Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুরের পড়ুয়াদের সঙ্গে বেশি না মেশাই ভাল’

প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরের বিক্ষোভ ও আন্দোলন নিয়ে যে সরকার সন্তুষ্ট নয় সে কথা আগেও বারবার বলেছেন পার্থবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩১
Share: Save:

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ কমছে বলে হতাশা লুকোতে পারেননি কবি শঙ্খ ঘোষ। একই দিনে হিন্দু স্কুলের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কার্যত বলে দিলেন, প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে বেশি মেশামেশি না করাই ভাল! প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরের পড়ুয়াদের সংস্পর্শে গেলে অন্য স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেও ‘বিক্ষোভের ঘুণ’ ঢুকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।

শনিবার হিন্দু স্কুলের দ্বিশতবর্ষ উদ্‌যাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। স্কুলের খেলার মাঠ না থাকায় প্রেসিডেন্সির মাঠে খেলতে যাওয়া যেতে পারে কি, মন্ত্রীকে প্রস্তাব দেন অনুষ্ঠান-মঞ্চে থাকা প্রাক্তনী নির্মল মাজি। তার উত্তরেই মন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘‘ওখানে গিয়ে প্রেসিডেন্সির মতো ঘুণ যদি এই ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে পড়ে তা হলে তো মুশকিল। সব সময় শুধু বিক্ষোভ!’’

প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরের বিক্ষোভ ও আন্দোলন নিয়ে যে সরকার সন্তুষ্ট নয় সে কথা আগেও বারবার বলেছেন পার্থবাবু। কিন্তু প্রেসিডেন্সির মাঠে খেলতে গেলে ‘বিক্ষোভের ঘুণ’ অন্য ছাত্রদের মধ্যেও ঢুকে পড়তে পারে বলে যে আশঙ্কা তিনি এ দিন প্রকাশ করলেন, প্রায় যে ভাবে ‘কুসংসর্গ’ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন, তা নজিরবিহীন বলেই দাবি শিক্ষামহলের।

শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সমান হওয়া উচিত। কোনও দু’টি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এই ভাবে কথা বলা মন্ত্রীর উচিত হয়নি বলে আমি মনে করি।’’ প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের নিয়ে এই সব আলোচনা হচ্ছে এটা খুবই খারাপ লাগছে। মন্ত্রী যে প্রশ্ন তুলেছেন সেটা একেবারে অমূলক নয়। তবে এটাও ঠিক শুধুমাত্র খেলতে গেলে স্কুলের পড়ুয়াদের ওপর কুপ্রভাব পড়বে এটা আমি বিশ্বাস করি না।’’

সবে মিলে: প্রেসিডেন্সির ২০১তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) জয়ন্ত মিত্র, নবনীতা দেবসেন, শঙ্খ ঘোষ, সুগত বসু এবং অনুরাধা লোহিয়া। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

অতীতে পার্থবাবুই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘যত কাণ্ড যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সিতেই কেন হয়?’’ গত বছর ছাত্র বিক্ষোভের জেরে রাজ্যপালের গাড়িতে প্রেসিডেন্সিতে ঢুকতে হয়েছিল তাঁকে। অনুষ্ঠানের শেষে ট্যাক্সি করে বেরিয়ে ছিলেন। এমনকী ক্যাম্পাসে মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়াকে কেন্দ্র করেও পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখান। সম্প্রতি ছাত্র সংসদের পরিবর্তে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল করার প্রতিবাদে যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ঘেরাও করেছিলেন পড়ুয়ারা। যা নিয়ে বিরক্ত ছিলেন মন্ত্রী। সেটাও এ দিনের বক্তব্যে ছায়া ফেলে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘যাদবপুর আর প্রেসিডেন্সির পাঁচ-দশটা ছেলের জন্য পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী রকম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে! আমি ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলছি।’’

তবে মাঠ সমস্যার সমাধানে হেয়ার স্কুলের মাঠটিকে হিন্দু স্কুলের পড়ুয়াদের জন্যও বেছে নেওয়া যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেন হিন্দু স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। সেটি লুফে নেন মন্ত্রী। কিছু জটিলতা রয়েছে শুনে তিনি বলেন, ‘‘এটা আটকাচ্ছে কে? দু’টোই সরকারের স্কুল। দু’জনকেই সহাবস্থানের নীতি নিতে হবে।’’ এ দিন একটি স্মার্ট ক্লাস রুমেরও উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE