ফোনে শুনলে ব্যাঙ্কের ঝকঝকে কর্মী বলেই মনে হবে। হয় বলবে কার্ড ব্লক হয়ে গিয়েছে, নয় তো নানা ছুতোয় কার্ডের পাসওয়ার্ড (পিন), সিভিভি নম্বর-সহ ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইবে। আর কথায় কথায় গ্রাহক সেই তথ্য ফাঁস করলেই নিমেষে অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাবে হাজার হাজার টাকা।
কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যেই এমন জালিয়াতদের পাল্লায় পড়েছেন বেশ কয়েক জন। এ বার একই কায়দায় সল্টলেকের এক মহিলা চিকিৎসকের অ্যাকাউন্ট থেকেও ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা সরানো হয়েছে। ঘটনার অভিযোগ পেয়ে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা তদন্তে নামলেও সোমবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে একটি নম্বর থেকে ছ’বার ওই মহিলার কাছে ফোন এসেছিল। এক যুবক নিজেকে ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে। ওই যুবক মহিলাকে জানায়, ব্যাঙ্ক তাঁর ডেবিট কার্ডের পিন বদলে দিয়েছে। নতুন পিন নম্বর হিসেবে একটি নম্বরও বলে। পাল্টা পুরনো পিন নম্বর জানতে চায়। তদন্তকারীরা জানান, প্রথমে মহিলা নিজের পুরনো পিন জানাতে না চাইলেও বারবার ফোন করায় তিনি ওই যুবককে পুরনো পিন বলে দেন। এর পরে মহিলার মোবাইলে এসএমএস আসে। তিনি দেখেন, ছ’বারে মোট ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে সরানো হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের সন্দেহ, মোবাইল ব্যবহার করেই ওই টাকা সরানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, ইদানীং মোবাইল ফোন সংস্থাগুলি ফোনের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের ব্যবস্থা চালু করেছে। জালিয়াতেরা সেগুলিই ব্যবহার করে। প্রথমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে গ্রাহকদের টাকা নিজের মোবাইল ফোন অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেয়। সেখান থেকে একের পর এক মোবাইলে বদলে টাকা একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। সেখান থেকে টাকা তুলে নেয় জালিয়াতেরা। এ সব ক্ষেত্রে এক বারে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন করা যায় না। তাই ছোট বা মাঝারি অঙ্কের টাকাই হাতিয়ে নেওয়া হয়।
লালবাজার সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে শহরের নানা থানায় এমন শ’খানেক অভিযোগ জমা পড়েছিল। বেলেঘাটা থানার একটি তদন্তে নেমে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার একটি দল ঝাড়খণ্ডের কর্মটাঁড়ে যায়। সেখানে দিন কয়েক ওঁত পেতে থাকার পরে গোয়েন্দারা দেখেন, রাত হলেই এক দল যুবক মশারি বগলে করে টিলার উপরে ঘুমোতে যান। আবার সকাল হলেই বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁদের পিছু নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, এলাকায় মোবাইল সংযোগ ভাল না হওয়ায় টিলার উপরে উঠে সারা রাত ফোন করত যুবকেরা। ওই ফোন করেই বিভিন্ন লোকের কার্ডের তথ্য হাতিয়ে জালিয়াতি করত তারা। সেই অভিযোগে কর্মটাঁড় থেকেই অরুণকুমার মণ্ডল নামে এক জালিয়াতকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আপাতত সে জেল হাজতে। সল্টলেকের ঘটনার পিছনে তেমনই অন্য কোনও চক্র রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
ফোনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের তথ্য কাউকে না দিতে বলে পুলিশ ও ব্যাঙ্কের তরফে বারংবার গ্রাহকদের সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে না বলেই পুলিশের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, সচেতনতা না বাড়লে এই অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy