Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পিজি-র ডাক্তারদের চেষ্টায় নতুন জীবন পেলেন তরুণী

দু’টির বদলে একটি কিডনি। একটির বদলে দু’টি জরায়ু। নিজের শরীরে প্রকৃতির এই হিসেবের গরমিল নিয়ে আজন্ম নানা সমস্যায় ছিলেন বাংলাদেশের যশোরের আসমা খাতুন। সঙ্গে গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো ছিল আর একটি সমস্যা। তাঁর প্রস্রাবের দ্বারও তৈরি হয়নি।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

দু’টির বদলে একটি কিডনি। একটির বদলে দু’টি জরায়ু। নিজের শরীরে প্রকৃতির এই হিসেবের গরমিল নিয়ে আজন্ম নানা সমস্যায় ছিলেন বাংলাদেশের যশোরের আসমা খাতুন। সঙ্গে গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো ছিল আর একটি সমস্যা। তাঁর প্রস্রাবের দ্বারও তৈরি হয়নি। এমন বিবিধ জটিলতায় আর পাঁচ জন তরুণীর মতো সুস্থ জীবন ছিল না তাঁর। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও আশার আলো দেখা যায়নি। শেষে তাঁকে নতুন জীবনের পথ দেখালেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তরুণীর অ্যাপেন্ডিক্স কাজে লাগিয়ে তা দিয়ে তাঁরা বানালেন ইউরেট্রা।

দেশে ফেরার আগে এই হাসপাতালকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন আসমা। তাঁর অস্ত্রোপচারটি হয়েছে এসএসকেএমে।

জন্ম থেকেই মলদ্বার ও প্রস্রাবের দ্বার ছিল না আসমার। জন্মের ঠিক পরেই অস্ত্রোপচারে মলদ্বার তৈরি হলেও অন্ত্রের দিকটি এমনই জড়ানো ছিল যে, প্রস্রাবের দ্বার করা যায়নি। তা হতো যোনিপথেই। ফলে নানা সমস্যায় ভুগতেন আসমা। ২২ বছরের এই তরুণীর বিয়ে হয়েছে দু’বছর আগে। এর পরে দু’বার গর্ভধারণ করেন তিনি। কিন্তু দু’বারই ভ্রূণটি তৈরি হয় জরায়ুর বাইরে, অর্থাৎ ‘এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি’। তাই গর্ভপাত করাতে হয়। এর পরে একাধিক হাসপাতালে ঘুরেছেন। শেষ আশা হিসেবে কলকাতার পিজি-তে এসেছিলেন। সেখানেই ইউরোলজি বিভাগের ডাক্তারেরা দীর্ঘ চিকিৎসায় তাঁকে নতুন জীবন দিয়েছেন।

ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক সন্দীপ গুপ্ত জানান, সিস্টোস্কোপি করে তাঁরা ভিতরের অবস্থাটা জেনেছিলেন। তখন চ্যালেঞ্জটা ছিল প্রস্রাবের দ্বার তৈরি করা। এ জন্য তৈরি হয় মেডিক্যাল বোর্ড। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, পা থেকে মাংস কেটে একটি টিউব অর্থাৎ, ইউরেট্রা তৈরি করা হোক। কারণ, মাত্র কিছু দিন আগেই কপালের মাংস কেটে কৃত্রিম নাক বানিয়েছিল ওই বিভাগ। কিন্তু নতুন করে আর শরীরের বাইরের অংশে ক্ষত
চাননি ইউরোলজির চিকিৎসকেরা। তাঁরা স্থির করেন, চ্যালেঞ্জটা অন্য ভাবে নেবেন।

স্থির হয়, অ্যাপেন্ডিক্সকে ব্যবহার করা হবে। বিশেষজ্ঞেরা জানান, এর আগে ইউরেটর তৈরির ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্সকে ব্যবহার করা হলেও এ ভাবে ইউরেট্রা তৈরির নজির খুব কম। প্রয়াসটি সফল হয়। নতুন পাওয়া ইউরেট্রা স্বাভাবিক জীবন দিয়েছে আসমাকে। চিকিৎসকেরা জানান, একটি কিডনি বা দু’টি জরায়ুর সমস্যার সমাধান তো সম্ভব নয়। কিন্তু প্রস্রাবের পথ তৈরি হওয়াটা জরুরি ছিল। সেটা তাঁরা পেরেছেন।

আপাতত সম্পূর্ণ সুস্থ আসমা। যশোরের সাত মাইলে নিজের বাড়ি ফেরার আগে তিনি জানিয়ে গিয়েছেন, এই শহরই তাঁকে নবজন্ম দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Hospital Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE