তুলকালাম: সংঘর্ষ চলার সময়ে প্রকাশ্যে লাঠিসোটা নিয়ে হল্লা রাস্তায়। শুক্রবার, জোড়াবাগানে। —নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে, তৃণমূলের ডাকা স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তী। অন্য দিকে, বিজেপি-র মোটরসাইকেল মিছিল। যার জেরে শুক্রবার ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল কলকাতায়। রাজনৈতিক রেষারেষি রাস্তায় নেমে আসায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রবল দুর্ভোগের শিকার হলেন সাধারণ মানুষ। প্রথমে উত্তর কলকাতার জোড়াবাগান এলাকায় বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তার পরে বাড়ি-গাড়ি-দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে পড়ে যাওয়ায় জখম হন কয়েক জন পথচারী। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠল শীতের শহর।
এ দিন রাজ্যে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তী পালনের পরিকল্পনা করেছিল তৃণমূল। পাশাপাশি, রাজ্য জুড়ে ছিল বিজেপি-র মোটরবাইক মিছিল ‘সঙ্কল্প অভিযান।’ পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইক মিছিলের জন্য জোড়াবাগানের একটি ধর্মশালায় বৃহস্পতিবার থেকেই জড়ো হয়েছিলেন বিজেপি-র বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক। তৃণমূলের অভিযোগ, এ দিন সকালে ওই এলাকায় বিজেপি সমর্থকেরাই প্রথমে গোলমাল শুরু করেন। সেখানে এলাকার মানুষ ও তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় দোকানপাট। বিজেপি-র পাল্টা অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই হঠাৎ তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান তৃণমূল সমর্থকেরা।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে এ দিন বাঁশ ও চেয়ার দিয়ে মারপিট শুরু হয়। পতাকা খুলে সেই লাঠি দিয়ে চলে একে অন্যকে পেটানো। পাশাপাশি চলে একের পর এক দোকান, গাড়ি ভাঙচুর। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। স্কুলে, পাড়ার অনুষ্ঠানে মায়েদের হাত ধরে সেজেগুজে যাচ্ছিল কচিকাঁচারা। ভয়ে তারা দৌড়ে পালাতে থাকে। হামলার জেরে ঘণ্টা তিনেক অবরুদ্ধ হয়ে থাকে জোড়াবাগান, গিরিশ পার্ক, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা।
পুলিশ জানায়, দুই দলের গণ্ডগোলের জেরে উল্টে ফেলা হয় রাস্তার ধারে থাকা বড় বড় গাড়িও। ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন আশপাশের দোকানিরা। ইট-লাঠির ঘায়ে মাথা ফেটে যায় কয়েক জনের। হাসপাতাল থেকে সদ্য ছাড়া পেয়েছেন অশোক সোনকার। এ দিন বাড়ির সামনে বসে ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে প্রকাশ বলেন, ‘‘হঠাৎ ১০-১২ জন ছেলে লাটিসোটা নিয়ে এসে বাড়ির সামনে গাড়ি ভাঙতে থাকে। বাবা বারণ করলে তাঁকেও ধরে মারধর করে ওরা।’’
খবর পেয়ে পুলিশ নিয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন হাইকোর্ট নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক রবীন্দ্রনাথ দে। মহাজাতি সদনের সামনে তাঁর গাড়িতেও হামলা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় কাচ। তবে এই ঘটনার দায় বিজেপি-র উপরেই চাপিয়েছেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক শশী পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘এমন শুভ দিনে যখন রাজ্য জুড়ে বিবেক-জয়ন্তী পালিত হচ্ছে, তখন লাঠিসোটা নিয়ে অশান্তি ছড়িয়েছে বিজেপি-ই।’’ বিজেপি-র স্থানীয় কাউন্সিলর মিনাদেবী পুরোহিতের পাল্টা দাবি, ‘‘অশান্তি ওরাই ছড়িয়েছে। পুলিশের সামনেই হামলা করেছে। আমাকেও মেরেছে।’’
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রুজু করা হয়েছে তিনটি মামলা।
দুই দলের অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্যে এ দিন হামলায় জখম এক পথচারী, রাজেশ অগ্রবালের বক্তব্য, ‘‘জীবে প্রেম করার কথা যিনি বলেছেন, সেই স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবসে যারা এই ঘটনা ঘটাল, তাদের দেশপ্রেম সত্যিই এ দিন দেখার মতো ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy