পসরা: দোকানে মোয়া-পাটালি। কালীঘাটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
এক রকম জোর করেই তার পথ আটকে দাঁড়িয়েছিল অকাল-বর্ষার দৌরাত্ম্য। কয়েক দিন মুখভার করে থাকার পরে আকাশ একটু হাসতেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে সে। বহু প্রতীক্ষিত শীতের শুরু। কমলালেবু-ব্যাডমিন্টন-পশম পোশাকের আদুরে মেলবন্ধনে বাঙালির প্রিয় ঋতুর তকমাধারী শীতকাল। অনেকেই বলছেন, বুধবার থেকেই এক যথার্থ নভেম্বরের মুখ দেখল বাঙালি।
এই বহু প্রতীক্ষিত মরসুমকে স্বাগত জানাতে তৈরিই ছিল শহর। কিন্তু বর্ষা আর গরম সরিয়ে উঁকি দেয়নি শীত। কয়েক দিন আগে থেকে পসরা সাজালেও এক রকম ঝিমিয়েই ছিল ধর্মতলার ফুটপাথ জোড়া গরম পোশাকের দোকানগুলো। তেমন সুবিধা করতে পারেনি গুড়-মোয়া-পাটালির প্রলোভনও। ঘুম ভাঙেনি সোয়েটারের খাঁজে লুকিয়ে থাকা ন্যাপথলিনেরও। স্নানঘরের তাকও দখল করতে পারেনি নতুন অলিভ অয়েলের শিশি।
এ দিন ছবিটা হুট করে বদলে গেল। চামড়ার টান জানান দিল, সদ্য শীত-ভাব এসেছে। এই নতুন ঋতুর আগমনকে উদ্যাপন করতে হাল্কা মেজাজে গা ভাসাল শহর। ময়দান থেকে মিলেনিয়াম পার্ক, মিউজিয়াম থেকে মোহরকুঞ্জ— সর্বত্র চোখে পড়ল এই পরিবর্তন। হালের শীত-ফ্যাশনে গা মুড়ে নিউ মার্কেট দাপিয়ে শপিং করলেন এক দল তরুণী। প্রিন্সেপ ঘাটের পড়ন্ত রোদে পিঠ ভেজালেন দম্পতি। স্টেশন রোডের মোয়ার দোকানগুলোও গা-ঝাড়া দিয়ে উঠল। বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে একগোছা বেলুন নিয়ে রোজ শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা হেসে বলল, ‘‘অনেক দিন পরে এত লোক হয়েছে, বিক্রি হয়ে যাবে সব বেলুন।’’ চিড়িয়াখানায় দলবেঁধে ঘুরে বেড়াল এক ঝাঁক স্কুলপড়ুয়া। মোহরকুঞ্জে বাংলাদেশ বইমেলা প্রাঙ্গণেও দর্শকের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় বেশ বেশি। কবি নিশ্চয় লিখতেন, ‘শীতকাল এসেই গেল, সুপর্ণা!’
নিউ মার্কেটের ফুটপাথে জ্যাকেটের সম্ভার নিয়ে বসেছিলেন শেখ আসলাম। সন্ধ্যা নামার মুখে খদ্দের সামলাতে সামলাতে বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন ধরেই বসছি, কিন্তু তেমন লোক কই! আজ থেকে মনে হচ্ছে আবার ব্যবসা ফিরবে।’’
হাসি ফুটেছে ভিক্টোরিয়া ঘেঁষা কুইন্স ওয়ের ধারে, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা সহিসদেরও। ‘‘এই একটা সময়েই তো ব্যবসা জমে আমাদের। তাই তাকিয়ে থাকি শীতকালের দিকে। আজ থেকে মনে হচ্ছে অপেক্ষা শেষ হল,’’ বলছেন এক সহিস, বীরেন দাস। একই রকম চনমনে ভাব চোখে পড়ে ছোট ছোট ভিড়ে ঘেরা ফুচকার ঠেলা থেকে শুরু করে সস্তার সানগ্লাসের দোকানেও। সদ্য শীতের আমেজে মজেছে শহরের আনাচকানাচ।
এই আমেজের আবহেই আশঙ্কা বাড়ায় আর একটি বিষয়। ছোট ছোট দোকানগুলিতে টুপি-সানগ্লাস-রুমাল-দস্তানার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ ভাল রকম বিক্রি হচ্ছে মাস্ক।
শীতভাব আসতেই যে বেড়েছে দূষণ, তার স্পষ্ট নিদর্শন মিলছে এই মাস্কের বিক্রি দেখেই। রবীন্দ্র সদন চত্বরের ফুটপাথে পসরা সাজানো এক হকার জানালেন, গত বছর পর্যন্তও তাঁর কাছে মিলত না মাস্ক। এ বছর এনেছেন চাহিদা বুঝেই।
তবে শহর জুড়ে এই শীতভাবের উদ্যাপনে কার্যত জল ঢেলে দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। আবহবিদেরা বলছেন, আজকের দিনটাকে শীতের শুরু বলা যায় না মোটেই। আকাশ যদি ঝকঝকে থাকে, তবেই ক্রমশ জাঁকিয়ে পড়বে শীত। তবে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আকাশের খামখেয়ালিপনায় দু’দিনে মিলিয়েও যেতে পারে শীতভাব। তার জন্য শহরবাসীর প্রস্তুত থাকাই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy