Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচের প্যাঁচে পথ, দিনভর হাঁসফাঁস শহর

দিনের শুরুটা হয়েছিল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার আমানতকারী এবং এজেন্টদের সুরক্ষা মঞ্চের মিছিল দিয়ে। দুপুরে ওই সংগঠনের বিক্ষোভ-সমাবেশ ছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। বেলা ১১টার পরে হাওড়া স্টেশন থেকে প্রথম মিছিলটি শুরু হয়।

অপেক্ষা: কখন নড়বে গাড়ি। অধীর ট্যাক্সিচালক। শুক্রবার, মেয়ো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

অপেক্ষা: কখন নড়বে গাড়ি। অধীর ট্যাক্সিচালক। শুক্রবার, মেয়ো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০০
Share: Save:

এ যেন ‘পঞ্চবাণ’!

যাতে শুক্রবার সকাল থেকে নাস্তানাবুদ হতে হল শহরবাসীকে।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কাছে প্রতারিত আমানতকারী ও এজেন্টদের ধর্মতলায় সমাবেশ, রাজস্থানের ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূলের বিক্ষোভ মিছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মৌলালি মোড়ে যান চলাচল আটকে মহিলা সংগঠনের মানবশৃঙ্খল, বিলগ্নীকরণের প্রতিবাদে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল সংস্থার কর্মীদের মিছিল এবং কলেজ স্ট্রিটে পৃথক দুই দাবিতে দুই ছাত্র সংগঠনের পরপর বিক্ষোভ সমাবেশ— এই পঞ্চবাণের গেরোয় আটকে দিনভর প্রবল ভোগান্তি হল শহরবাসীর। এ দিন সকাল থেকেই তীব্র যানজটে পড়ে দফায় দফায় স্তব্ধ হয়েছে শহরের গতি।

দিনের শুরুটা হয়েছিল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার আমানতকারী এবং এজেন্টদের সুরক্ষা মঞ্চের মিছিল দিয়ে। দুপুরে ওই সংগঠনের বিক্ষোভ-সমাবেশ ছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। বেলা ১১টার পরে হাওড়া স্টেশন থেকে প্রথম মিছিলটি শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ব্রেবোর্ন রোড, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট হয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পৌঁছন। কিছু পরে ওই সংগঠনের আরও একটি মিছিল শিয়ালদহ থেকে মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছয়। দুপুরের ব্যস্ত সময়ে ওই দুই মিছিলের জেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ব্রেবোর্ন রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে তীব্র যানজট হয়। সেই সঙ্গে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ বন্ধ করে সমাবেশ করার ফলে ধর্মতলা হয়ে হাওড়ার দিকে যাওয়া সব বাসকে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দু’টি রাস্তা বন্ধ থাকায় এসপ্ল্যানেড ইস্ট, মেয়ো রোড, রেড রোড-সহ সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু রাস্তাতেও যানজট হয়। ব্যাহত হয় অফিসপাড়ার যান চলাচল।

ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দুই মিছিলের রেশ কাটার আগেই মৌলালিতে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানবশৃঙ্খল করে মহিলা গণতান্ত্রিক সমিতি। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে ওই প্রতিবাদ চলার জেরে শিয়ালদহ চত্বরে ব্যাপক যানজট হয়। যার জেরে সিআইটি রোড, লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোড, এ জে সি বসু রোড এবং এপিসি রোডে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়। থমকে যায় বেলেঘাটা মেন রোড ও ক্রিক রো। এর মধ্যেই দুপুর দুটো নাগাদ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হয় রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল সংস্থার কর্মীদের মিছিল। এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে সেটি পৌঁছয় ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে। যার জেরে ফের ধাক্কা খায় শিয়ালদহ এবং মৌলালি।

পুলিশ জানিয়েছে, ধর্মতলা, শিয়ালদহ এবং ডালহৌসি চত্বরে পুলিশ যখন যানজট সামলাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ এবং এসএফআই পৃথক ভাবে দু’টি মিছিল বার করে বিধান সরণি এবং কলেজ স্ট্রিটে। এর ফলে কলেজ স্ট্রিট চত্বর প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে অফিস ছুটির সময়েও। পরিস্থিতি বিচার করে বিভিন্ন রাস্তায় গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর কলকাতার সব রাস্তাতেই কমে যায় গাড়ির গতি।

লালবাজার সূত্রের খবর, অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার আগেই রাজস্থানে প্রকাশ্যে মালদহের বাসিন্দাকে কুপিয়ে, পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে রাস্তায় মিছিল করে তৃণমূল। হাজরা থেকে ধর্মতলার গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত ওই মিছিলের জেরে স্তব্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ কলকাতার বহু রাস্তা। হাজরা থেকে এসপিএম রোড, এটিএম রোড হয়ে জওহরলাল নেহরু রোড, পার্ক স্ট্রিট, মেয়ো রোড হয়ে মিছিল মেয়ো রোডে যায়। পুলিশের দাবি, ওই মিছিলের জেরে এক সময়ে রাসবিহারী মোড় থেকে উত্তরমুখী গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শরৎ বসু রোড দিয়ে। যার ফলে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।

লালবাজার জানিয়েছে, একাধিক মিছিলের জেরে গোটা শহরই এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এগিয়েছে শম্বুক গতিতে। সন্ধ্যার পরে ডালহৌসি, স্ট্র্যান্ড রোড এবং ব্রেবোর্ন রোডের যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ধর্মতলামুখী গাড়ির গতি ছিল কম। সেই সঙ্গে মেয়ো রোড বন্ধ থাকায় সব গাড়িকে ধর্মতলার দিকে পাঠানোয় সেখানকার যানজট আরও তীব্র হয়ে ভোগান্তি বাড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE