Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সুস্থ হয়ে ফ্রান্সে ফিরলেন দম্পতি

শুক্রবার দেশে ফিরে গেলেন জ্যঁ এবং আনেত। কলকাতা থেকে সন্ধ্যার উড়ানে দিল্লি ও সেখান থেকে মাঝরাতের উড়ান ধরে প্যারিসের দিকে রওনা দিলেন ওই ফরাসি দম্পতি।

আনেত ও জ্যঁ লা ক্রোয়া। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র

আনেত ও জ্যঁ লা ক্রোয়া। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

শুক্রবার দেশে ফিরে গেলেন জ্যঁ এবং আনেত।

কলকাতা থেকে সন্ধ্যার উড়ানে দিল্লি ও সেখান থেকে মাঝরাতের উড়ান ধরে প্যারিসের দিকে রওনা দিলেন ওই ফরাসি দম্পতি।

বাড়ি ফেরার জন্য ছটফটই করছিলেন তাঁরা। নয় নয় করে এক মাস কেটে গেল অচেনা-অজানা এই শহরে। ২৮ জানুয়ারি মাঝরাতে ভিয়েতনাম থেকে প্যারিস যাওয়ার পথে অসুস্থ জ্যঁ-কে নিয়ে আচমকাই কলকাতায় নেমে এসেছিল ভিয়েতনাম বিমানসংস্থার উড়ান। সেই থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নির্বান্ধব, অচেনা ভাষার কলকাতাই ছিল জ্যঁ আর তাঁর স্ত্রী আনেত-এর ঘরবাড়ি।

ডায়াবেটিসের রোগী ৬৬ বছরের জ্যঁ লা-ক্রোয়া এমনিতেই শ্বাসকষ্টে ভোগেন। জানুয়ারিতে স্ত্রী আনেতকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন ভিয়েতনামে। ফেরার পথে বিমানের শৌচালয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে কলকাতায় নেমে আসে বিমান। তবে থেকে স্ত্রী আনেতের সঙ্গে জ্যঁ কলকাতায়। প্রথমে নাগেরবাজারের আইএলএস ও পরে উডল্যান্ডসে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ জ্যঁ ফিরছেন বাড়ি। আর সঙ্গে নিয়ে ফিরছেন হরেক অভিজ্ঞতা।

কথায় বলে, বিপদের সময়েই বন্ধু চেনা যায়। তাই অসুবিধার সময়ে বন্ধু কলকাতাকে যথার্থ চিনতে পেরেছেন জ্যঁ আর আনেত। আত্মীয়-পরিজন থেকে বহু দূরে তো বটেই, সেই সঙ্গে ভাষাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ক’টা দিন। বলতে পারা তো দূরে থাক, ওঁরা ফরাসি ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। তবু তাঁর মধ্যেও চিকিৎসায় বা দিন যাপনে সব সময়ে পাশে পেয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকদের ও ফরাসি দূতাবাসকে।

কলকাতায় ফরাসি দূতাবাসের ডেপুটি কনসাল অলিভিয়ের কাস্যাঁর কথায়, ‘‘আমাকে এক দিন অন্তর এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে যেতে হয়েছে। কারণ, চিকিৎসক কী বলছিলেন ওঁরা বুঝছিলেন না। আর ওঁদের ভাষা বুঝতে পারছিলেন না চিকিৎসক। গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে মাঝেমধ্যে কাজ চালানো হয়েছে।’’ অলিভিয়ের জানান, সমস্যা হয়েছিল ভিসা ছাড়া দম্পতিকে এত দিন কলকাতায় রাখা নিয়েও। অলিভিয়েরই বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা করেন।

অচেনা শহরে কেমন কাটল এই এক মাস? জ্যঁ তো প্রায় পুরো সময়টাই হাসপাতালে বন্দি ছিলেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে সাদা বিছানা, মাছ অথবা চিকেনের পাতলা ঝোল — এই ছিল রুটিন। তবে প্রথমটায় আনেত স্বামীর সঙ্গে হাসপাতালে থাকলেও পরে হোটেলে থেকেছেন। কলকাতার বাঙালি খাবার চেখে দেখেছেন। ঘুরে দেখেছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সেন্ট পল্‌স ক্যাথিড্রাল, মল্লিকঘাট ফুলবাজার। ‘‘আবহাওয়া থেকে রাস্তাঘাট, এখানকার সবই আমার দেশের থেকে একদম অন্য রকম। মনে রেখে দেওয়ার মতো’’, শহর ছাড়ার আগে বলে গেলেন আনেত।

তবে খাবারদাবারে মশলা একটু বেশি। যা তাঁর ফরাসি অভ্যাসের পক্ষে খুব একটা অনুকূল নয় সেটা, মুচকি হেসে জানান তিনি। কলকাতার কাছে যা ‘কম’ মশলার মুরগি ও মাছ, তাই খেয়েই চক্ষু ছানাবড়া। তবে মুরগির রেসিপি ভালো লেগেছে বৃদ্ধ ফরাসি দম্পতির। শুক্রবার জ্যঁ হেসে বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে মুরগির ওই রেসিপিটা বানিয়ে দেখতে হবে। মন্দ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

France Couple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE