Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শংসাপত্র নিয়ে জটিলতার ফাঁসে সঙ্কল্পরা

এর মূলে রয়েছে প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র প্রসঙ্গ। প্রথম থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ সঙ্কল্পের পরিবারকে প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র দিতে বলেছিলেন। সঙ্কল্পের সেই শংসাপত্র নেই। খুকুদেবী জানান, মেডিক্যাল রিপোর্ট রয়েছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, সঙ্কল্পের যাবতীয় সুযোগ পেতে শংসাপত্রই প্রয়োজন।

সঙ্কল্প দাস

সঙ্কল্প দাস

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

আদালতের নির্দেশে স্কুলে ফের যাচ্ছে ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত বালিগঞ্জের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র সঙ্কল্প দাস। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে আনন্দেই ছিল সে। কিন্তু আবার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে দাবি ওই ছাত্রের মায়ের।

সঙ্কল্পের মা খুকু দাস জানান, স্কুলে পরিকাঠামো না থাকায় পছন্দের সঙ্গীত ও হোম সায়েন্স থেকে বঞ্চিতই থাকছে সঙ্কল্প। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই দু’টি বিষয় পড়ানোর পরিকাঠামো নেই। তাই সঙ্কল্পকে দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ অন্য এক প্রতিবন্ধী পড়ুয়া ওই স্কুলেই কী ভাবে সঙ্গীত নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ল? সোমবার, এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি রয়েছে।’’

খুকুদেবী জানান, ওই স্কুলেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে ডিসলেক্সিয়া ধরা পড়ে সঙ্কল্পের। স্কুল থেকে বিষয়টি সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশনে (সিবিএসই) জানানো হয়। বোর্ডের তরফে তাকে নবম শ্রেণি থেকে আঁকা নিয়ে পড়াশোনা চালানোর অনুমতিও দেওয়া হয়। একাদশ শ্রেণিতে ভূগোল, ইংরেজি, সঙ্গীত, আঁকা ও হোম সায়েন্স বেছে নেয় সঙ্কল্প। স্কুলের নতুন অধ্যক্ষা জানান, সঙ্কল্পের প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র না থাকায় তাকে পাঠ্যক্রমেই পরীক্ষা দিতে হবে। এমনকী, অনুপস্থিতির কারণে সঙ্কল্পের নামও বাদ দেওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ফের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সঙ্কল্প।

কেন এত সমস্যা? এর মূলে রয়েছে প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র প্রসঙ্গ। প্রথম থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ সঙ্কল্পের পরিবারকে প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র দিতে বলেছিলেন। সঙ্কল্পের সেই শংসাপত্র নেই। খুকুদেবী জানান, মেডিক্যাল রিপোর্ট রয়েছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, সঙ্কল্পের যাবতীয় সুযোগ পেতে শংসাপত্রই প্রয়োজন। যদি মেডিক্যাল রিপোর্ট থাকে, তবে শংসাপত্র সংগ্রহ করতে জটিলতা কোথায়?

এ জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংসদে নতুন আইন ‘রাইটস অব পার্সন উইথ ডিজেবিলিটি অ্যাক্ট ২০১৬’ পাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৭ সালের এপ্রিলে তার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ছ’মাসের মধ্যে প্রতি রাজ্যকে সেই আইনের ভিত্তিতে বিধি তৈরি করতে হয়। রাজ্য এখনও নতুন বিধি করেনি।

১৯৯৫ সালে‌র আইনে সাত ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল। এ বারে সংখ্যাটা হয়েছে একুশ। অথচ সেই প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের শংসাপত্র দেওয়ার জন্য নির্দেশিকাই জারি হয়নি। ফলে কোন নির্দেশিকা অনুসরণ করা হবে, তা স্পষ্ট না হওয়ায় শংসাপত্র তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানান অনির্বাণবাবু। যাঁদের শংসাপত্র পুনর্নবীকরণ করতে হবে, সমস্যায় পড়বেন তাঁরাও। তিনি জানান, এ নিয়ে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে।

যুগ্ম সম্পাদক জানান, ওই আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। তাতে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। যার ভিত্তিতে চিকিৎসকেরা প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র দেবেন। সেটাও না হওয়ায় অসুবিধায় পড়ছেন অনেকেই।

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘বিধি তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর্যায়ে রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE