Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পরিবারের ক্ষোভ এসএসকেএম নিয়ে

বছর দুই আগে চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে উডল্যান্ডস এবং এসএসকেএমের বিরুদ্ধে। বীরভূমের বীরেন্দ্রকুমার দত্ত মারা যাওয়ার পরে তাঁর ছেলে টুটুল দত্ত ওই অভিযোগ করেন।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

চিকিৎসায় গাফিলতি ও তথ্য গোপন সংক্রান্ত মামলায় এক বেসরকারি হাসপাতালকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত। অভিযোগকারী পরিবারের বক্তব্য, শুধু বেসরকারি হাসপাতালে নয়, চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছিল সরকারি হাসপাতালেও। তাঁদের প্রশ্ন, সরকারি হাসপাতাল কেন ছাড় পাবে?

রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত অবশ্য সরকারি হাসপাতালকেও পরবর্তী শুনানিতে হাজির থাকতে বলেছে। তবে তা নিয়ে হেলদোল নেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের।

বছর দুই আগে চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে উডল্যান্ডস এবং এসএসকেএমের বিরুদ্ধে। বীরভূমের বীরেন্দ্রকুমার দত্ত মারা যাওয়ার পরে তাঁর ছেলে টুটুল দত্ত ওই অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতেই মঙ্গলবার রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে সমস্ত নথি-সহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

মৃতের পরিবার জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বীরেন্দ্রকুমারবাবু সেরিব্রাল অ্যাটাকের সমস্যা নিয়ে উডল্যান্ডসে ভর্তি হন। কয়েক মাস চিকিৎসার পরে হাসপাতাল জানায়, বীরেন্দ্রবাবু নানা সংক্রমণে আক্রান্ত। হাসপাতালে রাখা যাবে না। পরিবারের অভিযোগ, উডল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ জোর করে রোগীকে এসএসকেএমে পাঠান।

২০১৫ সালের ৯ মার্চ বীরেন্দ্রবাবু এসএসকেএমের স্নায়ু বিভাগে ভর্তি হন। পরিবারের অভিযোগ, তিন দিন কার্যত বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় তাঁকে। মৃতের ছেলে জানান, হাসপাতালকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ, কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, কিছুই করার নেই।

৬ এপ্রিল বীরেন্দ্রবাবু মারা যান। পরিবারের দাবি, চিকিৎসকেরা মৃত্যুর কারণ ঠিক মতো বলতে পারেননি। এই গাফিলতির পাশাপাশি চিকিৎসার নথিও পরিবারের হাতে না-দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। বীরেন্দ্রবাবুর এক আত্মীয় জানান, উডল্যান্ডসের কাছে চিকিৎসার নথি চাইলে তারা বলে, টাকা না দিলে কিছু মিলবে না। আর এসএসকেএম জানায়, রোগীর পরিবারকে তথ্য দেওয়ার অনুমতি নেই। আদালত নির্দেশ দিলে তবেই তাঁরা চিকিৎসার নথি রোগীর পরিজনদের দেবেন। সম্প্রতি উডল্যান্ডসকে ৮০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে আদালত।

টুটুলবাবুর অভিযোগ, ‘‘বাবাকে জোর করে এসএসকেএমে পাঠায় উডল্যান্ডস। তখন সেখানে অধিকাংশ চিকিৎসক ছুটিতে ছিলেন বলে জানানো হয়। তাই জুনিয়রেরাই চিকিৎসা করেন। তিন দিন পরে এক জন সিনিয়র চিকিৎসক বাবাকে দেখেন। বাবা কেন মারা গেলেন, তাঁরা সেটাও ভাল করে বলতে পারেননি। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার প্রশ্ন করেও উত্তর মেলেনি।’’

টুটুল দত্তকে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করছেন চিকিৎসক কুণাল সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে জানার অধিকার রয়েছে পরিবারের। সরকারি হাসপাতালও জবাব দিতে বাধ্য। আদালতে উত্তর মিলবে।’’ কিন্তু আদালতের এই নির্দেশ সম্পর্কে কিছু জানেন না বলেই দাবি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের। শুক্রবার এসএসকেএমের অধিকর্তা-চিকিৎসক অজয়কুমার রায় বলেন, ‘‘এখনও এমন কোনও নির্দেশ পৌঁছয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE