প্রতীকী ছবি।
মাধ্যমিকের মেধা-তালিকার প্রথম সারিতে কলকাতাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় জেলা। কিন্তু প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে শিশুদের শিক্ষার সচেতনতায় কলকাতা এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। পিছিয়ে পড়ছে জেলা। সম্প্রতি বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম-এর এক সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। আগামী জুলাইয়ে রাজ্য সরকারকে এই সমীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হবে।
অ্যাসোচ্যামের স্কুল এডুকেশন কাউন্সিলের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান তমাল মুখোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের বহু জায়গায় সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, শিশুদের প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার দিক থেকে কলকাতা অনেকটাই এগিয়ে। অন্তত ১০০ জনের মধ্যে ৮৫ জন অভিভাবকই বিষয়টি নিয়ে সচেতন। দেড় বছর বয়স থেকে ছ’বছর পর্যন্ত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সে সময়ে ঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
মাধ্যমিকের প্রথম দশে বাঁকুড়ার পরীক্ষার্থীরাই অধিক সংখ্যায় থাকে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেই জেলাতেও প্রাক্-প্রাথমিক নিয়ে সচেতনতা তলানিতে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি ১০০ জন অভিভাবকের মধ্যে কলকাতায় ৮৫, পুরুলিয়ায় ১১, বাঁকুড়ায় ১০, আলিপুরদুয়ারে ১২ ও জলপাইগুড়িতে ১০ জন শিশুদের প্রি-স্কুলে পাঠান। এমনকী, হাওড়া জেলার আন্দুল পর্যন্ত এই সচেতনতা থাকলেও তার পর থেকে শিশুদের প্রি-স্কুলে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমতে থাকে। মেদিনীপুরেও একই ভাবে এই প্রবণতা কম।
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১১ সাল থেকেই স্কুল স্তরে কিছু নিয়মের পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলেই পৃথক ভাবে প্রাক্-প্রাথমিক বিভাগ খোলা হয়েছে। পাঁচ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের ওই স্তরে ভর্তি করা হয়। তার জন্য পৃথক পাঠ্যক্রমও তৈরি হয়েছে। তার এক বছর পরে প্রথম শ্রেণিতে শিশুদের ভর্তি করাতে পারেন অভিভাবকেরা। কিন্তু জেলার বহু অভিভাবকই প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের বদলে সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে চান। এর ফলে ওই বয়সে মস্তিষ্কের সার্বিক বিকাশ থেকে শিশুরা বঞ্চিত থেকে যায় বলে মত অ্যাসোচ্যামের। এই প্রবণতা চলতে থাকলে কয়েক দশক পর থেকে রাজ্যের বহু জেলার শিশুদের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে বলেও মত এই বণিকসভার।
এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। প্রথমত, কলকাতা শহরে কর্মরত মহিলাদের সংখ্যা বেশি। একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যা কম। শহরে বাবা-মা দু’জনেই কর্মক্ষেত্রে চলে যাওয়ার ফলে শিশুদের দেখাশোনার জন্যই তাদের বিভিন্ন প্রি-স্কুলে ভর্তি করেন অভিভাবকেরা। তবে তার পিছনে সচেতনতার প্রভাবও কাজ করে। কিন্তু জেলার বিভিন্ন এলাকায় মূলত কুটির শিল্পে নিযুক্ত থাকেন অধিকাংশ মহিলা। সে ক্ষেত্রে শিশুদের নিজেদের সঙ্গেই রাখতে চান মহিলারা। ‘‘কোনও কোনও জেলায় প্রি-স্কুল ধারণাটাই নেই,’’ বললেন তমালবাবু। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার অভিভাবকের সচেতনতা থাকলেও পরিবারের অন্যদের পরামর্শে তাঁরা সন্তানদের স্কুলে পাঠান না।
তমালবাবু জানান, আগামী মাসে রাজ্য সরকারকে এই সমীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হবে। সরকার যাতে ব্যবস্থা নেয়, সেই অনুরোধও করা হবে। এমনকী, প্রাক্-প্রাথমিকের জন্য পৃথক বোর্ড তৈরির দাবিও জানানো হবে। পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘২০১১ সালে রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে অভিভাবকদের একাংশের মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক ধারণাটি স্পষ্ট হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পৃথক পাঠ্যক্রমও তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়বে। সুফলও মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy