Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আগেই মাঠে নামতে হত, বলছে দমকল

বর্ষবরণের মুখে অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে টনক নড়েছিল দমকলের। তাই  শনিবার পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁ পাড়ায় অভিযানে নেমেছিলেন অফিসারেরা। কিন্তু দমকলের একাংশই বলছেন, দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে ওঠা বেশির ভাগ রেস্তোরাঁতেই নজরদারি চালানো সম্ভব হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

বর্ষবরণের মুখে অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে টনক নড়েছিল দমকলের। তাই শনিবার পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁ পাড়ায় অভিযানে নেমেছিলেন অফিসারেরা। কিন্তু দমকলের একাংশই বলছেন, দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে ওঠা বেশির ভাগ রেস্তোরাঁতেই নজরদারি চালানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক জায়গাতেই আগুনের বিপদ নিয়েই বর্ষবরণের আমোদে মেতেছেন লোকজন।

দমকল সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে নজরদারি শুরু করেছিলেন তাঁরা। রবিবার বর্ষশেষের দিনেও কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁয় নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, এ দিন অভিযান চালিয়ে লাভ হবে না। কারণ দুপুর থেকেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড় জমতে শুরু করেছিল। ফলে সে সময় অভিযান চালালে কাজের কাজ কিছুই হত না। এক দমকল কর্তার কথায়, ‘‘এ দিন কোনও ত্রুটি নজরে এলে তা সামলে নেওয়ার উপায় ছিল না। তাই উৎসবের মরসুম পেরোলে নজরদারি অভিযান হবে।’’

শনিবার পার্ক স্ট্রিটে দমকলের অভিযানে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, নতুন পাঁচতারা হোটেল কিংবা সাবেক নামী রেস্তোরাঁ— অগ্নিসুরক্ষায় প্রচুর ফাঁক রয়েছে। অনেক জায়গাতেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে পালানোর পথ নেই। অনেক রেস্তোরাঁতে সে পথ থাকলেও, তালাবন্ধ। একটি বহুজাতিক রেস্তোরাঁ চেনের আউটলেটে তো দমকলের ছাড়পত্রই ছিল না! এ সব দেখে দমকল অফিসারেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, দমকলের কড়া নজরদারি কেন নেই। প্রাক্তন এক দমকল কর্তার কথায়, ‘‘রেস্তোরাঁ-হোটেল খরচ কমাতে অগ্নিসুরক্ষায় ফাঁক রাখবেই। কিন্তু অফিসারদের উচিত নিয়ম মানতে বাধ্য করা।’’ ঘটনাচক্রে, ২০১০ সালে এই পার্ক স্ট্রিটেরই স্টিফেন কোর্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী থেকেছিলেন শহরবাসী। প্রাণ গিয়েছিল ৪৩ জনের।

দমকল সূত্রের খবর, সেই ঘটনার পরেই অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে ঘটা করে অভিযান শুরু হয়েছিল কলকাতায়। তৈরি হয়েছিল কমিটিও। কিন্তু তার দু’বছর পরে আমরি কাণ্ডের সময়েই সেই কমিটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমরির পরেও কমিটি কিছু দিন অভিযান চালিয়েছে। শনিবার পার্ক স্ট্রিটে দমকলের অভিযানের পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে, অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে নিয়মিত নজরদারি আদৌ চলে কি?

দমকলকর্তাদের দাবি, নজরদারি চলে। ফাঁক দেখলে শুধরে নিতে বলা হয়। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে সব হোটেল-রেস্তোরাঁয় তো একবারে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। তাই পর্যায়ক্রমে বেছে নিয়ে আচমকা অভিযান চলে। যদিও ওই বহুজাতিক রেস্তোরাঁ আউটলেটে গত সাত বছরে এক বারও অভিযান হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। দমকলের এক অফিসারের কথায়, ‘‘হয়নি তো বোঝাই যাচ্ছে। তা না হলে আট বছর আগের ছা়ড়পত্র দেখিয়ে ব্যবসা করতে পারত না।’’ তবে দমকলের দাবি, আগুনের বিপদ সামলাতে এ দিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছিল। তৈরি রাখা হয়েছিল বিশেষ দলও।

শুধু আগুন নয়, আল কায়দা জঙ্গি গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক ভিডিও টেপে কলকাতায় হামলা চালানোর হুমকিও রয়েছে। তাই ভি়ড়, বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নাশকতা এড়াতেও তৈরি ছিল কলকাতা পুলিশ। সকাল থেকেই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পুলিশ হাজির ছিল। বিকেল তিনটে থেকেই পার্ক স্ট্রিট চত্বর-সহ বিভিন্ন ভিড়ে ঠাসা এলাকায় মোতায়েন করা হয় কুইক রেসপন্স টিম-সহ অতিরিক্ত বাহিনী ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের। হাজির ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্তারাও। ছুটির দিনে লাউডন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে লালবাজার আসার পথে পার্ক স্ট্রিটের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। বর্ষবরণের পার্টিতে মাদকের রমরমা রুখতে সক্রিয় ছিল কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর অফিসারেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Brigade New Year Eve
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE