Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
সোনারপুর

চাঁদা না পেয়ে ‘মারধর’ জিমের মালিককে

এ বার এক জিম মালিকের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল শাসক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। সপ্তাহখানেক আগে সোনারপুর থানার রাজপুরে রঞ্জিত মণ্ডল নামে ওই জিম মালিকের উপরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জীব সরকার ওরফে পিঙ্কু সদবলে চড়াও হয়ে মারধর করে বলে সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এই জিমের মালিকের উপর হামলা

এই জিমের মালিকের উপর হামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০১:২৩
Share: Save:

এ বার এক জিম মালিকের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল শাসক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। সপ্তাহখানেক আগে সোনারপুর থানার রাজপুরে রঞ্জিত মণ্ডল নামে ওই জিম মালিকের উপরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জীব সরকার ওরফে পিঙ্কু সদবলে চড়াও হয়ে মারধর করে বলে সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেছে পিঙ্কু ও দলবলের আচরণও ধরা পড়েছে। রঞ্জিতবাবুর অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের বিজয় উৎসব উপলক্ষে পিঙ্কুর কয়েক জন অনুগামী ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছিল। রঞ্জিতবাবু ১০০০ টাকা দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু চাহিদা অনুয়ায়ী টাকা না পাওয়ায় ওরা বুঝে নেওয়ার শাসানি দিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘গত ১৯ জুলাই আমার জিমের দুই সদস্যের মধ্যে বচসা হয়। দু’জন জিমের বাইরে মারামারিও করেন। ওই রাতে ওই দু’জনের মধ্যে এক জন জিমে ছিলেন। কয়েক জন বহিরাগত তাঁকে বাইরে আসার জন্য বলতে থাকে। তিনি বাইরে যাওয়ার পরেই পিঙ্কুর কয়েক জন অনুগামী তাঁকে মারধর করে। পরে আমাকেও জিমের বাইরে আসার জন্য ডাকা হয়। আমি বেরোইনি। তার পরেই আচমকা পিঙ্কু ও তার দলবল জিমের ভিতরে এসে আমাকে মারতে শুরু করে। রাতে আমি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাই। তার পরে সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু এখনএ পর্যন্ত পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।’’

সব অভিযোগ অস্বীকার করে পিঙ্কু বলেন, ‘‘ওই জিমে রাত পর্যন্ত সাউন্ড বক্স বাজানো হয়। মধুচক্রও চালানো হয় বলে আশপাশের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছিলেন। ১৯ জুলাই রাতে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই জিম ঘিরে ফেলেন। মালিক রঞ্জিত মণ্ডলকে মারধর করার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। ওই ঘটনার খবর আসার পরেই আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে রঞ্জিতকে বাড়ি চলে যেতে বলি। কিন্তু তিনি বচসায় জড়িয়ে পড়েন। আমি ওখানে তোলাবাজির জন্য যাইনি।’’ মধুচক্রের বিষয়ে জিম মালিকের বক্তব্য, ‘‘আমার জিমে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি চলছে। আমি পুলিশকে সব জানাব। পুলিশ তদন্ত করুক।’’

কে এই পিঙ্কু? জানা গিয়েছে, পিঙ্কু রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান শান্তা সরকারের দাদা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূলে কোনও বিশেষ পদে নেই তিনি। তা সত্ত্বেও তিনি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় ‘সর্বঘাটে কাঁঠালি কলা’ হিসেবেই পরিচিত। তিনি পুরসভায় সমান্তরাল প্রশাসনও চালু করেছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, পিঙ্কুর অনুমতি ছাড়া রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় একটি ফাইলও নড়তে পারে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূল নেতাদের একাংশের কথায়, কলকাতার মেয়র তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ পিঙ্কু ও তাঁর বোন শান্তা। অভিযোগ, শোভনবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই পিঙ্কু ও তাঁর বোন সর্বত্র ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন। রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, শান্তা সরকার বিকেল চারটের পরে অফিসে আসেন। কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। মাস কয়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কর্মিসভায় কালীঘাটে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকায় পুকুর ভরাট নিয়ে ভৎসর্না করেছিলেন।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই জিমের পরিচালকের বিরুদ্ধেও মধুচক্র ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক রং বিচার না করে সমস্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। পুলিশ তদন্ত করুক। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার।’’

তবে ঘটনার পরে প্রায় চার দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মারধর ও হামলার অভিযোগ দায়ের করার পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন রঞ্জিতবাবু। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এফআইআর-এ সঞ্জীব সরকার ওরফে পিঙ্কুর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ঘটনার তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, ওই দিনের ঘটনায় পিঙ্কু হাজির ছিলেন। ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gym TMC donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE