গত রবিবার অনেকের ঘরেই মুরগির মাংস ঢোকেনি। দোলের পর থেকেই বাজারে হঠাৎ মুরগির জোগানে টান পড়ায় কাটা মুরগির দাম বেশ চড়া। কেজি পিছু ১৬০-১৮০ থেকে এক লাফে দাম ২০০-২২০ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল। তার ফলে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত অনেক ঘরেই যেখানে সপ্তাহে দু’-এক দিন আলু দিয়ে এক কড়াই মুরগির পাতলা ঝোল মেনুতে থাকে, তা বাদ যাচ্ছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কলকাতার অধিকাংশ বাজারে ২০০ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতি সপ্তাহে দু’কোটি ২০ লক্ষ কেজির মতো মুরগি বিক্রির উপযুক্ত হিসেবে তৈরি হয়ে যায়। তার মধ্যে রাজ্যের মানুষের চাহিদা সপ্তাহে দু’কোটি কেজির কাছাকাছি। বিয়ের মরসুমে চাহিদা আরও কিছুটা বাড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশন মুরগির মাংসের ঘোষিত দর যাচ্ছে ১৭৫ টাকা কেজি। কিন্তু কলকাতার বাজারগুলিতে বাস্তবে তার থেকে অনেকটাই বেশি দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সাধারণত বাজারে কাটা মুরগি দু’ ভাবে বিক্রি হয়। মাংসের সঙ্গে মুরগির অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিনলে দাম কম হয়। শুধু মাংস কিনলে বেশি হয়। সাধারণ ভাবে গলা, মেটে নিয়ে কাটা মুরগির দাম কেজি প্রতি ১৪০-১৬০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সেগুলি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মাংসের (মুরগির বুক ও পা) দাম ১৭০-১৮০ টাকায় থাকে। গত কয়েক দিন দমদম, মানিকতলা, সল্টলেক, লেকমার্কেট, গড়িয়াহাট-সহ বড়-মাঝারি প্রতিটি বাজারেই কাটা মুরগির দাম চলছে ১৯০-২২০ টাকা কেজি। বিক্রেতাদের বক্তব্য, চাহিদা যা, তার থেকে জোগান কিছুটা কম। ফলে রেস্তোরাঁ-হোটেলে দিয়ে যা থাকছে, তা ক্রেতাদের কিছুটা বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
খাসির মাংস বহু দিন ধরেই বাঙালির সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে। বহু পরিবার আছে যেখানে মাসে এক দিন পাঁঠার মাংস খাওয়াটাও এখন পড়শিদের কাছে ঈর্ষার বিষয় হয়ে যায়। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, খাসির জোগানে কোনও ভাঁটা না পড়লেও প্রতি বছর কোনও না কোনও উৎসবের মরসুমে পাঁঠার মাংসের দাম কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা করে বেড়ে যায়। গত এক বছর খাসির মাংসের দাম কলকাতার বাজারগুলিতে ৪৬০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৫২০ টাকা কেজিতে গিয়ে ঠেকেছে। এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মাংস বিক্রেতারাই দাম নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। কেন দাম বাড়ল, তার কোনও সদুত্তরও কেউ দিতে পারে না। যার ফলে বহু দিন ধরেই রবিবারের বাজারে বাঙালির থলেতে ব্রয়লার মুরগিই রসনা তৃপ্তির একমাত্র উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেখানেও এখন চাহিদা আর ঘাটতির অভাবে রেস্ততে টান পড়তে শুরু করেছে।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি দাবি করেছেন, রাজ্যের চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত মুরগি এখন ফার্মগুলিতে রয়েছে। দোল ও হোলির সময়ে মুরগির বিপুল চাহিদা মিটিয়েও এখনও খুচরো বাজারে যা প্রয়োজন, তা প্রতিটি জেলা মিটিয়ে দিতে পারে। তিনি জানান, এক শ্রেণির খুচরো ব্যবসায়ী মুরগির দাম বেশি নিচ্ছেন, সে খবর তাঁরাও পেয়েছেন। তিনি ফেডারেশনের নির্ধারিত দামেই মাংস বিক্রি করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy