Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মানবিক পরশে আরোগ্যের পথে বৃদ্ধ

কয়েক দিন ধরেই বাস স্ট্যান্ডে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ। বয়স সত্তরের কোঠায়। চার পাশে ছড়ানো নোংরা কাপড়, ছেঁড়া তোশক, চাদর। বাঁ পায়ে গভীর ক্ষত। ঘা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

বিশ্বনাথ দাস।

বিশ্বনাথ দাস।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ১৩:২৯
Share: Save:

মানবিক মুখ দেখাল শহর। সাধারণ মানুষ এবং পুলিশের যৌথ সহযোগিতায় চিকিৎসা পেলেন এক গৃহহীন বৃদ্ধ।

কয়েক দিন ধরেই বাস স্ট্যান্ডে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ। বয়স সত্তরের কোঠায়। চার পাশে ছড়ানো নোংরা কাপড়, ছেঁড়া তোশক, চাদর। বাঁ পায়ে গভীর ক্ষত। ঘা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ভনভন করছে মাছি। কেউ দিয়ে গিয়েছেন দু’-পাঁচ টাকা, কেউ বা কিনে দিয়েছেন খাবার। ওই পর্যন্তই। কেউই দু’পা এগিয়ে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেননি পায়ের ঘায়ে চলাফেরার শক্তি হারানো বৃদ্ধকে। জানার চেষ্টাও করেননি, কে তিনি, কোথা থেকে এসেছেন, কেনই বা পথের ধারে পড়ে রয়েছেন।

কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারেননি পথচলতি দুই যুবক। পেশায় চিত্রশিল্পী, ৩৭ বছরের দুর্গানন্দ জানা যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন বন্ধুস্থানীয় নীলমণি রাহার সঙ্গে দেখা করতে। বৃদ্ধকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কথা বলেন তাঁরা। দুর্গানন্দ জানান, কথায় কথায় জানা যায়, বর্ধমানের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাস গৃহহীন। বহু বছর ধরে কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কাজ করেছেন। পেশায় রাঁধুনি। সম্ভবত নেশাও। কারণ, বৃদ্ধের সঙ্গে থাকা ছেঁড়া-ফাটা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে ছিল হাতা-খুন্তির লম্বা হাতল। আর তিনি বিড়বিড় করছিলেন, ‘‘পঞ্জাবি রান্নায় আমায় কেউ হারাতে পারবে না। যে কোনও বাঙালি রান্নায় আমি সেরা স্বাদ আনতে পারি।’’

ওই বৃদ্ধের দাবি, বর্ধমান থেকে চলে এসে কয়েক বছর আগে বাইপাসের ধারে একটি ছোট খাবারের দোকান খুলেছিলেন তিনি। কিন্তু রাস্তা চওড়া করার সময়ে ভেঙে দেওয়া হয় দোকান। তার পরে কখনও হোটেলে, কখনও কারও বাড়িতে চেয়েচিন্তে কাজ করেছেন। বাদ সাধে পায়ের ঘা। মাস কয়েক আগে পায়ে ঘা হওয়ায় কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ভাড়া বাকি পড়ে বাড়ির। তাই নামতে হয় পথে। শেষ কয়েক মাস ধরে ব্যাগ ভর্তি রান্নার সরঞ্জাম আর পায়ের যন্ত্রণা নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন ওই বৃদ্ধ।

দুর্গানন্দ বলেন, ‘‘কথা বলেই আমার মনে হয়েছিল, চিকিৎসা করে সুস্থ হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন উনি।’’ দুর্গানন্দের সঙ্গেই রবিবার রাতে এগিয়ে এসেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের গবেষক কমলিকা চক্রবর্তী। কমলিকা জানান, কী করা যায়, তা বুঝতে না পেরে ১০০ নম্বরে ডায়াল করে পুলিশে খবর দেন তাঁরা। স্থানীয় যাদবপুর থানা থেকে সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছয় পুলিশ। ‘‘উপস্থিত পুলিশকর্তা জানান, তাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। আমরা রাতে বাড়ি চলে আসি,’’ বললেন কমলিকা। তাঁর দাবি, তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, পুলিশ ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করবে। কিন্তু মঙ্গলবার ফের ওই বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে তাঁরা দেখেন, একই জায়গায় রয়েছেন বৃদ্ধ। পায়ে অবশ্য ব্যান্ডেজ করা।

যাদবপুর থানার এক কর্তা জানান, তাঁরা খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছে সবটা দেখেন। পরে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে ওই বৃদ্ধকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান। পায়ের ক্ষতে ড্রেসিং করানো হয়। কিন্তু বেড না-মেলায় তাঁরা বাধ্য হয়ে বাস স্ট্যান্ডেই ফিরিয়ে আনেন বৃদ্ধকে। সোমবার আরও এক বার ড্রেসিংয়ের ব্যবস্থা করে পুলিশ। পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে বৃদ্ধকে নিয়ে গিয়ে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE