বোতল বা জারবন্দি নকল জলের কারখানা ছড়িয়ে আছে রাজ্য জুড়ে। এ বার সেই সব নকল জলের কারখানার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতর ও রাজ্য পুলিশের শাখা (ব্রাঞ্চ) যৌথ ভাবে অভিযান চালাবে।
নকল জল তৈরিতে যেমন জালিয়াতি, তেমনই জড়িয়ে মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি। কারণ, সে ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ জল ভেবে মোটা টাকা দিয়ে কিনে যা পান করা হচ্ছে, সেটা নিরাপদ কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়।
নামী সংস্থার সিল, মোড়ক, ছাপ নকল করে বোতলে বা জারে জল ভরে বিক্রি করছে রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা দু’হাজারেরও বেশি কারখানা। এমনটাই দাবি বোতল বা জারবন্দি পানীয় জল উৎপাদক সংস্থাগুলির সংগঠনের। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার ম্যানুফ্যাকচারার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ ভবানী ভবনে শুক্রবার রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)-কে এ কথা জানিয়েছে। কয়েকটি নামী সংস্থার প্রতিনিধি এ দিন ইবি-র অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গত ১৭ এপ্রিল নিউ টাউনের হাতিয়াড়া পূর্ব পাড়ায় নকল জলের একটি কারখানার হদিস পায় ইবি। একটি নামী সংস্থার সিল, মোড়ক, ছাপ নকল করে ২০ লিটারের জারে জল ভরে বিক্রি করত ওই অসাধু চক্রের লোকজন। ইবি-র অফিসারেরা তখনই বলেছিলেন, এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তাঁদের আশঙ্কা যে সত্যি, সেটাই এ দিন জল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সংগঠনের কথায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনই উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে নকল জল তৈরির একটি কারখানাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চক্রের লোকদের।
ইবি-কে জল প্রস্তুতকারকেরা বলেছেন, উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা-অশোকনগরে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে নকল জলের কারখানা রয়েছে প্রায় ৩০০টি। এ দিনের বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের এক যুগ্মসচিবও ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি জেলায় এক জন খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক আছেন। ইবি সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, জল প্রস্তুতকারকদের সংগঠন নকল জলের কারখানাগুলির তালিকা দেওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে জেলার খাদ্য সুরক্ষা অফিসার এবং ইবি-র আধিকারিকদের নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালানো হবে।
জল প্রস্তুতকারকদের সংগঠনের সভাপতি সুকমল পাল বলেন, ‘‘যে সব সংস্থার জলের বোতল বা জারে ‘আইএসআই’ (ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস) কিংবা ‘এফএসএসএআই’ (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া)-এর ছাপ আছে, শুধু সেই সব জলই কিনে পান করা নিরাপদ।’’ তবে সুকমলবাবু সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘‘ওই দু’টি ছাপ নকল করেও অনেক সময়ে জল বিক্রি হচ্ছে। ফলে, নকল ধরতে সমস্যা।’’ সংগঠনের হিসেবে, রাজ্যে ১৮৫টি জল প্রস্তুতকারক সংস্থার বোতল বা জারের গায়ে মোড়কে ওই দু’ধরনের ছাপ আছে। কিন্তু এর বাইরেও দু’হাজারের বেশি সংস্থা জল তৈরি করছে এবং তারাই এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে সংগঠনের দাবি।
ইবি ও স্বাস্থ্য দফতরের আশা, নকল জলের কারখানাগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সেগুলি বন্ধ করা গেলে সমস্যা অনেকটা কমবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy