প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গি সচেতনতার প্রসারে ঘটা করে ডাকা হয়েছিল সভা। সচেতনতার পাঠ দিতে হাজির ছিলেন স্বাস্থ্য দফতর নিযুক্ত নোডাল অফিসার। অথচ, ‘বেহাত’ সভাস্থলই! যার জেরে মঙ্গলবার দক্ষিণ দমদম পুরসভার রবীন্দ্র ভবনে ডাকা ওই সভা বাতিল করে দিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে পুরসভা কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠে গেল এ দিন।
দক্ষিণ দমদম পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ পুরসভার রবীন্দ্র ভবন প্রেক্ষাগৃহে জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে সভা হওয়ার কথা ছিল। হাজির ছিলেন এলাকার স্কুল, বাজার কমিটি, নার্সিংহোম, প্যাথোলজি সেন্টারের প্রতিনিধিরাও। সচেতনতার পাঠ দিতে পৌঁছে গিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দক্ষিণ দমদমের জন্য নিযুক্ত নোডাল অফিসার তথা ব্যারাকপুরের এসিএমওএইচ অপূর্ব দাসও। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে অতিথিদের বসানোর উপায় নেই। কারণ, একই দিনে সেটি অন্য একটি সংস্থাকে ভাড়া দিয়ে বসে আছে পুরসভা! রাত ন’টা পর্যন্ত তাদের অনুষ্ঠান চলবে। রবীন্দ্র ভবনে পৌঁছনোর আগে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা তা জানতে পারেন। সভায় যোগ দিতে আসা চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডে, প্রাক্তন পুরপ্রধান অ়ঞ্জনা রক্ষিত-সহ কাউন্সিলরেরা সব শুনে হতবাক হয়ে যান।
বিড়ম্বনার শিকার হয়ে প্রাথমিক ভাবে চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) সিদ্ধান্ত নেন, প্রেক্ষাগৃহের বাইরের বারান্দায় চেয়ার পেতে সভা হবে। সেই মতো জোগাড় করা হয় চেয়ার, মাইক্রোফোন স্ট্যান্ড, সাউন্ড বক্স। বাড়তি চেয়ারের জন্য ডেকরেটরকে ফোন করেন রবীন্দ্র ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহের ভিতর থেকে আসা করতালিতে মাঝেমধ্যেই কান পাতা দায় হয়ে উঠছিল। পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টরকে মাইকের সামনে এসে বলতে হয়, বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র ভবনেই সভা হবে। বাজার কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘আবার আসতে হবে!’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘আবার স্কুলের খাতায় লিখে আসতে হবে, মিটিং!’’
এই পরিস্থিতিতে পুরসভার সম্মান রক্ষায় নমো নমো করে সভা সারার ভার কাঁধে তুলে নেন স্বাস্থ্য দফতরের নোডাল অফিসার এবং চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য)। কিন্তু নোডাল অফিসার যখন মশারি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাচ্ছেন, তখন প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে বাজছে সিটি! ওই অফিসারের ২০ মিনিটের বক্তব্যের পুরো সময়টাই প্রায় বাইরে কাটালেন চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য)। তৃণমূলের কাউন্সিলর কস্তুরী চৌধুরীকে তিনি জানালেন কী ঘটেছে! ওই কাউন্সিলরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তাই নাকি!’’ এরই মধ্যে দু’জনের একসঙ্গে ছবি তোলার পর্বও সারা হয়ে গেল। কস্তুরীর গাড়ি বেরোতে না বেরোতেই ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দীপ্তি রায়ের প্রবেশ। তাঁকে গাড়ি থেকে নামার সুযোগই দিলেন না গোপা। কাউন্সিলরের এক পা মাটিতে, আর এক পা গাড়িতে। সেই অবস্থাতেই যা বলার বলে দিলেন গোপাদেবী। কেয়া দাস, পার্থ বর্মা, মুনমুন চট্টোপাধ্যায়— শাসক দলের প্রায় সব কাউন্সিলরই তখন সভা বাতিলের খবর শুনে মুচকি হাসছেন।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘রবীন্দ্র ভবনে যে সভা হবে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগ লিখিত ভাবে পুরসভার কাছে আবেদন করেনি। বেসরকারি সংস্থা নিয়ম মেনে প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া নিয়েছে। ওদের দোষ নেই। যা হল, তা অনভিপ্রেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy