Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভয়াল আগুনে ছাই গুদাম

দমকলের অফিসারেরা জানান, এ দিন সকাল সওয়া ৯টায় ১/১ ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডের কমবেশি চার হাজার বর্গফুটের ওই গুদামে মজুত থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন সেখানকার কর্মীরা।

লেলিহান: দমকল জল দিতেই পরপর বিস্ফোরণ। আগুনের গ্রাসে রাসায়নিক ভর্তি সেই গুদাম। বুধবার, তারাতলার কাছে ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

লেলিহান: দমকল জল দিতেই পরপর বিস্ফোরণ। আগুনের গ্রাসে রাসায়নিক ভর্তি সেই গুদাম। বুধবার, তারাতলার কাছে ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৭
Share: Save:

ভস্মীভূত হয়ে গেল বন্দর এলাকার একটি গুদাম। বুধবার সকালে তারাতলা থানা এলাকার ওই গুদামে বিধ্বংসী আগুন লাগে। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। পুলিশ ও দমকল জানায়, ওই গুদামে প্রচুর রাসায়নিক দাহ্য বস্তু মজুত ছিল। বাজি ও রং তৈরিতে ওই রাসায়নিক কাজে লাগে। সাড়ে আট ঘণ্টার চেষ্টায় দমকলের ১২টি ইঞ্জিন গুদামের আগুন আংশিক ভাবে আয়ত্তে আনে। এ দিন বেশি রাত পর্যন্ত দমকলের কর্মীরা গুদামে ক্রমাগত জল, ফোম ও বালি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। ওই গুদামের পিছন দিকে আরও কয়েকটি গুদাম রয়েছে। সেগুলির কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, এ দিন রাত পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে তা জানাতে পারেননি দমকলের কর্তারা।

দমকলের অফিসারেরা জানান, এ দিন সকাল সওয়া ৯টায় ১/১ ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডের কমবেশি চার হাজার বর্গফুটের ওই গুদামে মজুত থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন সেখানকার কর্মীরা। ২৫, ৩০ ও ৫০ কেজির ড্রামে ওই রাসায়নিক গুঁড়ো মজুত ছিল। একতলার গুদামে সেই সময়ে চার জন কর্মী ছিলেন। বর্ষার জল গত আড়াই মাস ধরে ওই গুদামের ভিতরে ঢুকে রয়েছে। রবিবার রাত থেকে বৃষ্টিতে আরও জল ঢোকে। দু’টি পাম্প চালিয়ে জমা জল বার করছিলেন এক কর্মী। তিনিই প্রথমে ধোঁয়া দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন তারাতলা থানায় ও দমকলে।

গুদামটি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে হওয়ায় পুলিশ সেখানেও খবর পাঠায়। বেলা পৌনে দশটার মধ্যেই দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন আয়ত্তে আনার কাজ শুরু করেন। তার আগেই অবশ্য গুদাম থেকে সেখানকার কর্মীরা বেরিয়ে এসেছেন।

কী ভাবে লাগল আগুন? প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের অনুমান, মজুত থাকা ওই রাসায়নিক মূলত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। জলের সংস্পর্শে এলেই তা খুব দ্রুত তপ্ত হয়ে ওঠে। গুদামে মজুত ছিল প্রায় ৪০ টন রাসায়নিক। বর্ষার জল রাসায়নিকে মিশে গিয়ে তা তেতে ওঠে ও আগুন ধরে যায় বলে দমকলের প্রাথমিক সন্দেহ। প্রথমে শ’দেড়েক বর্গফুট এলাকায় আগুন ধরে যায়। খানিক পরেই তা ছড়িয়ে পড়ে বাকি এলাকায়।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মুকেশ জালান নামে এক ব্যক্তি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কয়েক বছর আগে ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডে প্রায় এক লক্ষ বর্গফুট এলাকা লিজ নিয়েছেন। ওই এলাকা ভাগ করে খান পাঁচেক গুদাম তৈরি করে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে তিনি ভাড়া দিয়েছেন। যে গুদামে রাসায়নিক মজুত ছিল, সেটি তামিলনাড়ুর একটি সংস্থা ভাড়া নিয়েছে।

এ দিন দমকলের কর্মীরা আগুন আয়ত্তে আনতে গিয়ে প্রথমে জল ঢালেন। তাতে বিপত্তি বাড়ে। সাদা ও কালো ধোঁয়ার বদলে বেরিয়ে আসে আগুনের লেলিহান শিখা। বারবার বিস্ফোরণ হতে থাকে গুদামে। দমকলের কর্মীরা জানান, জল পড়ে আগুন বেড়ে যাওয়ায় আরও জল ঢালা হয়। সময় দেওয়া হয় পুরো রাসায়নিক পুড়ে যাওয়ার জন্য। পরে ফোম ও বালি ঢালা হয়।

দমকলের অফিসারেরা জানান, হাইড রোড থেকে ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডের ওই গুদামে পৌঁছনোর প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই বড় বড় গর্তে ভরা। তার উপরে গত দু’মাস ধরে ওই রাস্তায় হাঁটু জল জমে থাকায় এ দিন ইঞ্জিন নিয়ে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয় দমকলকর্মীদের। জল ফুরিয়ে গেলে ফের আনতে যেতে সময় লাগবে বুঝে এক সময়ে রাস্তার জমা জল টেনেই আগুন ঢালেন তাঁরা।

কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুম থেকে এ দিন সকালে আগুন লাগার খবর পান ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রামপিয়ারি রাম। গুদামটি তাঁর ওয়ার্ডের মধ্যেই পড়ে। পরে বেলা একটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুরসভার মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি ঘটনাস্থলে হাজির থাকা কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মিরাজ খালিদকে বলেন, গুদামটি যে সংস্থা ভাড়া নিয়েছে, তারা রাসায়নিক মজুত রাখার সব নিয়ম মেনেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ডিসি জানান, প্রথমে গুদামের ফরেন্সিক পরীক্ষা হবে। তার পরে দেখা হবে, গুদামের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি না।

এ দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মেয়র জানান, গুদামের জমিটি কলকাতা বন্দরের। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৭১ সালে জালান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে এক সংস্থাকে ৩০ বছরের জন্য ১৪০ কাঠা জায়গা লিজ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষের আগেই ওই সংস্থা সুবর্ণরেখা এগ্রিকালচারাল এস্টেটস নামে এক সংস্থাকে লিজ ট্রান্সফার করে দেয়। টাকা বাকি থাকা ও বেআইনি ভাবে লিজ হস্তান্তরের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ লিজ বাতিল করতে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE