Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বরাহনগরে ফ্ল্যাটে ডাকাতি, ধরন দেখে ধন্দে পুলিশ

ডানলপে বেঁধে রাখা রয়েছে বাড়ির কর্তাকে। ছ’বছরের ছেলেকে তুলে নেওয়া হবে স্কুল থেকে। তাই কথা না বাড়িয়ে আলমারির চাবি দিয়ে দিলেই ভাল! এই হুমকি দিয়েই আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে চার দুষ্কৃতী লুঠপাঠ চালিয়েছে বলে অভিযোগ বরাহনগরের এক অভিজাত আবাসনের ব্যবসায়ী পরিবারের।

ঘটনার পরে পরিবারের সদস্যরা। — নিজস্ব চিত্র।

ঘটনার পরে পরিবারের সদস্যরা। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

ডানলপে বেঁধে রাখা রয়েছে বাড়ির কর্তাকে। ছ’বছরের ছেলেকে তুলে নেওয়া হবে স্কুল থেকে। তাই কথা না বাড়িয়ে আলমারির চাবি দিয়ে দিলেই ভাল! এই হুমকি দিয়েই আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে চার দুষ্কৃতী লুঠপাঠ চালিয়েছে বলে অভিযোগ বরাহনগরের এক অভিজাত আবাসনের ব্যবসায়ী পরিবারের। সোমবার দিনের বেলা বরাহনগরের বিটি রোড সংলগ্ন ‘মালঞ্চ’ আবাসনে এই ডাকাতির ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে। যদিও ডাকাতির ধরন দেখে নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। পরিচিত কেউ এই ঘটনায় যুক্ত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। দুষ্কৃতীরা ওই ফ্ল্যাটে এসি সারানোর নাম করে আবাসনে ঢুকেছিল বলে অভিযোগ।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘সব দেখে মনে হচ্ছে, ঘটনায় পরিবারের পরিচিত কেউ জড়িত। কিছু সূত্র মিলেছে। গোয়েন্দা প্রধান নিজে বিষয়টি দেখছেন।’’

বরাহনগরের অনন্যা সিনেমা স্টপ এলাকায় বিটি রোড থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ওই আবাসনের মোট আটটি ব্লকে থাকে প্রায় ১৯০টি পরিবার। সেখানেই ‘সি’ ব্লকের পাঁচতলায় স্ত্রী রুমা গঙ্গোপাধ্যায়, ১৭ বছরের মেয়ে পূজা ও ৬ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকেন পেশায় ব্যবসায়ী রবি গঙ্গোপাধ্যায়। পূজা একাদশ শ্রেণির এবং রবিবাবুর ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন ছেলে স্কুলে যাওয়ার পরে সকাল ৯টা নাগাদ রুমাদেবী ও পূজাকে নিয়ে ডানলপে একটি মেডিক্যাল সেন্টারে যান রবিবাবু। সেখানে রুমাদেবীর আল্ট্রাসোনোগ্রাফির পরে ১১টা নাগাদ স্ত্রী ও মেয়েকে বাড়ি ফেরার জন্য অটোয় তুলে দিয়ে চাঁদনি চকে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন রবিবাবু। তখন বাড়িতে ছিলেন পরিচারিকা লতিকা গুঁই ও গৃহশিক্ষিকা লীনা মণ্ডল। পুলিশ জেনেছে, বৌবাজারের বাসিন্দা লীনাদেবী এক সময় পূজাকে পড়াতেন। এখন পড়ান রবিবাবুর ছেলেকে। তিনি এসেছিলেন ১১টা নাগাদ। পুলিশ জানায়, সওয়া ১১টা নাগাদ পূজা ও রুমাদেবী বাড়ি ফেরেন। এর পরে পাড়ার দোকানে জিনিস কিনতে যায় পূজা। মি‌নিট পনেরোর মধ্যেই সে ফিরে আসে। আর তার পিছন পিছনই ঢোকে দুই যুবক। রুমাদেবীরা পুলিশকে জানান, ফ্ল্যাটের যে শোয়ার ঘরে এসি রয়েছে, সেখানেই ছিলেন সবাই। পূজাও সেখানে আসে। অভিযোগ, এর পরেই আচমকা অপরিচিত দুই যুবক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দরজা ঠেলে ওই ঘরে ঢোকে।

রুমাদেবী বলেন, ‘‘এক জন আমার ও পূজার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, চিৎকার করলে গুলি চালাবো। আলমারির চাবি দে, গয়না বার কর।’’ অভিযোগ, আরও দুই দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আসে। চাবি দিয়ে আলমারি খুলে জিনিস বার করে। কিন্তু কিছু পেয়ে তারা আরেকটি আলমারির লকারের চাবি চায় বলে দাবি রুমাদেবীর। শেষে দুষ্কৃতীরা লোহার রড দিয়ে লকার ভেঙে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না বার করে নেয়। লতিকা ও লীনাদেবী জানান, দুষ্কৃতীরা তাঁদের কান, গলা থেকেও গয়না খুলে নেয়। নিয়ে নেয় তিনটি মোবাইল। তবে পুজার মোবাইল ও কানের দুল প্রথমে নিলেও পরে তা ফেরত দিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। পূজা বলেন, ‘‘ওঁদের এক জনকে কোথায় যেন দেখেছি। ওঁরা বারবার একটা নাম করে বলছিল আমার বাবা নাকি ওঁদের এক জনের মায়ের ক্ষতি করেছে।’’ রুমাদেবী জানান, রিভলভারে শাটার টেনে বার বার ভয় দেখাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। তবে তারা কাউকে আঘাত করেনি। অভিযোগ, এর পরে গামছা, মোজা, সোয়েটার দিয়ে তিন জনের হাত-পা-মুখ বেঁধে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায় দুষ্কৃতীরা।

রুমাদেবী পুলিশকে জানান, লতিকা কোনও মতে বাঁধন খুলে সবাইকে মুক্ত করেন। রুমাদেবী প্রতিবেশীদের ফোনে ডাকলে তাঁরাই এসে দরজা খুলে দেন। কিন্তু চার অপরিচিতকে ওই আবাসনের কেউ এমনকী নিরাপত্তারক্ষীও বেরোতে দেখেননি কেন, তা নিয়েও ধন্দে পুলিশ।

তবে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে, সকাল ১১-৩০ নাগাদ দুই অপরিচিত ব্যক্তি ওই আবাসনে আসে। তারা রবিবাবুর বাড়ি যেতে চাইলে রক্ষী বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের আটকান। কিন্তু ওই দু’জন জানান, তারা এসি সারাতে এসেছেন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘ফোনে রবিবাবুকে জানালে তিনি ওদের ঢুকতে দিতে বলেন।’’ তবে তারা খাতায় নিজেদের পরিচয় সে ভাবে লেখেনি বলেই জেনেছে পুলিশ। তবে বিশ্বনাথবাবু পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তিদের আর বেরোতে দেখেননি তিনি।

এ দিন বিকেলে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ শুনে দুষ্কৃতীদের ছবিও আঁকায় পুলিশ। রবিবাবু বলেন, ‘‘অফিস গিয়েছিলাম। খবর পেয়ে ফিরে আসি। মনে হচ্ছে পরিচিত কেউই যুক্ত। না হলে সব জানল কী করে?’’ সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন, রক্ষী তা হলে ‘রবিবাবুর অনুমতি’ নিয়ে আগন্তুকদের যেতে দেওয়ার কথা বলছেন কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE