Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি বিক্রির জন্য মাকে নির্যাতন, অভিযোগ ছেলে ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে

ঊষাদেবী বলেন, ‘‘আমি বলেছি বাড়ি বিক্রি করব না। তাও ছেলে, মেয়ে, জামাই চাপ দিচ্ছে। আমি রাজি হইনি বলে গত বুধবার ছোট ছেলে দীপক আমাকে খাট থেকে মেঝেতে নামিয়ে খাটটি নিয়ে নেয়। ছোট মেয়ে বাণী তাদের বাধা দিতে গেলে ওকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমাকেও লাথি মারে। কয়েক বার তো আমাকে তেড়ে মারতেও আসে।’’

দুই মেয়ের সঙ্গে বাড়িতে ঊষাদেবী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

দুই মেয়ের সঙ্গে বাড়িতে ঊষাদেবী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

প্রোমোটারকে বাড়ি বিক্রি করা নিয়ে বিবাদ ও তার জেরে বৃদ্ধা মাকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠল ছেলে এবং দুই মেয়ের বিরুদ্ধে। ছোট মেয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। কসবা থানা এলাকার কালিকাপ্লেসের ঘটনা।

পুলিশ জানায়, কসবা থানা এলাকার নস্করহাট কালিকাপ্লেসে চার কাঠা জমির উপরে একটি বাড়িকে নিয়েই বিবাদের শুরু। সেখানে থাকেন আশি বছরের বৃদ্ধা ঊষা দাস, তাঁর দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। বাকি দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে বড় ও মেজ মেয়ে, তাঁদের স্বামী এবং ছোট ছেলে ও বৌমা বাড়িটি প্রোমোটারকে বিক্রি করার জন্য কয়েক মাস ধরেই তাঁকে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ঊষাদেবীর। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তাঁকে সমর্থন করেন বড় ছেলে ও অন্য দুই অবিবাহিতা মেয়ে। গোলমাল বড় আকার নেয় গত বুধবার।

আরও পড়ুন: টানাপড়েনের মাঝেই হল ময়না-তদন্ত

ঊষাদেবী বলেন, ‘‘আমি বলেছি বাড়ি বিক্রি করব না। তাও ছেলে, মেয়ে, জামাই চাপ দিচ্ছে। আমি রাজি হইনি বলে গত বুধবার ছোট ছেলে দীপক আমাকে খাট থেকে মেঝেতে নামিয়ে খাটটি নিয়ে নেয়। ছোট মেয়ে বাণী তাদের বাধা দিতে গেলে ওকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমাকেও লাথি মারে। কয়েক বার তো আমাকে তেড়ে মারতেও আসে।’’ বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে থাকেন ঊষাদেবী।

বাণীদেবী জানান, মা হাঁটতে পারেন না। বাড়িতে চার জন ভাড়াটে রয়েছেন। তাঁদের টাকাতেই কোনও ভাবে চিকিৎসা চলছে। বড় দাদা কোনও কাজ করেন না। ছোট ভাই কোনও ভার নেন না বলেই দাবি তাঁর।

অভিযুক্তদের দাবি অবশ্য একেবারেই অন্য। ছোট ছেলে দীপক দাসের বক্তব্য, ‘‘গোটা ঘটনাই সাজানো এবং মিথ্যা। স্ত্রীর উপরে দাদা ও বোনেরা অত্যাচার করত। থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগও করা হয়েছে।’’ ওই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই পাল্টা গল্প তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ দীপকবাবু এবং তাঁর স্ত্রী কাকলি দাসের। দীপকবাবু বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মা আর বোনকে মারার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটাও মিথ্যে। প্রোমোটারকে বাড়ি বিক্রি করার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’ তাঁর দাবি, ২৯ বছর ধরে মায়ের সব ভার বহন করেন তিনি। কয়েক মাস আগে তিনি অবসর নেন। তাই আর্থিক অবস্থা ভাল নেই। যেহেতু ঘর ভাড়ার টাকাতেই তাঁর মায়ের চিকিৎসা হয়, তাই তিনি আর টাকা দেন না।

সূত্রের খবর, গোলমালের পরে বাণীদেবী স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের কাছে যান ও দীপকবাবুরা স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বাণীদেবী বলেন, ‘‘আমি সুশান্তদার কাছে গিয়েছিলাম। তিনিই থানায় যেতে বলেন।’’ সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘আমার কাছে ওঁরা এসেছিলেন। পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না বলেই থানায় যেতে বলেছিলাম।’’ বাণীদেবীর অভিযোগ, তাঁর বড়দিদি রেখা বারিক জাভেদ খানের দলবলকে দিয়ে মার খাওয়ানোর হুমকিও দেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রেখাদেবী। জাভেদ খানকে ফোন বা এসএমএস করে পাওয়া যায়নি।

ঊষাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘আমি বেঁচে থাকাকালীন বাড়ি কাউকে বিক্রি করব না। আমার মৃত্যুর পরে দুই মেয়ের কী হবে, সেটা নিয়েই চিন্তা।’’ ছোট ছেলের অত্যাচারের কথা বলার সময়ে কপালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে ওদের বড় করেছি। আমার কপালে এই প্রতিদানই লেখা ছিল!’’

পুলিশ জানায়, উভয়পক্ষই গত এক বছরে একে অপরের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ করেছেন। ঘটনায় গ্রেফতার করা হলেও পরে জামিন পান তাঁরা। এ বার ফের প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান এক পুলিশকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE