাবে এত সুরক্ষার পরেও কেন মেয়েদের বিয়ের উপরেই জোর দিচ্ছেন পরিবারের লোকজন? শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী থেকে একাধিক সামাজিক সুরক্ষার ফল কি তা হলে সব স্তরে পৌঁছয়নি? না কি ব্লক বা গ্রাম স্তরের শিশু সুরক্ষা কমিটিগুলিই স্থানীয় নাবালিকাদের খবর রাখে না? প্রশ্ন উঠেছে জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক থেকে শুরু করে শিশু উন্নয়ন আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, ‘‘এ ধরনের ঘটনা কখনওই ঘটা উচিত নয়। আর তার জন্য শিশু সুরক্ষা কমিটিগুলি সব স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে।’’ তবে পরিবারগুলিও যদি তাদের অসুবিধার কথা পঞ্চায়েত কিংবা ব্লকে গিয়ে একটু জানায়, তা হলে সরকার সব রকমের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy