Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইচ্ছায় ভর দিয়েই ‘ভার’ মুক্তি

ইচ্ছেশক্তিটাই আসল। আর সেটা থাকলে ১৩২ থেকে ৭০-ও হওয়া যায়। বছর দুয়েক আগেও পাপিয়া সেন ভট্টাচার্য যখন নাকতলা থেকে বেলেঘাটার স্কুলে এসে পড়াতেন, তাঁর ওজন ছিল ১৩২ কিলো।

 তখন-এখন: ওজন কমানোর আগে ও পরে পাপিয়াদেবী। নিজস্ব চিত্র

তখন-এখন: ওজন কমানোর আগে ও পরে পাপিয়াদেবী। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০২:১২
Share: Save:

ইচ্ছেশক্তিটাই আসল।

আর সেটা থাকলে ১৩২ থেকে ৭০-ও হওয়া যায়। বছর দুয়েক আগেও পাপিয়া সেন ভট্টাচার্য যখন নাকতলা থেকে বেলেঘাটার স্কুলে এসে পড়াতেন, তাঁর ওজন ছিল ১৩২ কিলো। এই সে দিনই অচেনা দু’জন ব্যক্তি এসে নমস্কার করে বলেছেন, ‘‘কী করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন? অস্ত্রোপচার করলেন, নাকি অন্য কিছু?’’ ৫০ বছরের পাপিয়াদেবী এখন ৭০.৫ কিলো।

তাঁর দাবি, অস্ত্রোপচার নয়, সকাল-রাত ঘাম ঝরানো শারীরচর্চাও নয়, স্রেফ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেই এটা সম্ভব হয়েছে। সারা দিনে ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট মেপে খান। স্যুপ, আনাজ, স্যালাড— এই হচ্ছে তাঁর প্রধান খাদ্য।

এ ভাবে দু’বছরে ৬২ কিলোগ্রাম ওজন কমানো কি সম্ভব? চিকিৎসক স্বাতী চক্রবর্তী গত কয়েক দশক ধরে মানুষের এই খাদ্যাভ্যাস (ডায়েট) নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মোটিভেশন বা ইচ্ছেশক্তিই আসল। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে, শারীরচর্চা করে দু’বছরে ৫০ কিলোগ্রাম ওজন কমানোর ঘটনা আমিই জানি।’’ স্বাতীদেবীর কথায়, অনেকেই শুরু করেও কিছু দিনের মধ্যে ইচ্ছাশক্তিটা হারিয়ে ফেলেন। অনেকে খাবারের আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেন না। এই খাদ্যাভ্যাস ধরে রাখাই মূল মন্ত্র।

স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে সংসার পাপিয়াদেবীর। তাঁর দাবি, ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ার সময়েই ৮০ কিলো ওজন ছিল তাঁর। মুর্শিদাবাদে বেড়ে ওঠা। ১৮ বছর বয়সে বিয়ে। ১৯৯১-এ মেয়ের জন্মের সময়ে পাপিয়াদেবীর ওজন ছিল ১০০ কেজিরও বেশি। বহু ডায়েটেশিয়ান, যোগ ব্যায়াম কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি।

আরও পড়ুন: বিজেপি কেন বাম পথে, প্রশ্ন মমতার

মেডিসিনের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কোনও মোটা রিকশাওয়ালা দেখতে পান? না। কারণ, তাঁরা খেতে পান কম, শারীরিক পরিশ্রম করেন বেশি। বেশি খেলে ক্যালোরিও বেশি খরচ করতে হবে। পাপিয়াদেবী সেটা পরে উপলব্ধি করে খাদ্যাভ্যাস কমিয়ে ফেলেন। দেখুন গিয়ে, এক সময়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তাঁর।’’

সত্যিই তাই। ২০১৪ সালে রবীন্দ্র সদনে স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে আর দাঁড়াতে পারছিলেন না। তখন তাঁর ওজন ১৩২ কিলো। চিকিৎসক জানান, হাঁটু প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু, ওজন না কমালে সেটা করেও লাভ হবে না। মরিয়া হয়ে যোগাযোগ করেন বেরিয়াট্রিক সার্জারির জন্য। ঠিক হয়, অস্ত্রোপচার করা হবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন, যাঁরা ওই অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, তাঁদের জীবনে বহু বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে। পাপিয়াদেবীর কথায়, ‘‘আমার পক্ষে ওই বিধিনিষেধ মেনে চলা সম্ভব ছিল না।’’

২০১৫ সালের জুলাই থেকে পাপিয়াদেবী যোগাযোগ করতে শুরু করেন ডায়েটেশিয়ানদের সঙ্গে। নেট ঘেঁটে তুলতে থাকেন দেশ-বিদেশের সাফল্যের কাহিনি। সেগুলি ধীরে ধীরে প্রয়োগ করতে শুরু করেন নিজের উপরে। নিয়মিত খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন ভাত-রুটি।

বেরিয়াট্রিক সার্জেন বাল সুব্রহ্মমণ্য রামনের কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে সবাইকে বিধিনিষেধ মানতে হয়, এটা ঠিক নয়। হয়তো উনি যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের হয়েছে। যে পদ্ধতিতে খাদ্যাভ্যাস বদলে তিনি ৬২ কিলো ওজন কমিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি ধরে রেখে সেটা দুই শতাংশ লোকের ক্ষেত্রে সম্ভব ঠিকই। কিন্তু, পরবর্তীকালে তাঁদের আবার ওজন বাড়তে দেখেছি। ইচ্ছাশক্তিটা সাময়িক, অভ্যাসটা স্থায়ী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weight Loss Diet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE