মহাষ্টমীর সন্ধেয় সাধারণত দশ হাত গজায় দীনেশ যাদবেরও।
সল্টলেকের এ-ই ব্লক পার্ট ওয়ানের মাঠে তাঁকে ঘিরে মস্ত জটলা। ফলে দম ফেলার ফুরসত থাকে না পোড়খাওয়া ফুচকাওয়ালার। এ-হেন দীনেশকে বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টা নাগাদ কিন্তু ব্যাজার মুখেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।
বিকেলে সেই যে আকাশ কালো করে ঝেঁপে বৃষ্টি এসেছিল, তার পর থেকেই ভিড় পাতলা প্যান্ডেলে। তাই উৎসবের পারদ তুঙ্গে ওঠার সময়টাই কেমন যেন পানসে ঠেকছে। ‘‘বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল,’’ বললেন দীনেশ। মণ্ডপের কাছে বা দূরের অবস্থান অনুযায়ী ফুচকা-ভেলপুরি-কফি-আইসক্রিম থেকে ডালের বড়ার চিলতে স্টলকেও ব্যবসা করার জন্য ৫-১০ থেকে ২০-২৫ হাজার টাকার মাসুল গুনতে হয়। স্থানীয় পুজোকর্তা সুপ্রিয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘হাজার দশেক টাকা ভাড়া গুনেও অনেক ফুচকাওয়ালা গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকার ব্যবসা করেন। লাভ ভালই হয়!’’ কিন্তু বৃহস্পতিবার, মহাপুজোর দিনের বৃষ্টি শুধু যে মণ্ডপ-পাগল দর্শকদের মনমরা করে দিয়েছে, তা-ই নয়! মহোৎসবের এই ক’টা দিনে যাঁরা বচ্ছরকার বাড়তি ব্যবসার দিকে তাকিয়ে থাকেন, সেই খুদে দোকানদারদেরও কপালে হাত।
ফুচকাওয়ালা, ফেরিওয়ালাদের পাশাপাশি চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন ঝালমুড়ি-ভেলপুরি বিক্রেতারাও। বালিগঞ্জ কালচারালের মণ্ডপ চত্বরে জলের বোতল-কফির পসরা নিয়ে হাজির সাথী দে বা বেলগাছিয়ায় সার্কাস মাঠের পুজোর মেলায় চুড়ির দোকানদার সত্য দাসের দশাও তথৈবচ। সাথী বললেন, ‘‘পুজোর ক’টা দিন গড়িয়াহাটে বরের ফুটপাথের দোকান বন্ধ থাকে। তাই রোজ বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত জলের বোতল আর কফির বিক্রিবাটায় যতটুকু যা হয়, সেটা ঘরে তোলার দায়িত্ব আমারই। কিন্তু এত ধকল সয়েও লাভ হচ্ছে কই!’’ হাজার দুয়েক টাকায় স্টল নিয়েছেন সাথী। বসছেন পঞ্চমী থেকে। অষ্টমীতে তাঁর অভিজ্ঞতা, বৃষ্টির পরে ভিড় হলেও লোকে জলের বোতলের দিকে বড় একটা ঘেঁষছে না। বেলগাছিয়ায় পুজোর মেলার মাঠে কিছু দোকানকে ফুট-পিছু ২০০ টাকা হারে স্টল দেওয়া হয়। ১৫ দিনের মেলায় ১০ ফুটের দোকানের ভাড়া ২০০০ টাকা। ‘‘বৃষ্টি চলতে থাকলে কিন্তু পুজোর শেষে অনেক দোকানদারই ব্যবসা ভাল হয়নি বলে কম ভাড়া নিতে অনুরোধ করবেন,’’ বলছেন পুজোর কর্তা সায়ন্তন গুহঠাকুরতা।
সত্য-সাথীরা মহানগরীতে মার খাচ্ছেন ব্যবসায়। সল্টলেকের বিভিন্ন পুজো-চত্বরের ছোট দোকানদারদের পরিস্থিতি আরও বেশি ঘোরালো। এমনিতেই যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের দৌলতে ওই তল্লাটের ছোটখাটো খাবারের দোকান তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই পুজো মণ্ডপের দিকে ঝাঁপিয়েছেন ফুচকা-ভেলপুরি-আইসক্রিম বিক্রেতা, মায় বেলুনওয়ালারাও। পুজোর সময়ে এফ-ডি পার্ক, বি-জে ব্লক, এ-এইচ ব্লক, লাবণী কিংবা বড় রাস্তা লাগোয়া এ-জে ব্লকের তল্লাট এমনিতে বেশ সরগরম থাকে। সেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে খুদে ব্যবসায়ীদের ভাঁড়ারেও। কিন্তু এ বার হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টির হানায় সর্বত্রই হাহাকার করতে হচ্ছে ছোট দোকানদারদের।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এই পুজো কিছুতেই তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে না, জানেন সত্য-সাথীরা। অষ্টমীতে মার খেয়ে সব সাথী, সব সত্যেরই প্রার্থনা, উৎসবের শেষটুকু অন্তত খটখটে কাটুক। একটু হাসি বরাদ্দ হোক তাঁদের জন্যও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy