এনআরএস হাসপাতালে প্রহৃত হকার কৃষ্ণ প্রসাদ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
স্ত্রী ও ভাইপোকে সঙ্গে নিয়ে রবিবার সকালে শিয়ালদহের উড়ালপুলের তলায় দোকান খুলতে এসেছিলেন এক হকার। কয়েক জন দুষ্কৃতী আচমকাই তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণের প্রতিবাদ করতেই ধারালো অস্ত্র বার করে দুষ্কৃতীরা। কোপানো হয় ওই তিন জনকে।
পুলিশি সূত্রের খবর, রবিবার সকালের ওই ঘটনার পিছনে আছে দাদাগিরি ও তোলাবাজি। অস্ত্রের কোপে তিন জনেই আহত হন। হকারের স্ত্রীর আঘাত গুরুতর। তাঁকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্য দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ওই হকারের অভিযোগের ভিত্তিতে অশোক পাল-সহ সাত জনের বিরদ্ধে মারধর, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ‘ভাড়া’ নিয়ে গোলমালের জেরেই ওই হকার, তাঁর স্ত্রী ও ভাইপোকে মারধর করা হয়েছে। ওই হকার দীর্ঘদিন ধরেই উড়ালপুলের তলায় ব্যবসা করছেন। অশোক জায়গাটির ‘ভাড়া’ বাবদ ওই হকারের কাছ থেকে দৈনিক ৯০ টাকা নিত বলে অভিযোগ। পুলিশ জেনেছে, বেশ কয়েক দিন ধরে অশোক বেশি ভাড়া চাইছিল। না-হলে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু ওই হকার বাড়তি টাকা দিতে রাজি হননি। রবিবার তিনি দোকান খুলতে গেলে অশোক এবং তার দলবল তাঁকে বাধা দেয়। হকার রুখে দাঁড়ানোয় তাঁদের মারধর করা হয়, কোপানো হয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে।
প্রশ্ন উঠছে, উড়ালপুল, তার নীচের রাস্তা তো সরকারের। সেখানে কেউ কাউকে জায়গা ভাড়া দেয় কী ভাবে? সরকারি জায়গা নিয়ে খাস কলকাতায় তোলাবাজি চলছে, অথচ পুলিশ নিষ্ক্রিয় আছে কী করে?
সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। পুলিশের নিচু তলার অভিযোগ, সারা মহানগরীতেই ‘ডালা’ ব্যবস্থায় এই ধরনের তোলাবাজি ও দাদাগিরি চলছে। সব রাজনৈতিক দলই তা জানে না। তবু কোনও প্রতিকার নেই।
কৃষ্ণ প্রসাদ নামে আহত ওই হকার জানান, তিনি বৈঠকখানার বাসিন্দা। গেঞ্জির ব্যবসা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে টাকা দিয়ে আসছেন অশোককে। ইদানীং অশোক ভাড়া বাড়ানোর চাপ তো দিচ্ছিলই। সেই সঙ্গে অগ্রিম বাবদ এক লক্ষ টাকাও চেয়েছিল। রবিবার সেই টাকা দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল অশোক। ওই হকার বলেন, ‘‘টাকা না-দেওয়ায় অশোক ১০-১২ জন সঙ্গী নিয়ে হামলা করে। বেধড়ক মারধর করা আমাদের।’’
এ দিনই তোলাবাজির অভিযোগে একবালপুরে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম শামিম আহমেদ ওরফে সোনু এবং মহম্মদ শাফিক। শুক্রবার ক্যামাক স্ট্রিটের বাসিন্দা শামসের সিংহ কাপানি হেস্টিংস থানায় তোলাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, ওই দিন হসপিটাল রোড দিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরবাইকে চেপে তিন যুবক তাঁর রাস্তা আটকে টাকা চায়। না-দেওয়ায় তারা তাঁর মোবাইল এবং কিছু টাকা কেড়ে নেয়। তদন্তে নেমে পুলিশ এ দিন দুই অভিযুক্তকে পাকড়াও করে। তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে। আজাদ ওরফে রাকা নামে তৃতীয় অভিযুক্ত ফেরার। তার খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy