Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাইরে সাঁটা স্টিকার, কিন্তু ভিতরে কি আদৌ ভেষজ আবির

দোলের বাজারে এ বার এমনই সব আবিরের রমরমা। কিন্তু আদৌ সে সব আবির ভেষজ কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ভেষজ বলে শংসাপত্র দেবে, তেমনও তো কেউ নেই।

ভেষজ তকমা আঁটা এই আবির নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র

ভেষজ তকমা আঁটা এই আবির নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

তকমায় ভেষজ। কিন্তু রঙের দাপটে হার মানাবে রাসায়নিককেও!

দোলের বাজারে এ বার এমনই সব আবিরের রমরমা। কিন্তু আদৌ সে সব আবির ভেষজ কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ভেষজ বলে শংসাপত্র দেবে, তেমনও তো কেউ নেই। ফলে আমজনতার অনেকেরই প্রশ্ন, ভেষজ আবির কিনে নিয়ে সেই রাসায়নিকের বিপদেই পড়তে হবে না তো?

এ রাজ্যে মূলত ভেষজ আবির তৈরি শুরু হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে। গাঁদা, পলাশের মতো বিভিন্ন রঙিন ফুলের পাপড়ির গুঁড়োর সঙ্গে ট্যালকম পাউডারের মিশেলে তৈরি সেই আবির হালকা রঙের হতো। তবে গায়ে মাখলে ফুলের সুগন্ধ মালুম হত। রাসায়নিকের ক্ষতি থেকে বাঁচতে ভেষজ আবির সমাজের একাংশে জনপ্রিয় হয়েছিল। ইদানীং ভেষজ জিনিস নিয়ে বেশ জনপ্রিয়তাও তৈরি হয়েছে। জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও এই ধরনের আবির তৈরি করেছিল। পুরুলিয়ায় ভেষজ আবির তৈরি করে ‘বিশ্ব বাংলা’ তকমায় বিক্রির চেষ্টা করছে সরকার।

গবেষকদের অনেকেই বলছেন, আমজনতার আগ্রহ বাড়ায় ভেষজ জিনিসের নাম করে জাল জিনিসও বিকোচ্ছে। ‘ঘাস-পাতা’ দেখালেই ভেষজ দ্রব্য হয় কি না, তা নিয়ে বিজ্ঞাপনেও বাজার ছেয়ে গিয়েছে। এ বার আবিরেও কি সেই ‘রং’ লাগল? প্রশ্ন উঠতেই পারে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক দীপঙ্কর হালদার বলছেন, ভেষজ আবিরে রং হিসেবে ফুলের শুকনো পাপড়ি ব্যবহার করা হয়। শুকিয়ে গেলে ফুলের রং এমনিতেই হাল্কা হয়ে যায়। তার সঙ্গে সাদা পাউ়ডার মেশালে রং আরও হাল্কা হওয়াই স্বাভাবিক। ‘‘তবে কোনটি জাল এবং কোনটি জাল নয়, তার জন্য পরীক্ষা করা জরুরি,’’ বলছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এ সব আবির তৈরি হওয়ার আগে আদৌ কোনও পরীক্ষা হয় কি? দীপঙ্করবাবুর জবাব, ‘‘তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই।’’

এখানেই সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে অনেকের। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, সাধারণ আবিরে রঙের জন্য অরামিন (হলুদ), ম্যালাকাইট (সবুজ), রোডামিন (কমলা)-এর মতো রাসায়নিক মেশানো হয়। গাঢ় রঙের ভেষজ আবিরেও এ সব রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। ভেষজ আবির নিয়ে কাজ করা এক গবেষকের মতে, ‘‘দোলে চড়া রঙের কদর বেশি। তাই ভেষজ আবিরের রং গাঢ় হলে তার বিক্রি বাড়বে। কারণ, এক দিকে ভেষজ আবিরের তকমা রয়েছে, অন্য দিকে গাঢ় রং।’’

এই সব সন্দেহজনক ভেষজ আবির নিয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরাও। ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহি়ড়ি বলছেন, ভেষজ আবিরের রং গাঢ় হলেই তাতে রং মেশানোর সম্ভাবনা বেশি। ফলে সেগুলি না কেনাই উচিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পাড়ায় পাড়ায় ভেষজ আবির বলে যা বিক্রি হচ্ছে সেগুলি ভেষজ কি না, তা কে বলবে? শুধু একটা ভেষজ বলে কাগজ সাঁটানো রয়েছে।’’ উল্টোপাল্টা সংস্থার তকমা সাঁটা জাল ভেষজ আবির থেকে নানা বিপদ ঘটছে বলে দাবি করেছেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন অস্থায়ী দোকানের মালিকেরা বলছেন, বড়বাজারের মতো এলাকা থেকে ভেষজ আবির বলে কিনেছেন। কিন্তু আদৌ ভেষজ কি না অতশত তাঁরা জানেন না। সরকারি হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস মল্লিকের মতে, এই সব আবিরে রাসায়নিক থাকে। চোখে গেলে জ্বালা করবে, চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। তেমন হলে ঠান্ডা জলে চোখ ধুয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।

তা হলে আমজনতা ভেষজ আবির বুঝবে কী ভাবে?

বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আসল ভেষজ আবিরের দানা খুব মসৃণ হয়। রং গাঢ় হয় না। এবং সেই রঙের দাগও চটজলদি উঠে যায়। কেনার হাতে আগে হাতে নিয়ে এ সব দেখলেই ফারাক করা সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Colours Holi herbal colour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE