প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গির প্রধান বাহক এডিসের চাষ দক্ষিণ দমদমে!
তেমনই আশঙ্কা ওই পুরসভার একাধিক কর্তার। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ দমদম পুরকর্তাদের ডাকে ওই এলাকায় অভিযান চালায় কলকাতা পুরসভা। সেখানে ১০০টি বাড়িতে ঢুকেছিল কলকাতার র্যাপিড অ্যাকশন টিম। সব বাড়িতেই মিলেছে অজস্র এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা, পিউপা।
কেন ওই হাল?
সচেতনতার অভাব এবং স্বাস্থ্য দফতরের পরিকাঠামোর অভাবেই দক্ষিণ দমদম এবং বরাহনগরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার আতঙ্ক বেড়েই চলেছে বলে মত ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের। পুর এলাকা জুড়ে গিজগিজ করছে মশা। কিন্তু মশা চেনার কোনও বিশেষজ্ঞ নেই। দৈনিক ৭৫ টাকা মজুরির লোক নিয়ে সচেতনতার কাজ চলছে। মাসে মাত্র ১০ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট দিয়ে আসেন তাঁরা। তাতে কেউ সচেতন হয়, কেউ বা লিফলেট দেখেনই না। তবে তা দিয়ে যে মশা নিধনের কাজ হতে পারে না তা বিলক্ষণ বুঝেছেন দক্ষিণ দমদমের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর পাল। বললেন, ‘‘একজন জ্বরে আক্রান্তের বাড়িতে কোথাও জঞ্জাল নেই, জল ধরে রাখাও থাকে না। দেখা গেল তুলসী মন্দিরে ঘটে জমা জলে ভাসছে এডিসের লার্ভা।’’ তাঁর ওয়ার্ডে ২৯ জন জ্বরে ভুগছেন। এর মধ্যে ১৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তাঁরা আইডি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রবীরবাবু জানান, রোগীর দেখভালে আত্মীয়দের জন্য দু’টি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংলগ্ন পুরসভার ওয়ার্ডগুলিতে ডেঙ্গি রুখতে তৎপর কলকাতাও। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর বরাহনগর, দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করে। দমদমের স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানান, তাঁদের মশা নিবারণের পরিকাঠামো নেই বলে কলকাতার সাহায্য চাওয়া হয়। সেই ভিত্তিতেই মঙ্গলবার দক্ষিণ দমদমের পূর্ব সিঁথি রোড, ফকির ঘোষ রোড, মধুগড় এলাকায় পতঙ্গবিদ বিশাখা বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান চালায় কলকাতা পুরসভার টিম। সেখানে এডিসের বংশবৃদ্ধি ধ্বংস করেন তাঁরা। তবে যে হারে মশার প্রকোপ বাড়ছে তাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ভয়াবহ আকার নেবে বলে মনে করছেন কলকাতার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: ভাঙড় কাণ্ডে বিচারককে ফের ভর্ৎসনা
আর কলকাতা লাগোয়া ওই সব এলাকার ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া কলকাতাতেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় চিন্তিত কলকাতার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষও। পুরসভা সূত্রের খবর, বছর দুয়েক আগে ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিস কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনভিবিডিসিপি) প্রতিনিধি দল কলকাতায় এক বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছিলেন এই মহানগরীকে মশার রোগ থেকে বাঁচাতে হলে পার্শ্ববর্তী পুরসভা গুলোকেও সতর্ক থাকতে হবে। না হলে ওই সব পুরসভার আক্রান্তদের মাধ্যমে কলকাতায় তা ছড়িয়ে পড়বে।
এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করার কথাও জানায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কর্তারা। প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে পাঠাতে বলা হয় দিল্লিতে। সেই আবেদনে সাড়া মেলেনি। আর এখন যখন ডেঙ্গির বিপদ দোরগোড়ায়, তখন ওই সব পুরকর্তারা ডেঙ্গির মশা দমনে কলকাতার পতঙ্গবিদদের ভরসায় রয়েছেন। তাঁদের কথায়, কী আর করব। মশা নিবারণে ঢাল নেই, তরোয়াল নেই। নিধিরাম হয়ে থাকতে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy