Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সোনা-প্রতারণায় ধৃত পাঁচ

পুলিশ সূত্রের খবর, মূলত বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে এই চক্রের লোকজন। ব্যাঙ্কে যাতায়াতকারী লোকজন, বিশেষ করে মহিলাদের ‘টার্গেট’ করে এরা। সেই ব্যক্তিকে কর ছাড়া কম টাকায় সোনার গয়না, কয়েন বিক্রির লোভ দেখিয়ে প্রথমে ছোট ছোট আসল গয়না বিক্রি করত এরা। বিশ্বাস অর্জন করার পরে ইমিটেশন গয়না দিয়ে প্রতারিত করেই গা-ঢাকা দিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২২
Share: Save:

কম দামে সোনা কিনতে গিয়ে কয়েক লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে মিলল ইমিটেশনের গয়না! নিউ টাউনের বাসিন্দা সোনাল মোদির প্রতারিত হওয়ার ঘটনা সামনে আসতেই উঠেপড়ে লেগেছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক জনকে। চক্রের বাকি মাথাদের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে তারা। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সোনার গয়না বা কয়েন বিক্রির এই চক্রের জাল শুধু কলকাতায় নয়, ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশেই।

কী ভাবে ‘টার্গেট’ করে প্রতারকেরা?

পুলিশ সূত্রের খবর, মূলত বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে এই চক্রের লোকজন। ব্যাঙ্কে যাতায়াতকারী লোকজন, বিশেষ করে মহিলাদের ‘টার্গেট’ করে এরা। সেই ব্যক্তিকে কর ছাড়া কম টাকায় সোনার গয়না, কয়েন বিক্রির লোভ দেখিয়ে প্রথমে ছোট ছোট আসল গয়না বিক্রি করত এরা। বিশ্বাস অর্জন করার পরে ইমিটেশন গয়না দিয়ে প্রতারিত করেই গা-ঢাকা দিত।

এ বার সেই ইমিটেশনের গয়না দিতে এসেই পুলিশের জালে ধরা পড়েছে চক্রের পাঁচ জন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা মূলত কানপুর ও ইলাহাবাদের বাসিন্দা। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রচুর নকল গয়না, কয়েন, মোবাইল ও সিম কার্ড।

কী করে ধরা পড়ল পাঁচ প্রতারক?

পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি ব্যাঙ্কে যাওয়ার পথে সোনালের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল এক ব্যক্তির। কথায় কথায় তিনি সোনালকে জানান, খুব কম দামে, কোনও রকম কর ছাড়াই সোনার গয়না ও কয়েন তাঁদের কাছে পাওয়া যায়। কেউ ‘অর্ডার’ করলে তাঁরা বাড়ির কাছাকাছি কোথাও জিনিস পৌঁছে দেন।

এই বাজারে কম টাকায় সোনার গয়না আর কয়েন কেনার লোভ সামলাতে পারেননি সোনাল। যোগাযোগ করার জন্য তিনি ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর নেন, তাঁকে দেন নিজের ফোন নম্বরও। ভাল ক্রেতা পেয়ে পাপ্পু প্রজাপতি নামে ওই ব্যক্তি কয়েক দিনের মধ্যেই কম টাকায় কয়েকটি সোনার গয়না তুলে দেন সোনালের হাতে। গয়নাগুলি আসল সোনার কি না, তা দেখতে সোনাল সোনার কারবারিদের কাছে গিয়ে সেগুলি যাচাই করে দেখেন বেশ ভাল সোনা। কম দামে খাঁটি সোনা কিনতে পেরে লোভ বেড়ে যায় সোনালের। ফলে পরের ধাপে বেশ বড় রকমের ‘অর্ডার’ করেন তিনি।

দ্বিতীয় ধাপে সোনার গয়না দেওয়ার দিন ঠিক হয় ৬ সেপ্টেম্বর। পুলিশ জানিয়েছে, কসবার একটি জায়গায় তা নেওয়ার কথাবার্তা সারার পরে ৯০ হাজার টাকা নিয়ে বেরোন সোনাল। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেখেন, পাপ্পু তো আছেনই। সঙ্গে এক মহিলাও রয়েছেন। ফলে সোনালের সন্দেহ হয়নি। টাকার বান্ডিলটা পাপ্পুর হাতে দিতে তিনি ছোট ব্যাগ-ভর্তি গয়না দেন সোনালকে। এ-ও বলেন, রাস্তার মধ্যে গয়নাগুলি খোলা ঠিক হবে না। সোনালকে পাপ্পু বলেন, ‘‘আগের বার তো ঠকেননি। এ বারও নিশ্চিন্তে নিয়ে যান। বাড়ি গিয়ে দেখে নেবেন।’’

সোনাল আগুপিছু না ভেবে গয়নার ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। সেখান থেকে সোনার দোকানে। কিন্তু দোকানদার তাঁকে যা বললেন, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় সোনালের। তিনি বুঝতে পারেন, পাপ্পু তাঁকে সোনার জল করা ইমিটেশনের গয়না গছিয়েছে! কিন্তু ততক্ষণে প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে ওই প্রতারকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gold Smuggling Arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE