Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজনীতির জাঁতাকলে অনিশ্চিত হকারদের ভবিষ্যৎ

সম্প্রতি অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপের জন্য কিছু এলাকা থেকে ঝুপড়ি ও অস্থায়ী দোকান সরিয়ে দেওয়া হয়। তখনও প্রতিবাদ করেছিলেন হকাররা।

দোটানা: দোকান সরানো নিয়ে শুক্রবার রাতে প্রতিবাদে হকারেরা।

দোটানা: দোকান সরানো নিয়ে শুক্রবার রাতে প্রতিবাদে হকারেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৩
Share: Save:

ক্ষমতাসীন দলের একাংশের বক্তব্য, সল্টলেক হকারমুক্ত করা হবেই। জায়গা দখল করা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। আবার দলেরই অন্য অংশ বলছে, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসা এই মানুষদের এ ভাবে তুলে দেওয়া যায় না। তাঁদের রুজি-রোজগারের কী ব্যবস্থা হবে?

এই দুই বিরুদ্ধ মতের জেরে তুমুল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন বিধাননগরের হকারেরা। রাস্তা থেকে তুলে দেওয়া হলে তাঁদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে কি না, তারও আশ্বাস না মেলায় অথৈ জলে পড়েছেন তাঁরা।

সম্প্রতি অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপের জন্য কিছু এলাকা থেকে ঝুপড়ি ও অস্থায়ী দোকান সরিয়ে দেওয়া হয়। তখনও প্রতিবাদ করেছিলেন হকাররা। প্রশাসন বলেছিল, সৌন্দর্যায়নের জন্য তাঁদের সরানো হল। হকাররা অবশ্য এটি উচ্ছেদ হিসেবেই দেখেছিলেন। বিশ্বকাপের পর অনেকেই ফের পুরনো জায়গায় ব্যবসা শুরু করেন। তখন প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে অস্থায়ী দোকান। না হলে প্রশাসনই সরিয়ে দেবে।

সেই মতো শুক্রবার সন্ধ্যায় করুণাময়ীর কাছে অভিযান শুরু হয়। কিন্তু হকারদের প্রবল প্রতিরোধের জেরে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য
হয় বিধাননগর পুর প্রশাসন। শাসক দলের পতাকা নিয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন অনেকে। এর পরে সারা রাত হকারেরা এলাকা ছেড়ে নড়েননি। এক বার সরে গেলে আর ফিরতে দেওয়া হবে না, এই আশঙ্কায় শনিবারও সারা দিন বসে থাকেন তাঁরা।

হকার সরানো নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে বিভিন্ন মহলে। পুরসভার বক্তব্য, সরকার চাইছে সল্টলেক সাজানো হোক। বিশ্বকাপের সময়ে
যে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছিল, তার জন্য প্রশংসা মিলেছে। বাসিন্দারাও চান, ফুটপাথ দখলমুক্ত হোক। হকারদের জন্য কোনও বিকল্প
ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে।

শনিবার সন্ধ্যায় খুলেছে দোকান। করুণাময়ীতে। ছবি: শৌভিক দে

বিধায়ক সুজিত বসুর অনুগামীদের আবার বক্তব্য, সল্টলেকে নির্দিষ্ট অংশে হকার সরানো হচ্ছে। রাজারহাট, নিউ টাউন, কলকাতা-সহ অন্য জায়গাতেও হকারেরা দিব্যি ব্যবসা করছেন। কোথাও সরানো হলেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলেরই নীতি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা যাবে না। তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে সল্টলেকের জন্য আলাদা নিয়ম কেন।

মহিষবাথানের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস মাছের ব্যবসা করেন। তাঁর দাবি, বিকল্প ব্যবস্থা হোক। মানস দাস ব্যবসা করতেন সেক্টর ফাইভে। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বকাপের সময়ে দোকান তুলে দেওয়া হল। কবে বসতে পারব জানি না।’’

খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনায় দলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘দল কারও উপার্জন বন্ধ করতে চায় না। কিন্তু সরকারি জমি, রাস্তা দখল করে ব্যবসা শুরু করলাম, তা হয় না। বিকল্পের কথা ভাবছি। উন্নয়ন বন্ধ করা যাবে না।’’

বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এটা বাম আমলের অসুখ। গোটা সল্টলেক জুড়েই অফিস, মল, বিনোদনের জায়গা গড়ে উঠেছে। রোজ বহু মানুষের যাতায়াত সেখানে। খাবারের চাহিদাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আগে রাজনৈতিক দলগুলির মদতে হকাররা বসেছেন। এখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, যা করা হবে সৌন্দর্য বজায় রেখে, সুশৃঙ্খল ভাবে করা হোক।

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত শনিবার জানান, সৌন্দর্যায়নের স্বার্থে হকার সরানো চলতে থাকবে। দলের উচ্ছেদনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলুন। মেয়র হিসেবে বলছি, রাস্তাঘাট দখল করা চলবে না। বাসিন্দাদের দাবির দিকটিও দেখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE