Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নানা কারণে বিক্ষোভ বিভিন্ন স্কুলে

কোথাও ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ, কোথাও স্কুলের দুই শিক্ষিকার মধ্যে টানাপড়েন, কোথাও আবার শিক্ষিকার পদত্যাগের প্রতিবাদে ক্ষোভ। তা ঘিরেই সোমবার দিনভর অভিভাবককের বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তপ্ত রইল শহরের বিভিন্ন এলাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৪০
Share: Save:

কোথাও ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ, কোথাও স্কুলের দুই শিক্ষিকার মধ্যে টানাপড়েন, কোথাও আবার শিক্ষিকার পদত্যাগের প্রতিবাদে ক্ষোভ। তা ঘিরেই সোমবার দিনভর অভিভাবককের বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তপ্ত রইল শহরের বিভিন্ন এলাকা।

পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভের জেরে এ দিন অবরোধ হয় পার্ক স্ট্রিটে। সকালে জি‌উইশ গার্লস স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সিআইসিএসই বোর্ডের অধীনস্থ এই স্কুলের কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে বার্ষিক ফি চার হাজার থেকে এগারো হাজার করেছিলেন। এ বছর আবার কর্তৃপক্ষ বার্ষিক ফি ৫০০০ টাকা বাড়িয়েছেন। বেশি দামে স্কুল থেকেই তাঁদের বই-খাতা-ইউনিফর্ম কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

বিক্ষোভের সময়ে স্কুলে পৌঁছেছিলেন পরিচালন সমিতির চেয়ারপার্সন এ এম কোহেন। ঢোকার মুখে তাঁর গাড়ি ঘেরাও করা
হয়। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাঁর গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে। তবে পুলিশের সঙ্গে অভিভাবকদের সাময়িক বচসার পরে ঘেরাও মুক্ত হন চেয়ারপার্সন। পরে পরে স্কুল চত্বরে ঢুকে মদের বোতল পড়ে থাকতে দেখে আবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা। শেষে ২৮ তারিখ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস পেলে বিক্ষোভ থামে। এ বিষয়ে স্কুলের অধ্যক্ষ ইন্দিরা ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘স্কুলের উন্নয়নে বহু টাকা ব্যয় হয়েছে। তাই ফি বৃদ্ধি ছাড়া উপায় ছিল না। আগেই নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছিল।’’ তাঁর ঘোষণা, ‘‘তিন মাসের মধ্যে টাকা না মেটালে নিয়ম মেনে স্কুল থেকে টিসি দেওয়া হবে।’’ সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ফের এমন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এ দিনই নিউ টাউনের একটি সিবিএসই স্কুলে ফি বৃদ্ধি-কাণ্ডে রফা সূত্র না মেলায় সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় পঠনপাঠন। ৫ মে পর্যন্ত
স্কুল বন্ধ রাখার নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানায়, গত এক মাস ধরেই স্কুলের অভিভাববকদের সংগঠনের সঙ্গে মত বিরোধ তৈরি হচ্ছিল কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ, ব্যাপক হারে ফি বৃদ্ধি করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফি কমানোর দাবিতে এর আগে দু’বার ধর্ণায় বসেন অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের সংগঠনের সদস্য শেখ মাসুদ রহমানের অভিযোগ, এ দিন স্কুল কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ফি বহাল রাখার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।
পুলিশ নিজেও আলোচনার টেবিলে বসে বার্ষিক ১০ শতাংশ ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাব মানেননি। স্কুলের তরফে কেউ অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেননি।

স্কুলে ফি বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘এই ধরনের বিক্ষোভ, পথ অবরোধকে আমরা বরদাস্ত
করব না। সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাক, প্রয়োজনে সরকারের কাছেও আসুক। আমরা স্কুলগুলি সম্পর্কে তথ্য নিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী সব বেসরকারি স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসবেন। জনপ্রতিধিনিদের বলছি, আপনারা আগ বাড়িয়ে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না।’’ তবে আইসিএসই বোর্ডের এক কর্তা এ দিন জানিয়েছেন, ফি বৃদ্ধির সঙ্গে বোর্ডের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একেবারেই স্কুল পরিচালন সমিতির বিষয়।

অন্য দিকে, এ দনিই সকালে ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁদের মেয়েদের কোনও ক্লাসঘর না থাকার প্রতিবাদে। অভিযোগ, দুই বিভাগের প্রধান শিক্ষিকার মধ্যে টানাপড়েনের জেরেই মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে তাঁদের মেয়েদের। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষিকা ঝর্ণা সরকারের অভিযোগ, পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়লেও উচ্চমাধ্যমিকের প্রধান শিক্ষিকা ক্লাস দেননি। দু’টি ঘরে তালা দিয়ে রেখেছেন। উচ্চমাধ্যমিকের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায় বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরেই পড়ুয়া বৃদ্ধি হওয়ায় দু’টি ঘর দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ফের পড়ুয়া বৃদ্ধির কথা জানানো হয়। কিন্তু উনি (ঝর্ণাদেবী) সংখ্যাটা জানাননি।’’

বিক্ষোভ হয় পঞ্চসায়রের শিশু নিকেতন প্রাথমিক স্কুলেও। সেখানে প্রতিবাদ হয় প্রধান শিক্ষিকা পৌষালী পালের পদত্যাগের বিরোধীতা করে। অভিভাবকদের দাবি, পৌষালীদেবীকে তাঁদ পদে বহাল রাখতে হবে। পরে বৈঠক করে পৌষালীদেবী জানান, ব্যক্তিগত কারণে নিজের ইচ্ছায় সরে যাচ্ছেন তিনি। তখন বিক্ষোভ বন্ধ করেন অভিভাবকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Road Blocking Park Street
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE