Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সৌজন্যে মৎস্যরানির আকাশভ্রমণ

শেষ শীতেও বাঙালির পাতে বর্মী-ইলিশ

তিনি অসময়ের অতিথি। যাঁর সৌজন্যে শীতশেষের মেছোবাজারে মিলতে পারে বর্ষার ভরা মরসুমের ছোঁয়াচ।খানিকটা তেমনই আশায় বুক বাঁধছেন রাজ্যের ইলিশ কারবারিরা। জলজ রুপোলি শস্যের আমদানিতে ঢাকা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর থেকেই এ পার বাংলার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল আর এক পড়শি দেশ মায়ানমার।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৫
Share: Save:

তিনি অসময়ের অতিথি। যাঁর সৌজন্যে শীতশেষের মেছোবাজারে মিলতে পারে বর্ষার ভরা মরসুমের ছোঁয়াচ।

খানিকটা তেমনই আশায় বুক বাঁধছেন রাজ্যের ইলিশ কারবারিরা। জলজ রুপোলি শস্যের আমদানিতে ঢাকা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর থেকেই এ পার বাংলার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল আর এক পড়শি দেশ মায়ানমার। কিন্তু জাহাজে বর্মা মুলুক থেকে কলকাতায় ঢুকতে তার ১৫-২০ দিন সময় লেগে যায়। দিন কয়েক হল, উড়ানে সে এ তল্লাটে ঢুকছে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়।

ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা হাওড়ার পাইকারি মাছবাজারের কারবারিদের সমিতি-কর্তা সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ আশাবাদী, বর্মী-ইলিশ নিয়মিত বিমানে আমদানি জারি রাখা গেলে ইলিশপ্রেমীর জন্য নতুন রাস্তা খুলে যাবে। এমনিতে বর্ষার ভরা মরসুমে স্থানীয় ইলিশ বাদ দিলে বাঙালির সান্ত্বনা পুরস্কার বলতে ‘বম্বের ইলিশ’ বলে পরিচিত আরবসাগর উপকূলের ইলিশ। এটুকু বাদ দিলে হিমঘরে রাখা শুকনো হিমায়িত ইলিশেই কার্যত জিভে চড়া পড়েছে বাঙালির। মায়ানমারের ইরাওয়াদি মোহনার ইলিশও এত দিন এ ভাবেই আসত কলকাতায়। এখন ছবিটা পাল্টাচ্ছে। সপ্তাহে তিন দিন এয়ার ইন্ডিয়া ও দু’দিন গোল্ডেন মায়ানমার এয়ারলাইন্সের উড়ান ইয়াঙ্গন থেকে কলকাতা পাড়ি দেয়। তাতেই আসছে মায়ানমারের তাজা বা ‘কাঁচা ইলিশ’।

প্রবীণ সমুদ্রবিজ্ঞানী তথা ইলিশ বিশারদ অমলেশ চৌধুরীর কথায়, ‘‘জল থেকে তোলার চার-পাঁচ দিনের মধ্যে পাতে আসা তাজা বা কাঁচা ইলিশই স্বাদে শ্রেষ্ঠ। বছরের এই সময়টা বড় সাইজের টাটকা ইলিশ সচরাচর বাঙালির কপালে জোটে না।’’ মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও বলছেন, ‘‘অসময়ে বাঙালি তাজা ইলিশ পেলে এ তো খুবই ভাল কথা!’’ রবিবার দমদম বাজারে গিয়ে দেখা গেল, আড়তদার-কাম-মাছ বিক্রেতা তপন দাস তাঁর গুদামে হিমায়িত বাসি ইলিশ বারই করছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘কাঁচা পেলে স্টোরের ইলিশ কে-ই বা কিনবে!’’ নয়া আমদানির কাঁচা ইলিশ কম-বেশি ১২০০ টাকা কেজিতে বিকোলেও কখনও কখনও আরও চড়া দাম উঠছে। বৌবাজারের গয়না কারবারি প্রশান্ত দত্ত যেমন এ দিন দেড় কেজির কাছাকাছি ওজনের জোড়া ইলিশ ১৮০০ টাকা কেজি দরে থলেয় ভরলেন।

শিয়ালদহের আড়তদার সঞ্জয় বেজ বা গড়িয়াহাট বাজারের ইলিশ বিক্রেতা ভূতনাথ ঘোড়ুই বলছিলেন, ‘‘সরস্বতী পুজোর পর থেকেই মায়ানমারের কাঁচা ইলিশ বাজারে ঢুকছে।’’ বছর চারেক আগেও এক বার আকাশপথে ইলিশ আমদানির চেষ্টা হয় কলকাতায়। কিন্তু বিমান মাশুলের চড়া দরে পিছিয়ে আসেন আমদানিকারীরা। হাওড়ার আনোয়ারের কথায়, ‘‘এখনও জাহাজের তুলনায় বিমানে ইলিশ আমদানির মাসুল অনেকটাই বেশি। তবু বাজারের যা চাহিদা, তাতে ইলিশের জন্য এই লগ্নি বৃথা যাবে না।’’

বাজারে এই বর্মী-ইলিশ অবশ্য ‘বাংলাদেশের ইলিশ’ বলেই বিকোচ্ছে। আমদানিকারীদের হিসেব, দু’-এক দিন অন্তর উড়ানে একসঙ্গে দু’-আড়াই টন করে কাঁচা ইলিশ শহরে ঢুকছে। মায়ানমারের নামী ইলিশ আমদানিকারী সংস্থার কর্ত্রী জুমা ভেঙ্কটেশ ইয়াঙ্গন থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমাদের ইলিশের সব থেকে বড় ক্রেতা কলকাতাই। মায়ানমারে আরও মাসখানেক যথেষ্ট ইলিশ মিলবে।’’ ইলিশ-কারবারিদের তাই কারও কারও আশা, বাংলাদেশে ইলিশের ভরা মরসুমে পদ্মার ইলিশও ইয়াঙ্গন থেকে এ বার বিমানে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুলে যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa fish Myanmar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE