Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লোকাভাবে বন্ধের মুখে সুপার স্পেশালিটির অস্ত্রোপচারও

হাসপাতালে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি মূলত নির্ভর করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) ও কার্ডিও অ্যানাস্থেটিস্টদের উপরে। অথচ গত কয়েক বছরে শহরের সরকারি হাসপাতালগুলিতে এই দুই পদে লোকের সংখ্যা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

হাসপাতালে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি মূলত নির্ভর করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) ও কার্ডিও অ্যানাস্থেটিস্টদের উপরে। অথচ গত কয়েক বছরে শহরের সরকারি হাসপাতালগুলিতে এই দুই পদে লোকের সংখ্যা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সপ্তাহখানেক আগে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক-ভাস্কুলার সার্জারি (সিটিভিএস) বিভাগের চিকিৎসকেরা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন, অবিলম্বে পিজিটি-র সংখ্যা না বাড়লে ও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রেফার কেস না কমলে ‘করোনারি আর্টারি বাইপাস’ অস্ত্রোপচার বন্ধই করে দিতে হবে। এই দাবি নিয়ে দ্বিমত নেই কর্তৃপক্ষেরও।

বিষয়টি নিয়ে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ আগেও স্বাস্থ্য ভবনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর তখন সব মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির প্রধানদের নিয়ে বৈঠকও করে। কিন্তু পিজিটি এবং কার্ডিও অ্যানাস্থেটিস্ট কী ভাবে বাড়ানো যেতে পারে, সেই পথ বাতলাতে পারেননি তাঁরা।

এসএসকেএম হাসপাতালের এই চিঠির কথা জানাজানি হতে অন্য মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের ডাক্তারেরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদেরও আশঙ্কা, লোকের অভাবে অস্ত্রোপচার বন্ধই না করে দিতে হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের প্রধান প্লাবন মুখোপাধ্যায় জানান, ৩ বছর কোনও পিজিটি পাননি তাঁরা। সারা দিন অস্ত্রোপচার করার পরে সিনিয়র ডাক্তারদের নাইট ডিউটিও করতে হচ্ছে! আরজিকরের কার্ডিওথোরাসিকের প্রধান সুব্রত দে-ও বলছেন, ‘‘৬ জনের জায়গায় ১ জন পিজিটি পেয়েছি।’’

এসএসকেএমের কার্ডিওথোরাসিকের বিভাগীয় প্রধান শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এ রকম চাপে দিনের পর দিন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাইপাস বা ওপেন হার্ট সার্জারি তো যেনতেন প্রকারেণ করা যায় না। কাজের মান ধাক্কা খাচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা ফ্রি, তাই বেসরকারি জায়গার অধিকাংশ কেস আসছে। অথচ বিভাগে আমি একমাত্র প্রফেসর ! এ ছাড়া ৪ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ১ জন আরএমও এবং ৪ জন পিজিটি আছে। থাকার কথা ১৮ জন পিজিটি। অ্যানাস্থেটিস্টও হাতে গোনা। এমন চললে থাকলে অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দিতে হবে।’’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে গোটা রাজ্যে কার্ডিওথোরাসিক-ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে পিজিটি পাওয়া গিয়েছে ৩ জন! এসএসকেএমের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও, ‘‘খুবই জটিল পরিস্থিতি। স্নাতকোত্তরে কেউ কার্ডিওথোরাসিক পড়তেই আসছে
না। এ দিকে এত রোগী আর এত ওয়েটিং লিস্ট!’’

মঞ্জুদেবীই জানালেন, বাইপাস ও ওপেন হার্ট সার্জারি ছাড়াও কার্ডিওথোরাসিকে ডায়ালিসিসের রোগীদের ফিশ্চুলা তৈরি করা (শিরা-ধমনীকে সাময়িক ভাবে জুড়ে দেওয়া), ভাস্কুলার সার্জারি, ফুসফুসের অস্ত্রোপচার, কনজেনিটাল ডিজ-অর্ডার, ইমার্জেন্সি কেস, শিশুসাথী প্রকল্পের অস্ত্রোপচার করতে হয়। সপ্তাহে বাইপাস আর ওপেন হার্ট সার্জারিই হয় ১৫-১৬টি। তিনি মেনে নিয়েছেন, এখন যা লোকবল, তাতে এ ভাবে চালানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ভবনের একাধিক কর্তার মতে, কার্ডিওথোরাসিকের পরিশ্রম এত বেশি যে নতুন প্রজন্ম বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া, সরকারি পিজিটি-রা মাসে মাত্র ৩০-৩২ হাজার টাকা পান। জেলায় পোস্টিং হয়। সেই তুলনায় বেসরকারি জায়গায় সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করেই মেলে মাসে ৬০-৬৫ হাজার। তাই সরকারি হাসপাতাল তাঁরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। নবনিযুক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান, বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক ডাকা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Hospital Coronary Artery Bypass Operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE