Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছোট-মাঝারিতে ছেয়েছে বাজার, বড় ইলিশ দূরেই

পূবালি হাওয়া নেই। পশ্চিমী হাওয়ার টানে এ পার বাংলার ইলিশ অভিমুখ ঘুরিয়ে চলে গিয়েছে ও পার বাংলায়। তার জেরে ভাটা পড়েছে কলকাতায় ইলিশ সরবরাহে। বড় মাছ তো দূর অস্ত্, সরবরাহ কম মাঝারি মাপের ইলিশেরও। প্রথম বর্ষায় ইলিশের বাজারের দখল নিয়েছে ছোট মাছই।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

পূবালি হাওয়া নেই। পশ্চিমী হাওয়ার টানে এ পার বাংলার ইলিশ অভিমুখ ঘুরিয়ে চলে গিয়েছে ও পার বাংলায়। তার জেরে ভাটা পড়েছে কলকাতায় ইলিশ সরবরাহে। বড় মাছ তো দূর অস্ত্, সরবরাহ কম মাঝারি মাপের ইলিশেরও। প্রথম বর্ষায় ইলিশের বাজারের দখল নিয়েছে ছোট মাছই।

জামাইষষ্ঠীর আগে থেকেই ইলিশ মাছ বাজারে দেখা যাচ্ছিল। তবে সে সবই হিমঘরের। ফলে সেই সব মাছ আগুন দামেই বিক্রি হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন মাছ বাজারের খবর ছিল, বর্ষা নামলেই বাজারে নতুন মাছ ঢুকবে। একই সঙ্গে দামও কমবে রুপোলি শস্যের। কিন্তু সমুদ্রে পশ্চিমী বাতাস বইছে। জলের স্রোতও ইলিশ ধরার পক্ষে সহায়ক নয় বলেই জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশ আপাতত বাংলাদেশ আর মায়ানমারমুখী বলেই জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর সঙ্গে পূবালি বাতাস ইলিশ ধরার পক্ষে সহায়ক। কিন্তু হাওয়ার অভিমুখ বর্তমানে বাংলাদেশের দিকে। আর তার জেরেই বড় মাছ গভীর সমুদ্রের দিকে নেমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। ফলে অনেকেই সাগর থেকে ট্রলার নিয়ে ফিরে আসছেন বলে দিঘা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার কিংবা রায়দিঘির মতো জায়গার মৎস্যজীবীদের থেকে জানা গিয়েছে। দিঘার বীরু হুসুন বরাই বলেন, ‘‘পূবালি হাওয়া না আসা পর্যন্ত মাছ আর এ দিকে ঢুকবে না। সব মাছ নেমে গিয়েছে বাংলাদেশের দিকে। ফলে সরবরাহে ঘাটতি হবেই।’’ একই কথা জানিয়েছেন কাকদ্বীপের মৎস্য ব্যবসায়ী শ্যামল দাসও।

১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ১৬ জুন থেকে ফের সমুদ্রে জাল ফেলা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাজারে ঝকঝকে নতুন ইলিশ আসাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎই পশ্চিম বাতাসের টান বাড়ায় বড় মাছ সমুদ্রের গভীরে চলে গিয়েছে। মৎস্যজীবীরা জানান, স্রোতের কারণে এগনো যাচ্ছে না গভীর সমুদ্রের দিকে। স্বল্প পুঁজির মৎস্যজীবীরা অনেকে ফিরেও এসেছেন। ফলত আগামী কিছু দিন আবারও বাজারে ইলিশের জোগানে সমস্যা হবে বলে জানান পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী বিজয় সিংহ। তিনি জানান, প্রথম মরসুমে ছোট মাছই বেশি উঠেছে। তার পরে মাঝারি। এক কিলোগ্রাম ওজনের মাছের পরিমাণ সব চেয়ে কম।

তার জেরেই কলকাতার বিভিন্ন বাজারে অন্তত এক কেজি ওজনের মাছ প্রায় নেই বলেই জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। মানিকতলা, গড়িয়াহাট বাজারে চড়া দামে কিছু বড় মাছ এলেও পাতিপুকুর বাজারে তা-ও আসেনি। আটশো থেকে সাড়ে আটশো গ্রামের মাছও তেমন ভাবে আসেনি। অধিকাংশই ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ছোট মাছ।

গড়িয়াহাট বাজারের ব্যবসায়ী দিলীপ মণ্ডল জানান, এক কেজি ওজনের বড় ইলিশের দাম ৯০০-১০০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। মানিকতলার বাজারে হাতে গোনা এক কেজি ওজনের মাছের দাম এগারোশো ছুঁইছুঁই। পাঁচশো-সাতশো গ্রামের ইলিশের দাম অনেক বাজারেই ৬৫০-৮০০ টাকার মধ্যে।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু দিনেই ফের পূবালি হাওয়া বওয়া শুরু করবে। তাতেও যে বড় মাছ বঙ্গবাসীর পাতে সুলভ হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। অভিযোগ, রাজ্য সরকার জালের মুখ ৭০ মিলিমিটার নির্ধারণ করা সত্ত্বেও মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনেকে তার চেয়েও ছোট মুখের জাল নিয়ে সমুদ্রে যান। ফলে বড় মাছ না ঢুকলেও ছোট মাছ সেই জালে আটকাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরেই এই ধরনের নানা কারণে সমুদ্রে ইলিশ বড় হতে পারছে না। তাই ভাল ইলিশের টান পড়ছে।

যদিও মরসুমের শুরু বলেই এখন মাছ ব্যবসায়ীরা হতাশ হতে বারণ করছেন। ‘ফিশ ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ (হিলসা)-র সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক ঘটনার তো কোনও ব্যাখ্যা হয় না। তবে এ বার মাছ ভাল হবে বলে খবর রয়েছে। আসলে একটা ট্রলার টানা আট-দশ ধরে দিন সমুদ্রে থাকে। তার জন্য বিপুল খরচ হয়ে যায়। ফলে মৎস্যজীবীরা আর্থিক ক্ষতি থেকে রেহাই পেতে ছোট মাছ নিয়েই ফিরছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE