Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রানওয়েতে কুয়াশা, বিঘ্ন পরিষেবায়

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সকাল আটটার পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। বেলা ১১টার পরে কুয়াশা পুরোপুরি কেটে যায়।

আবছা: ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে রানওয়ে। —ফাইল চিত্র।

আবছা: ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে রানওয়ে। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

চারপাশ যেন সাদা চাদরে ঢেকে গিয়েছিল। দেখা যাচ্ছিল না কয়েক হাত দূরের জিনিসও। তার জেরেই শুক্রবার সকালে ব্যাঘাত ঘটল কলকাতা বিমানবন্দরের পরিষেবায়। সূত্রের খবর, ঘন কুয়াশার জন্য এ দিন সকাল ছ’টা থেকে আটটা পর্যন্ত মোট ৩৮টি উড়ানে বিলম্ব হয়েছে। এর মধ্যে আটটি অভ্যন্তরীণ এবং দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানের অবতরণে দেরি হয়েছে। বাকিগুলি দেরিতে উড়েছে।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সকাল আটটার পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। বেলা ১১টার পরে কুয়াশা পুরোপুরি কেটে যায়। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ জানান, বিমানবন্দর লাগোয়া এলাকার বাতাসের ধূলিকণা মিশে যাওয়াতেই এমন গাঢ় কুয়াশা তৈরি হয়েছিল।

শীতকালে কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে যায়। তাই বিমান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। কম দৃশ্যমানতায় যাতে বিমান নিরাপদে অবতরণ করতে পারে, তার জন্য ৪ জানুয়ারি কলকাতা বিমানবন্দরে ক্যাট-৩বি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে ৫০ মিটারের দৃশ্যমানতাতেও বিমান নামতে পারে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর,
এ দিন ৬টা ৬ মিনিট থেকে কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা ১০০ মিটার বা তার নীচে নেমে গিয়েছিল। তাই ক্যাট-৩বি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কুয়াশার মধ্যে বিমানগুলিকে অবতরণ করানো হয়। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে ন’টার মধ্যে ওই ভাবে মোট ২১টি বিমান অবতরণ করে। কিন্তু অবতরণের পরে অনেক ক্ষেত্রেই রানওয়ে থেকে বিমানগুলিকে পার্কিং বে-তে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়েন পাইলটেরা।

বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গাঢ় কুয়াশায় কয়েক ফুট দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে রানওয়ে থেকে পার্কিং বে-তে পৌঁছতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই ‘ফলো মি’ জিপ দিয়ে বিমানগুলিকে নিরাপদে পার্কিং-বে তে আনতে হয়। অর্থাৎ, বিমানের সামনে এক-একটি জিপ আলো জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে এসেছে। সেই আলোর সঙ্কেত দেখে পিছু পিছু বিমান নিয়ে এসেছেন পাইলটেরা। ওই সূত্রের বক্তব্য, এই সমস্যার জন্য রানওয়ে থেকে পার্কিং বে-তে পৌঁছতে এক-একটি বিমানের গড়ে ৩০ মিনিট সময় লেগেছে।

বিমানবন্দরের খবর, উড়ানের ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতা সমস্যা হয় না। কিন্তু উড়ানের পরেই জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রানওয়ে ফাঁকা থাকা প্রয়োজন। সেই আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা ভেবে রানওয়েকে তৈরি রাখতে হয়েছিল। তাই দু’টি আন্তর্জাতিক এবং ২৬টি অভ্যন্তরীণ বিমান দেরিতে উড়েছে। বিমানবন্দরের ফাঁকা রানওয়েতে শীতকালে কুয়াশা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আচমকা এক দিন এমন ঘন কুয়াশা তৈরি হল কেন?

কলকাতা বিমানবন্দরের আবহাওয়া দফতরের প্রধান গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ফাঁকা এলাকা হওয়ায় বিমানবন্দর এলাকায় জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। ভোরের দিকে তাপমাত্রা কমে গেলে সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা তৈরি করে। কিন্তু উত্তুরে হাওয়া জোরদার থাকলে সেই কুয়াশা খুব বেশি জমাট বাঁধে না। এ দিন উত্তুরে হাওয়া দুর্বল থাকার ফলে স্থানীয় ভাবে গাঢ় কুয়াশা তৈরি হয়েছিল। পরিবেশবিদদের একাংশের মতে, গাঢ় কুয়াশার সঙ্গে ধূলিকণা মিশলে তা সহজে কাটতে চায় না। তখন সাধারণ কুয়াশার থেকে দৃশ্যমানতাও কম হয়। যশোর রোড এবং নিউ টাউনে রাস্তা সারাই ও নির্মাণকাজের ফলে প্রচুর ধুলো বাতাসে মিশছে। এই গাঢ় কুয়াশার সেটাও কারণ হতে পারে।

আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, উত্তুরে হাওয়া আপাতত কিছুটা জোর হারিয়েছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও তুলনামূলক ভাবে বেশি রয়েছে। তার ফলে আজ, শনিবার ভোরেও কুয়াশা দানা বাঁধতে পারে বিমানবন্দর এলাকায়। দৃশ্যমানতা ৫০০ মিটারের কাছাকাছি নেমে আসতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE