সমর্থক: শনিবার ফাইনাল। তার আগে সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে (বাঁ দিক থেকে) ফুটবল অনুরাগী ইংল্যান্ডের ট্রেভর থমাস এবং স্পেনের মারিয়া ভিক্টোরিয়া। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
মারাদোনার আমলের ব্রিটিশ বিশ্বকাপ তারকা গ্যারি লিনেকারের আসার খবর নেই কোনও! তবে দিল্লি থেকে এ দেশে ব্রিটেনের হাই কমিশনার ডমিনিক অ্যাসকুইথ কলকাতায় আসছেন আজ, শনিবার।
সল্টলেকের ভরা গ্যালারিতে বসে ইংল্যান্ডের আগামীর তারকাদের জন্য গলা ফাটানোর সুযোগ কে ছাড়ে! অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে প্রথম বার ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ডকে নিয়ে লিনেকারের টুইট-উচ্ছ্বাস দেখে তাঁকে কলকাতায় আসার ডাক দিয়েছিলেন এ শহরে ব্রিটেনের ডেপুটি হাই কমিশনার ব্রুস বাকনেল। লিনেকারের টুইট শেয়ার করে ব্রুস লেখেন, মিস্টার লিনেকার আপনার এক্ষুণি উচিত প্লেন ধরে খেলাটা দেখতে চলে আসা!
ব্রুস নিজে এই বিশ্বকাপে সল্টলেকের গ্যালারিতে ইংল্যান্ডের ‘পয়া মুখ’! গ্রুপ লিগে ইরাক ম্যাচ ছাড়া দেশের সব খেলা, সেমিফাইনালে ব্রাজিল-বধ পর্যন্ত গ্যালারিতে বসে চাক্ষুষ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাদের ছেলেরা যা খেলছে, আশা করছি ফাইনালে খানিকটা বেশি সমর্থন পাবে কলকাতার!’’ কলকাতাকে নিয়ে মুগ্ধ ব্রুসের কথায়, ‘‘কলকাতাই বিশ্বকাপটা জমিয়ে দিয়েছে। ভরা স্টেডিয়ামে এমন খেলা দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা!’’
আরও পড়ুন: ৬৯ বছরেও এ রকম খেলা যায়! কে এই মহিলা
তবে খাস কলকাতায় থেকেও এ সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে বার্সিলোনার যুবক জোনাথনকে। চিলে থেকে আসা মাদার হাউজের স্বেচ্ছাসেবী এক তরুণীর সঙ্গে এই বিশ্বকাপে চিলে ও ইরাকের ম্যাচটা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে স্পেনের খেলাটা দেখা হল কই! তা বলে ভাঙা-ভাঙা নামমাত্র ইংরেজিতে ফুটবল-উত্তেজনার মৌতাত উপভোগে কোনও ক্লান্তি নেই।
মাদার হাউজে কাজ করতে আসা জোনাথন, স্পেনের আলবাসেতের মহিলা মারিয়া ভিক্তোরিয়া এবং ব্রিটেনের প্রবীণ পর্যটক ট্রেভর টমাস ঘটনাচক্রে সদর স্ট্রিটের একই হোটেলে উঠেছেন। বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রাক্-সন্ধ্যায় পেপারব্যাকে মনোযোগী ট্রেভরকে হাল্কা পা টানতে কসুর করলেন না মারিয়া। দু’হাতে ‘ভি’ দেখিয়ে নাটুকে ভঙ্গিতে শোনালেন, লো সিয়েন্তো এস্পানিয়া গানারা! সাদা বাংলায় যাকে বলে, কিচ্ছু মনে করবেন না দাদা, স্পেনই কিন্তু জিততে চলেছে। বই থেকে মুখ তুলে স্পেন সমর্থকদের হাবভাবে মজা পাচ্ছিলেন ট্রেভর। তবে টমাস হার্ডির ডেভন কাউন্টির ট্রেন্টিশু গ্রামের বৃদ্ধ স্মিত হেসে বললেন, ‘‘তোমরা মজা করো, ফাইনালের দিনটা আমার পুরী হয়ে কোনার্কের মন্দির দেখতে যাওয়ার কথা!’’ রিয়াল মাদ্রিদ ভক্ত মারিয়া খুব আফশোস করছিলেন, তাঁর ছেলেরা যদি এখন কলকাতায় থাকত। ওরা তিন জনই ফুটবলের পোকা।
সদর স্ট্রিটে পড়ে থাকা কলকাতার কতিপয় স্প্যানিশ অতিথির জন্য আপাতত হাতের পেন্সিল স্পেনভক্ত রাজেন্দ্রপ্রসাদ পালের স্থানীয় কাফে। স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ের বছরে মাঝরাতেও বড় পর্দা টাঙিয়ে স্পেনভক্তদের জন্য খেলা দেখিয়েছিলেন তিনি। সল্টলেকের ফাইনালও প্রোজেক্টর চালিয়ে দেখাবেন তিনিই। কলকাতায় ইন্দো-হিসপ্যানিক ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকাডেমির অধিকর্তা দিব্যজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, নিয়মিত কলকাতায় থাকা স্পেনের নাগরিকেরা এখন বড় একটা নেই এ শহরে। কিন্তু ফুটবল মাঠে স্পেনের জন্য অনেকেরই মন পড়ে থাকবে। স্প্যানিশ-চর্চা করেন এমন বাঙালিদের মধ্যেও অনেকের মাঠে না যেতে পারার আফশোস রয়েছে খুবই।
ব্রুস বাকনেল বা কলকাতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তোলা পল ওয়ালশদের মতো ফুটবল-চর্চা যাঁরা করেন, তাঁরা অবশ্য ইংল্যান্ড বনাম স্পেন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত। কয়েক মাস আগে অনূর্ধ্ব ১৭ ইউরো ফুটবলের ফাইনালে এই স্পেনই টাইব্রেকারে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, পেনাল্টি মিস করেন সেমিফাইনালে ব্রাজিল ম্যাচের নায়ক ব্রিউস্টার। কিন্তু এই বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড যেন অন্য ইংল্যান্ড! আর স্পেন গ্রুপ লিগে যে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল, তাদের টপকেই ফাইনালে গিয়েছে খুদে ব্রিটিশ সিংহেরা। এই দু’দেশের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে গড়পড়তা বাঙালি দর্শকই বেশ চাপে থাকবে বলে মালুম হচ্ছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের পূর্ব ভারতের অধিকর্তা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী যেমন কাকে সমর্থন করবেন, তা নিয়ে মজা করলেন! ‘‘এমনিতে ব্রিটেনের হাই কমিশনারের সঙ্গে আমাকেও খেলা দেখতে যেতে হবে! কিন্তু প্রিয় লাল-হলুদ জার্সি পরা স্পেনকে ছেড়ে আর কারও জিৎ চাওয়াটাও তো আমার পক্ষে বেশ মুশকিল!’’
বিশ্বকাপ জ্বরেই আপাতত কাবু এই কলকাতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy