Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতি কমাতে গতি কমানোর নয়া কৌশল

পুলিশ জানায়, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে এমন ফ্রি-টাইম নেই। কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরের এ নিয়ে নিত্য ঝামেলা চলছে গাড়ির মালিক ও পার্কিং কর্মীদের। দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে কাউকে তুলতে আসার সময়ে কৈখালির কাছাকাছি অপেক্ষা করে গাড়ি।

বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে গাড়ির লাইন। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে গাড়ির লাইন। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৭:১০
Share: Save:

কলকাতা বিমানবন্দরে পার্কিং ফি দেওয়ার ক্ষেত্রে ১০ মিনিটের ‘ফ্রি-টাইম’ রয়েছে। অর্থাৎ কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকে কাউকে নামিয়ে বা তুলে ১০ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে গেলে টাকা দিতে হয় না। কিন্তু, ১০ মিনিট পেরিয়ে গেলেই ১০০ টাকা দিতে হয়। সম্প্রতি পার্কিং ফি নেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা অভিযোগ করেছে, এই ফ্রি-টাইমের গেরোয় তাদের বিপুল টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

কী ভাবে? ‘মহেশ সোনি’ নামে ওই সংস্থার কর্ণধার বাবুলাল যাদবের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী যে টাকা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দিতে হচ্ছে, পার্কিং থেকে তার অর্ধেকও উঠছে না। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় প্রতি মাসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দিতে হয় ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। সেখানে মেরেকেটে ৬০ লক্ষ টাকা পাওয়া যাচ্ছে পার্কিং থেকে। সে কারণে সম্প্রতি পার্কিং নিয়ে যে টেন্ডার হয়েছে, সেখানেও অংশ নেননি বাবুলাল। তাঁর যুক্তি, সমস্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ভিতর দিয়ে গেলে সমস্যা হতো না। কিন্তু, মাত্র ১০ মিনিটের এই হিসেবের জন্য বহু টাকা তাদের হাতছাড়া হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে এমন ফ্রি-টাইম নেই। কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরের এ নিয়ে নিত্য ঝামেলা চলছে গাড়ির মালিক ও পার্কিং কর্মীদের। দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে কাউকে তুলতে আসার সময়ে কৈখালির কাছাকাছি অপেক্ষা করে গাড়ি। যাত্রী ব্যাগপত্র নিয়ে টার্মিনাল থেকে বেরোনোর মুখে ফোন করে দেন। গাড়ি কৈখালি থেকে রওনা হয়ে বিমানবন্দরে ঢুকে যাত্রীকে তুলে ১০ মিনিট ছাড়ের সুবিধা নিয়ে বেরিয়ে যায়।

বাবুলাল যখন দেখেন এ কারণে তাঁর বেশ কিছু টাকা লোকসান হচ্ছে, তিনিও পাল্টা কৌশল শুরু করেন। অভিযোগ, বেরোনোর সময়ে গতি শ্লথ করে দেওয়া হচ্ছে গাড়ির। এর ফলে যাঁরা কৈখালিতে অপেক্ষার পরেও বিমানবন্দরে ঢুকছেন, তাঁদের বেরোতে বেরোতে ১০ মিনিট পেরিয়ে যাচ্ছে। এমনকী যাঁরা যাত্রীকে বিমানবন্দরে নামিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরাও ওই লাইনে পড়ে ১০০ টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

সম্প্রতি পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত ওই সংস্থার নামে অভিযোগ করেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের কাছে। সুভাষবাবুর অভিযোগ, বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর মুখে কৃত্রিম ভাবে যানজট সৃষ্টি করে ওই ১০ মিনিটের সময় পার করে দিচ্ছেন মহেশ সোনি-র কর্মীরা। মেয়েকে বিমানবন্দর থেকে আনতে এসে তাঁর এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে।

দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের প্রতিনিধিরা একযোগে অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের বিমানবন্দরে যাত্রীকে নামিয়ে বা তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা দিতে হয় না। সেখানে ১০-১৫ মিনিটের কোনও ‘ফ্রি-টাইম’ও নেই। পুলিশ থাকে। কোনও গাড়িকেই ১-২ মিনিটের বেশি দাঁড়াতে দেওয়া হয় না।

কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত জানিয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর গেটের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫-৬টি করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ১০ মিনিটের ফ্রি-টাইম কেন তুলে দেওয়া হচ্ছে না? কর্তৃপক্ষের কর্তাদের দাবি, ওই ব্যবস্থা তুলে দিলে যাত্রীকে নামাতে বা তুলতে এসে টার্মিনালের সামনে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে। তাদের সরানো যাবে না। তাই, ১০ মিনিটের মধ্যে না সরে গেলে ১০০ টাকা দেওয়ার এই ব্যবস্থা চালু থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE