Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জয়পুরিয়ায় হাজিরার নয়া পদ্ধতি, শুরু বিতর্ক

জানুয়ারি মাসে, প্রয়োজনীয় উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও সান্ধ্য বিভাগের ৩২ জনকে ১০ শতাংশ ছাড়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:০০
Share: Save:

প্রয়োজনীয় হাজিরা না থাকলেও পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জানুয়ারিতেই শিরোনামে এসেছিল উত্তর কলকাতার শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ। তা নিয়ে চার শিক্ষকের পদত্যাগ ঘিরে শোরগোল পড়েছিল শিক্ষামহলে। এ বার সেই কলেজেই চালু হতে চলেছে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, এতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের পাশাপাশি পড়ুয়াদের উপস্থিতির হারে স্বচ্ছতা আসবে। যদিও এ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।

জানুয়ারি মাসে, প্রয়োজনীয় উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও সান্ধ্য বিভাগের ৩২ জনকে ১০ শতাংশ ছাড়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়। অধ্যক্ষের যুক্তি ছিল, গোলমালের কারণে সান্ধ্য বিভাগের ওই পড়ুয়ারা কলেজে আসতে পারেননি। তাঁদের ৫০ শতাংশ উপস্থিতি রয়েছে। তাই ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হোক। যদিও এর বিরোধিতায় ওই কলেজের দু’জন শিফট ইনচার্জ এবং দু’জন বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগের পরে সিদ্ধান্ত বদলান অধ্যক্ষ। জানানো হয়, ৬০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে কাউকেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।

এই প্রেক্ষিতেই পরিচালন সমিতির বৈঠকে কলেজে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, দু’মাসের মধ্যে কলেজে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাতঃ, দিবা এবং সান্ধ্য বিভাগের জন্য থাকবে একটি বায়োমেট্রিক যন্ত্র। রেজিস্টারে হাজিরা ব্যবস্থা তুলে দিয়ে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অশিক্ষক কর্মচারীদের পাশাপাশি পড়ুয়াদেরও উপস্থিতির পরিসংখ্যান ধরা থাকবে যন্ত্রে। বর্তমানে প্রতি পিরিয়ডে পড়ুয়াদের হাজিরা নেন শিক্ষকেরা। বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু হলে তা-ও তুলে দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। দিনের শুরুতে কলেজ গেটে লাগানো যন্ত্রে আঙুল ছোঁয়ালেই কাজ মিটে যাবে।

এখানেই প্রশ্ন উঠছে এই ব্যবস্থা নিয়ে। ওই কলেজেরই শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, কলেজ গেটেই যে হেতু হাজিরা দেওয়ার পাট চুকে যাচ্ছে, ফলে ক্লাসে না গিয়ে অনেক পড়ুয়াই কলেজের ক্যান্টিন, কমনরুমে সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে যেতে পারেন। এতে নথিতে স্বচ্ছতা এলেও পড়ুয়াদের ক্লাসে না আসা অব্যাহত থাকবে। পড়ুয়াদের দাবি, তাঁরা এলেও শিক্ষকেরা অনেক সময়ে ক্লাসে আসেন না। এলেও শুধু হাজিরা নিয়ে চলে যান। তাঁদের প্রশ্ন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হলে যেহেতু ক্লাসে আর হাজিরা নিতে হবে না, সে ক্ষেত্রে শিক্ষকেরাও আর ক্লাসে আসবেন না!

অনেকে আবার বলছেন পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের দায় এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়। যদিও অশোকবাবু বলেন, ‘‘এতে স্বচ্ছতা আসবে। বছরের শেষে গোলমালও হবে না। ভাল উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত। পুরনো গোলমাল এড়ানো যাবে।’’

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশও এই নয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের দাবি, ‘ওয়ার্ক লিভ’ বলে একটি বিষয় রয়েছে তাঁদের। পেশাগত কাজেই কলেজ চলাকালীন তাঁদের অনেককে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে সকাল ১০টায় কলেজে ঢুকে বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বেরিয়ে গেলে সমস্যা হবে না তো? এ ব্যাপারে অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘কয়েকটি বিষয় দেখে নিতে হবে। তবে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE